উচ্চ রক্তচাপ কেন হয়?

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে কম-বেশি অনেকেই জানেন। উচ্চ রক্তচাপ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করে। এ নিয়ে কথা বলেছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও কার্ডিওলজি বিভাগের পরামর্শক ডা. মো. ফারহাদ উদ্দিন। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন ২৩৩৯তম পর্বে অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয়।
প্রশ্ন : উচ্চ রক্তচাপ অত্যন্ত প্রচলিত একটি বিষয়। দর্শকরা সবাই হয়তো কম-বেশ এটি বুঝেন? এরপরও যদি আবার একটু বলেন উচ্চ রক্তচাপ মানে কী? একজন মানুষের রক্তচাপ কোন মাত্রার উপরে উঠলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলবেন?
উত্তর : রক্তচাপ বেড়ে যাওয়াকেই উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। একেবারে সাধারণ ভাষায় যদি আমরা বিষয়টির ব্যাখ্যা করি তাহলে এটাই বলতে হয়। রক্তচাপের স্বাভাবিক একটি মাত্রা রয়েছে। সিস্টোলিক বা উপরেরটাকে ১৪০ হলে স্বাভাবিক বলা হয়। এর উপর যদি উঠে যায়, একে বলা হয় উচ্চ রক্তচাপ বা সিস্টোলিক হাইপার টেনশন। তেমনিভাবে ডায়াস্টোলিক যদি নব্বইয়ের ওপর উঠে যায়, তাহলে একে বলা হয়, ডায়াস্টোলিক হাইপার টেনশন। একজন মানুষের দুটোই বেড়ে যেতে পারে। অথবা যেকোনো একটি বেড়ে যেতে পারে। যেকোনো ক্ষেত্রেই এটিকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলা হয়।
প্রশ্ন : অনেক সময় আবার দুটোর ব্যবধান অনেক হয়ে যায়। এটি কেন হয়? হলে কী সমস্যা হয়?
উত্তর : সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক উচ্চ রক্তচাপের মধ্যে ব্যবধান কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়ে যায়। এর জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রোগ থাকতে পারে। যেমন অ্যায়োটিক রিগারডিডিটেশন বলে এক ধরনের ভাল্ভের সমস্যা রয়েছে, এর কারণে বেড়ে যেতে পারে। বয়স্ক মানুষদের এমনিতেই সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক উচ্চ রক্তচাপের ব্যবধান হতে পারে।
প্রশ্ন : এটি কি খুব ক্ষতিকর?
উত্তর : খুব একটি ক্ষতিকর নয়। যদি বয়স্কদের বেলায় আমরা দেখি ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ খুব বেশি থাকে, সেটি খুব বেশি সমস্যার নয়। তবে যদি ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে পালসের চাপ বেড়ে যায়, তখন সেটা কখনো কখনো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
প্রশ্ন : এটি কাদের বেলায় বাড়ার ঝুঁকি বেশি ও কেন বাড়ে?
উত্তর : শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার বেলায় সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এমনিতেই বেড়ে যায়। এই দলকে বলা হয় এসেনশিয়াল হাইপার টেনশন বা প্রাইমারি হাইপার টেনশনের রোগী। আর পাঁচ ভাগ রোগীর বেলায় কিছু কিছু অসুখ খুঁজে পাওয়া যায়, যার কারণে উচ্চ রক্তচাপ তৈর হয়েছে। যেমন : কিডনির দুর্বলতা, কিডনির কোনো অসুখ।
হরমোনজনিত কোনো অসুখ যদি হয়, গর্ভাবস্থায় কারো কারো উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায়। কিছু কিছু ওষুধ রয়েছে যার কারণে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। কোয়ার্কটেশন অব অ্যায়োটা বলে হার্টের একটি রোগ রয়েছে, যার কারণে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
যে ৯৫ ভাগ রোগীর বেলায় হাইপার টেনশন হয়, সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে না পাওয়া গেলেও, তাদের বেলায় বেশ কিছু ঝুঁকির কারণ পাওয়া যায়। যেমন তাদের ওজন কিংবা তাদের খাদ্যাভ্যাসের জন্য যে অনিয়ম, অতিরিক্ত ধূমপান করা, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা এগুলো কারণে হতে পারে। বয়সের সাথে এটি অনেক সময় সম্পর্কযুক্ত- ইত্যাদি ঝুঁকির কারণ পাওয়া যায়। এগুলো উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার পেছনে সম্ভাব্য ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
প্রশ্ন : এই রক্তচাপ নিয়ে সারা পৃথিবীতে অনেক গবেষণা, দুশ্চিন্তা রয়েছে। অনেক মানুষ এতে আক্রান্ত। এর বাইরে একটু বলেন রক্তচাপ বেড়ে গেলে তাতে ঝুঁকি কী? কী কী সমস্যা হয়?
উত্তর : রক্তচাপ যদি বেড়ে যায়, অনিয়ন্ত্রিত থাকে, সেখান থেকে শরীরের মারাত্মক কিছু ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আমি শরীরের একবারে উপর থেকে, মস্তিষ্ক থেকে শুরু করি। যেকোনো মুহূর্তে মস্তিষ্কে হেমোরেজ হতে পারে। ব্রেন স্ট্রোক হতে পারে। ইসকেমিক হোক বা হেমোরেজিক হোক- হতে পারে। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ রক্তচাপের কারণে ডিমেনসিয়া, ভুলে যাওয়ার মতো একটি অসুখ- এটি হতে পারে।
চোখের দিকে যদি তাকাই, চোখে রেটিনোপ্যাথি হতে পারে। চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। হার্টে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন হতে পারে। কিংবা হার্ট ফেইলিউয়ের মতো জটিলতা হতে পারে।
আমরা যদি আরেকটু নিচের দিকে আসি, কিডনি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এই উচ্চ রক্তচাপের জন্য। অথবা আমাদের শরীরের যে রক্তনালিগুলো রয়েছে, যেগুলো আমাদের হাতে পায়ে যাচ্ছে, সেগুলোতে পেরিফেরাল আর্টারিয়াল রোগ বলে মারাত্মক জটিল অসুখ তৈরি হতে পারে, এই অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের জন্য।
প্রশ্ন : কী করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়?
উত্তর : উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনাকে প্রয়োজনে ওষুধ খেতে হবে। যদি চিকিৎসক মনে করেন আপনাকে ওষুধ খেতে হবে তাহলে খেতে হবে। পাশাপাশি জীবন যাত্রায় আপনাকে কিছু আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। যেমন : যদি অতিরিক্ত ওজন থাকে, ওজন কমিয়ে ফেলতে হবে। খাদ্যাভাসের মধ্যে শাক সবজি, ফল মূল বেশি পরিমাণে খাবেন। তেল, চর্বি ঘি মাখন এই জাতীয় খাবার কম খাবেন। আলাগা লবণ বা অতিরিক্ত লবণ খাবেন না। আরেকটি হলো নিয়মিত ব্যায়াম করবেন। সে ব্যায়ামের মধ্যে শারীরিক বিষয়টি যেমন থাকবে, পাশাপাশি মানসিক শিথিলিকরণ পদ্ধতি, মানসিক শান্তি আনার জন্য, দুশ্চিন্তাকে পরিহারের ব্যায়াম করতে হবে। ধ্যান করতে পারেন। নামাজ একটি বড় প্রার্থনা, নামাজের দোয়া একটি বড় ধ্যান। কিংবা আমরা যে অন্যান্য ধর্মে প্রার্থনা করছি সেটিও ধ্যান। তা ছাড়া তো বিভিন্ন ধরনের ধ্যান আছে এগুলো করা।
আর মাঝে মাঝে আপনি আপনার রক্তচাপকে মাপবেন। যাতে করে আপনি বুঝতে পারেন আপনার রক্তচাপের কী অবস্থা। যারা ধূমপান করছেন বা অন্য উপায়ে তামাক সেবন করছেন, তাদের অবশ্যই সেটা পরিহার করতে হবে। যারা মদ্যপান করে তাদের এর মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে, মদ্যপান পরিহার করতে হবে।