আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তির চিকিৎসা কীভাবে দেওয়া হয়
আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে চিকিৎসার আওতায় আনা জরুরি। সে জন্য সাইকিয়াট্রিস্ট বা সাইকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৬৯১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : আপনাদের কাছে নিয়ে গেলে আপনারা কী করেন?
উত্তর : আমরা রোগীর সঙ্গে খুব খোলামেলাভাবে কথা বলি। মেডিকেল ইতিহাস নিই। তার পরিবারের সঙ্গে বন্ধুবান্ধব কিংবা দরকার হলে শিক্ষক, তাদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ ইতিহাস নিই, তাকে বোঝার জন্য। যদি কোনো ধরনের মানসিক রোগ থাকে, তাহলে সেই রোগ অনুপাতে আমরা চিকিৎসা দিয়ে থাকি এবং যদি ওই সময় সে কোনো সমস্যায় জর্জরিত থাকে, তখন তাকে আমরা কথা বলার মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে থাকি। আমরা সাইকোথেরাপি, কাউন্সেলিং, ইন্টারপার্সোনাল সাইকোথেরাপি ইত্যাদি করে থাকি।
আর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে মতপার্থক্যের জন্য তার যদি এই বিষণ্ণতা হয় বা আত্মহত্যা করার প্রবণতাগুলো থাকে, আমরা পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলি। পরিবারের লোকেরই কিন্তু প্রধান দায়িত্ব। আমরা আসলে চিকিৎসা দিয়ে দেবো। এর পরে ঠিকঠাক রাখার দায়িত্ব আসলে পরিবারের লোকের। তার যে সমস্যাগুলো আছে, সেসব বিষয়ে তাকে সাপোর্ট করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমরা পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে থাকি। একে আমরা ফ্যামিলিথেরাপি বলি। আবার কারো সঙ্গে যদি তার কোনো ধরনের সমস্যা হয়, সেটা সমাধানের জন্য তার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য যে ধরনের সাইকোথেরাপি, সেটি দিয়ে থাকি। এটি হলো বৈজ্ঞানিক উপায়ে চিকিৎসা। এই যে আসলে বিষণ্ণতা বা আত্মহত্যার প্রবণতা, যে-ই ধরনের সমস্যাই থাকুক, আমাদের শরীরের ভেতর বায়োকেমিক্যাল পরিবর্তন হয়। এগুলো তো বৈজ্ঞানিক বিষয়। বৈজ্ঞানিকভাবে এর চিকিৎসা করলেই আসলে ফলপ্রসূ হয়।
প্রশ্ন : যে একবার আত্মহত্যার বিষয়ে অ্যাটেম্পট নিল, তবে বেঁচে গেল, তাদের বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : তখন তো আসলে সেই ব্যক্তির আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে না বেঁচে থাকার জন্য, সে কিন্তু তখন সাহায্যও চায় না। কারণ, তার বেঁচে থাকার ইচ্ছাটা মরে যায়। বেঁচে থাকার ইচ্ছা নেই বলে সে নিজের ক্ষতি করেছে। সুতরাং তার কিন্তু বাঁচার প্রতি কোনো আগ্রহ থাকে না। সে ক্ষেত্রে তার পরিবারের লোকজন অথবা শুভাকাঙ্ক্ষী তাকে বুঝিয়ে হোক, তাকে যেভাবেই হোক—চিকিৎসার মধ্যে নিয়ে যেতে হবে। তাকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিতে হবে। তাকে চিকিৎসার আওতায় যেভাবেই হোক, রাখতে হবে। সার্বক্ষণিক তাকে পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখতে হবে। যে ধরনের জিনিস দিয়ে আত্মহত্যা করতে পারে বা নিজের ক্ষতি করতে পারে, যেমন—ব্লেড, ছুরি, কাঁচি, দড়ি; এ ধরনের জিনিস থেকে তাকে দূরে রাখতে হবে। হাতের নাগালের ভেতর যেন না আসে এবং সারাক্ষণ ব্যক্তির সঙ্গে ছায়ার মতো একজনকে আসলে লেগেই থাকতে হবে, যাতে আবারও অ্যাটেম্পট নিতে না পারে। আর চিকিৎসা সঠিকভাবে করলে, তার এই যে বারবার নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা, সেটা আসলে কমে আসে। আত্মহত্যা প্রতিহত করা সম্ভব। আসলে জীবনটা অনেক সুন্দর। সেই জিনিসটিই তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে।