ল্যাপারোস্কপি সার্জারির সুবিধা কী

ল্যাপারোস্কপি সার্জারি এখন বেশ প্রচলিত। গাইনোকলজির বিভিন্ন সমস্যায় এ সার্জারি করা হয়। ছোট ছিদ্র করে ক্যামেরার সাহায্যে আক্রান্ত অঙ্গ দেখে এই সার্জারি করা হয়।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৫১২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. ফারজানা রহমান ডালিয়া। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি ও অবস বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : সাধারণ সার্জারি থেকে ল্যাপারোস্কপি সার্জারির সুবিধা কী?
উত্তর : খুবই সুবিধা। আগে এগুলো করতে গেলে যেমন হাসপাতালে তিন থেকে চারদিন বা পাঁচদিনও থাকতে হতো বা এখনো থাকতে হয়, সেই ক্ষেত্রে দেখা যায় যে আমি যদি ল্যাপারোস্কপি সার্জারি করি তখন একদিন হাসপাতালে থেকে পরের দিনই সে স্বাভাবিক কাজে যোগ দিতে পারছে। পোস্ট অপারেটিভ জটিলতা কম। পোস্ট অপারেটিভ ব্যথাও খুব কম। সুন্দর থাকছে, কোনো দাগ নেই, তিনটি ফুটো থাকছে শুধু। রোগী খুব দ্রুত বাসায় চলে যেতে পারছে। তার অতটা কষ্ট হচ্ছে না। সে খুব স্বাভাবিক কাজ করতে পারছে।
প্রশ্ন : কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে আপনারা শেষ পর্যায়ে এসে ওপেন সার্জারি করেন?
উত্তর : কিছু কিছু ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কপিতে বলা হয়ে থাকে, জটিলতা হয়, যদি দেখা যায় কোনোভাবে কোনো একটি নালি ক্ষতিগ্রস্ত হলো, সব কিছুতে আসলে জটিলতা রয়েছে। ল্যাপারোস্কপি করতে গেলে দেখা যায় যেকোনো নালি আহ্ত হলো, কোনোভাবে আমরা রক্তপাতকে বন্ধ করি, সে ক্ষেত্রে আমরা ওপেন করতে পারি।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে বড় কোনো টিউমার হয়েছে। একে সম্ভব নয় এত ছোট ছিদ্র দিয়ে বের করা। সেই ক্ষেত্রে দেখা যায় আমাদের খুলতে হবে।
আবার অনেক সময় অ্যানেসথেটিক যদি জটিলতা শুরু হয়ে যায়, সেই ক্ষেত্রে ওপেন করতে হতে পারে।
প্রশ্ন : এই জাতীয় ল্যাপারোস্কপি বা অ্যান্ডোস্কোপিক সার্জারিতে রোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় মাথায় রাখবেন?
উত্তর : আগে বলা হতো যত বেশি স্থূল হচ্ছে, তত করা যাবে না। এখন আবার বলা হয় যে স্থূল রোগীর জন্য ল্যাপারোস্কপি দরকার। কারণ কাটাছেঁড়া করলে সেই জায়গাটা শুকোতে সময় লাগে। তার চেয়ে বরং যদি আমরা ইনশিসেশনের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করি, সে ক্ষেত্রে তার জন্য খুব ভালো। তারপরও একটি সীমাবদ্ধতা আছে। যদি বেশি ওজন বেড়ে যায়, সেই ক্ষেত্রে দেখা যায় যে আমাদের ল্যাপারটোমি করার প্রয়োজন হয়। তারপর অনেক সময় হৃদরোগ যদি থাকে, সে ক্ষেত্রে অ্যানেসথেটিক একটি সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বেশি অস্ত্রোপচার থাকে, অনেক সময় চারটা হয়েছে, এই ধরনের যদি হয়ে থাকে সেই ক্ষেত্রে আমরা পরামর্শ দেই না। কারণ ভেতরে অনেক লাগানো থাকে যে ল্যাপারোস্কপি করার জন্য।
প্রশ্ন : অনেকেই এখন ল্যাপারোস্কপির বিষয়টি জানে। চিকিৎসকের কাছে এসে করতে চায়। যদি না করা হয়, সেই ক্ষেত্রে আপনারা কীভাবে পরামর্শ দেন?
উত্তর : তখন আমরা বলি যে আপনার আসলে এটা করা যাচ্ছে না। ওজনটা অতিরিক্ত মাত্রায় বেশি। সেই ক্ষেত্রে করলে আপনার জন্য কোনো সমস্যা হতে পারে। যদি হার্টের সমস্যা থাকে বলে দিই। যেহেতু জেনারেল অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়। ওপেন সার্জারি যদি করতে যাই পিঠে মেরুদণ্ডে অবশ করি। কিন্তু আপনার হৃদরোগ আছে, জেনারেল অ্যানেসথেসিয়া হলে সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্ন : ল্যাপারেস্কপির সুবিধা কি সব গাইনি চিকিৎসকের কাছে পাবে?
উত্তর : আসলে ল্যাপারোস্কপি আমাদের দেশে শুরু হয়েছিল অনেক আগে থেকে। তবে চর্চাটা অতটা ছিল না। এখন কিন্তু অনেকে বিপুল উদ্যমে এই ল্যাপারোস্কপি করছে।
আসলে ল্যাপারোস্কপি করতে গেলে একটি দলের প্রয়োজন হয়। এটা অবশ্য ল্যাপারোস্কপির একটি অসুবিধা। সম্পূর্ণ দলকে দক্ষ হতে হয়। তবে এখন অনেকে করছে। আশা করছি অদূর ভবিষ্যতে এটা সবাই করতে পারবে।