যেসব কারণে জ্বর হয়

বিভিন্ন কারণে জ্বর হতে পারে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৭০তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মহিউদ্দিন আহম্মেদ। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের মেডিসিন ও আইসিইউ বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : জ্বরের বিভিন্ন কারণ ও ধরন থাকতে পারে। সামগ্রিকভাবে এই জ্বরের বিষয়ে যদি একটু বলেন যে জ্বরের কী কী ধরন বা কারণ আছে?
উত্তর : শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা যদি বেড়ে যায় একে আমরা জ্বর বলে থাকি। জ্বর বললেই যেই বিষয়টি চলে আসে শরীরে কোনো ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ থেকে জ্বর হয়। তবে সংক্রমণ ছাড়াও অনেক কারণে জ্বর হতে পারে। সাধারণত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা সংক্রমণের কারণে জ্বর পেয়ে থাকি। সেই ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ, ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা অন্য ইনফেকশন হতে পারে। তবে সচরাচর আমরা ভাইরাসজনিত জ্বর বেশি পেয়ে থাকি। যেটা অনেক ক্ষেত্রেই নিজে নিজে ভালো হয়ে যায়। এর জন্য আসলে খুব একটা বেশি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার হয় না। সে ক্ষেত্রে তিন থেকে চারদিনের মধ্যে জ্বরটা ভালো হয়ে যায়।
স্বাভাবিক কিছু পরামর্শ আমরা দিয়ে থাকি। যেমন : প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। অনেক ক্ষেত্রে জ্বর উপশমের জন্য প্যারাসিটামল কিংবা আইব্রোপ্রোফেন খাওয়া- সেটাই যথেষ্ট। বিশ্রামে থাকা, হালকা কাপড় চোপর পরে থাকা, এটা করতে হবে।
প্রশ্ন : টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু বিভিন্ন ধরনের জ্বর রয়েছে। জ্বর হলে আমরা একটু আতঙ্কগ্রস্ত হই। আমার হি ডেঙ্গু হলো, কিংবা আমার কি টাইফয়েড হলো বা ম্যালেরিয়া হলো। সাধারণভাবে এটা বোঝার উপায় কী?
উত্তর : সাধারণত আমরা জ্বরের ক্ষেত্রে যখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কিছু কিছু সময় বলে থাকি, কিছু জটিল অবস্থা তৈরি হতে পারে, খিঁচুনি হওয়া, অজ্ঞানের মতো হয়ে যাওয়া, কিংবা বমি হতে থাকা, কিংবা তীব্র মাথাব্যথা। এর বাইরেও অনেক সময় দেখা যায় জ্বরের সাথে যদি কাশি হয়, বুকে ব্যথা হয়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, অনেক সময় যেটাকে আমরা নিউমোনিয়া বলে চিন্তা করি, কিংবা অনেক ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সংক্রমণের ক্ষেত্রে জ্বর হয়ে থাকে, ঠিক সেই রকম বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সংক্রমণের জন্য জ্বর হয়ে থাকে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে উপসর্গ দিয়ে বোঝা যায়।
তবে ডেঙ্গু জ্বর, ম্যালেরিয়া কিংবা টাইফয়েডের ক্ষেত্রে অনেকাংশে প্রথম দিকে জ্বরের উপসর্গগুলো একই রকম থাকে। ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে আমরা অতিরিক্ত যে জিনিসটি পেতে পারি, সেটা হলো আমাদের দেশে কিছু জায়গায় ম্যালেরিয়া বেশি হয়, যেমন পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট এই জায়গাগুলোতে ম্যালেরিয়া হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
আরেকটি বিষয় অনেক সময় দেখা যায় এর বাইরেও আমরা অনেক সময় পেয়ে থাকি, সে ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়ার বিভিন্ন ধরন আছে। একে আমরা বলি জটিল ম্যালেরিয়া। অনেক সময় সেই ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক রোগী জ্বর ও অজ্ঞান হয়ে আসে। অথবা জ্বরের সাথে খিঁচুনিও নিয়ে আসতে পারে। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে অনেক রোগী যেমন জ্বর নিয়ে আসে। আবার আবহাওয়াটা একটি বড় কারণ। বর্ষাকাল, বিশেষ করে মে থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত এই সময়টিকে ডেঙ্গুর জন্য একটি ঋতু বলে থাকি। এর সাথে যদি জ্বর হয়, শরীর ব্যথা হয়, তীব্র মাথা ব্যথা হয়, অনেক সময় চোখের পিছনেও ব্যথা হয়। অনেকের হাঁড়েও ব্যথা হতে পারে। হাড়ের ব্যথা, ব্রেক বোন ডিজিজ বলা হয়ে থাকে।
টাইফয়েডের ক্ষেত্রে প্রথম দিকে অনেক সময় জ্বরটা নির্দিষ্ট করা কঠিন হয়ে পড়ে। রোগীরা অনেক সময় জ্বর ভেবে সাধারণত প্যারাসিটামল খেতে থাকে। অনেক সময় জ্বর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আবার এটি যে সবসময়ই থাকে তাই নয়।
অনেক সময় জ্বর ও শরীর ব্যথা নিয়ে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে সময় যাওয়ার সাথে সাথে কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন পেটে ব্যথা, পায়খানার সমস্যা হওয়া, পাতলা পায়খানা কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য। প্রথম তিন চারদিনের মধ্যে এই উপসর্গগুলো নাও থাকতে পারে। সেই ক্ষেত্রে অনেক সময় আমাদের কিছু রক্ত পরীক্ষার সহায়তা নিতে হয়।