মেরুদণ্ডের ব্যথার কারণ কী
মেরুদণ্ডর ব্যথা খুব প্রচলিত একটি ব্যথা। বিভিন্ন কারণে এই ব্যথা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪২৬ তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. জোনাইদ শফিক। বর্তমানে তিনি জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন: মেরুদণ্ডের ব্যথায় অনেক মানুষ ভুগে থাকেন? মেরুদণ্ডের ব্যথার প্রধান কারণগুলো কী?
উত্তর: আসলে পৃথিবীতে ব্যথাটা একটা উপস্থাপন। একটা রোগের উপস্থাপন। ব্যথা হয়নি এমন লোককে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সবচেয়ে প্রচলিত ব্যথা হলো মাথাব্যথা। দ্বিতীয় প্রচলিত ব্যথা হলো মেরুদণ্ডের ব্যথা। এর মধ্যে কোমর ব্যথাও প্রচলিত।
বলা হয়, অফিসে যে মানুষ যেতে পারে না, এর মধ্যে অন্যতম কারণ সর্দি, জ্বর, কাশি। এর পর হলো মেরদণ্ডের ব্যথার কারণ। মেরুদণ্ডের ৮০ ভাগ কারণ হলো মেকানিক্যাল। আমাদের মেরুদণ্ডটা বাঁকা থাকা উচিত। এটি যখন সোজা হয়ে যায় ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে ব্যথা হবে। এটি হঠাৎ করে হতে পারে। আবার দীর্ঘমেয়াদীও হতে পারে। এছাড়া দ্বিতীয় অন্যতম কারণ হলো হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়া। খুব খারাপ অবস্থা হলে হাড় ঝুড়ঝুড়া হয়ে যেতে পারে। যাকে অস্টিওপরোসিস আমরা বলি। এই দুটো হলো মূল কারণ। আর অন্যান্য ছোটখাটো কারণ হলো হাড়ের টিবি, হাড়ের ক্যানসার। হাড়ের আবার বাত হতে পারে। আমাদের যেকোনো কোমরের হাড়ে একটি শক্ত হাড় আছে। একটি নরম হাড় আছে, আরেকটি গাঁট আছে, একে ফ্যাসেট বলি। এই গাঁটে বাত হতে পারে। এই কারণেও মেরুদণ্ডের ব্যথা হতে পারে। তবে অন্যতম হলো মেকানিক্যাল কারণ।
প্রশ্ন: ম্যাকানিক্যাল কারণগুলো কী?
উত্তর: হয়তো আপনি বসে আছেন, পিঠের মাংস হঠাৎ মচকে হাড়কে সোজা করে দিল। আবার হয়তো কোনো ভারী জিনিস তুলতে গেলেন বা কোনো ফার্নিচার সরালেন, আপনি এতে অভ্যস্ত নন, হঠাৎ করে মাংসটা চাপ খেয়ে যেতে পারে। ডিস্কে সমস্যার কারণে হতে পারে। আবার অনেক সময় দেখবেন টয়লেটে মুখ ধুতে গেছেন, হঠাৎ দেখবেন হাড় আটকে গেছে। অথবা বিছানায় শোয়ার সময় দুটো বালিশ ব্যবহার করেছেন যেটা উচিত নয়। এই বালিশ ব্যবহারের সময় বেকায়দা অবস্থায় চলে গেছেন, ওখানে ঘাড়ের মাংস মচকে যেতে পারে অথবা হাড় ঢুকে যেতে পারো।
প্রশ্ন: অনেক সময় এরকম হয় যে দীর্ঘ সময় একই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। সোফার ওপর হেলান দিয়ে শুয়ে থাকি। ওখান থেকে ওঠার পর দেখি আমার কোমর ব্যথা হচ্ছে বা মেরুদণ্ডে ব্যথা হচ্ছে, তখন কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তর: আপনি অঙ্গবিন্যাস যদি ঠিক না রাখতে পারেন, অঙ্গ বিন্যাসগুলো আমরা যদি ঠিক না করি সাধারণত সমস্যা হবে না। কিন্তু কখনো কখনো সমস্যা হয়ে যেতে পারে। যদি মাঝখানের নরম হাড় যদি ঢুকে যায় ওখানে কিন্তু ব্যথা হয়ে যেতে পারে। তখন ব্যথা শুধু কোমরে থাকবে না। পায়ের দিকেও চলে আসবে। পা শিরশির করবে, ঝিনঝিন করবে। অনেক সময় পুরো পা অবশও হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আমাদের যেকোনো কাজ করতে গেলে অঙ্গবিন্যাস মেনে চলে করতে হবে। বালতি তোলা, টিভি দেখা, কম্পিউটারে কাজ করা –এসব সময় যদি আমরা ঠিকমতো না করতে পারি তাহলে সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্ন: ব্যথা হওয়ার পর কোনোটা খুব তীব্র ব্যথা হয় হঠাৎ করে, আবার কিছু ব্যথা দীর্ঘমেয়াদী হয়। এর মধ্যে কোন ব্যথাগুলো দীর্ঘমেয়াদী হয়ে যেতে পারে? সেক্ষেত্রে করণীয় কী?
উত্তর: সাধারণত ব্যথার চিকিৎসা হলো ব্যথার ওষুধ খাবেন, একটু বিশ্রাম নেবেন দুই তিন দিন চলে যাবে। কিন্তু ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে এগুলো রয়ে যায়। ডিস্কটা ঢুকে যেতে পারে। হাড় নড়ে যেতে পারে। অথবা মাংস স্পাজম হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে আপনাকে ওষুধ ও একটু ফিজিওথেরাপি নিতে হবে। হঠাৎ ব্যথার ক্ষেত্রে দেখা যায় যে নরম হাড় রয়েছে, সেটা অনেকটা ভেতরে ঢুকে যায়। নরম হাড়টা রগে ঢুকে যায়। তখন রগ ফুলে যাবে। এই ফোলা কমার জন্য আমরা অ্যান্টি ইনফ্লামেটোরি ওষুধ দিই। ফোলা কমিয়ে ব্যথা কমাবে। ৮০/ ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে কমে যায়। ১০ ভাগ ক্ষেত্রে কমাতে পারে না। তখন আমরা ইন্টারভেনশন ব্যবস্থাপনা করি।
প্রশ্ন: সেখানে কী করেন?
উত্তর: সেখানে আমরা ডিস্কের মধ্যে গিয়ে ওষুধ দিয়ে আসি। কারণ এটিতো ফুলে গেছে। ফোলাটা যতক্ষণ পর্যন্ত না ঠিক হবে, তার ব্যথাও যাবে না, রেডিয়েশনও যাবে না। কিছু কিছু রোগী এসে বলে ‘স্যার আমার পা কেটে দেন। আর পারছি না। রগে টান পড়ে গেছে’। এটা শিরশির ঝিরঝির করতে পারে। অথবা প্যারালাইসিসও করে ফেলতে পারে। আমরা অস্ত্রোপচার করে ডিস্কের মধ্যে ওষুধ দিয়ে আসি। এই ওষুধটি অ্যান্টি ইনফ্লামেটোরির কাজ করে। যেহেতু সরাসরি ওষুধ সেখানে যাচ্ছে, তাই ডিস্ককে চুপসিয়ে দেয়। চুপসিয়ে দিলে ব্যথামুক্ত হয়ে গেল। সেই ক্ষেত্রে আপনাকে সাত দিন, ১০ দিন বিছানায় থাকতে হবে না, বিশ্রাম নিতে হবে না। এক দুই দিনের মধ্যে আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন, আপনি স্বাভাবিক জীবনে চলে যাবেন। মূল বিষয়টি হলো এখানে ঠিক করার পর জীবন যাপনের পরিবর্তন, অঙ্গ বিন্যাস ঠিক করতে হবে। জীবন যাপন, খাদ্যাভাস সব জিনিস মেনে চলতে হবে। সবকিছু যদি মেনে না চলে তাহলে যে ডিস্কটা দুর্বল হয়ে গেছে, সেটা আবার ঢুকতে পারে। আবার একটি অনিয়ম করলেন, কুঁজো হয়ে কোনো কিছু তুলতে গেলেন, বিশেষ করে এয়ারপোর্টে কিছু কুঁজো হয়ে তুলতে গেলাম, বালতি তুলতে গেলাম। চুলার থেকে পানি ফুটাতে গেছে, ১০ কেজি ওজনের পানি নামাতে গেল এই ক্ষেত্রে আবার ঘটনাগুলো এক রকম হবে। তখন আবার হতে পারে।