গর্ভাবস্থায় পায়ু পথের সমস্যা ও করণীয়

গর্ভাবস্থায় অনেকেরই পায়ু পথে সমস্যা হয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে বিষয়টি মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। আজ ২ সেপ্টেম্বর ২১৩৯ তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের কোলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. এস এম এ এরফান।
প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় একজন নারীর অনেক ধরনের সমস্যাই হয়। সে ক্ষেত্রে পায়ুপথে কী কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : আসলে আমরা যদি অবস্থানটা খেয়াল করি, জরায়ুর ভেতর স্বাভাবিকভাবে যে বাচ্চাটা তার আসে সে পাশের যে অঙ্গগুলো আছে সেগুলোর ওপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি করছে। তার মধ্যে আমাদের কোলোন, রেকটাম, পায়ুপথের অংশগুলো আছে। এর সাথে আছে হরমোনাল বিষয়। এ দুটো বিষয় মিলে সাধারণত পায়ু পথের সমস্যাগুলো তৈরি হয়। এরমধ্যে এক নম্বর হচ্ছে, কোষ্ঠকাঠিন্য। কারণ বিভিন্ন ইসট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরনের প্রভাবে কোলোনের মোটিলিটি কমে যায়। আর এর ওপর যখন সরাসরি ফ্লাস ট্রাইমিস্টারে চাপ দেয়, রেক্টামের ওপর, স্বাভাবিকভাবে সেখানে একটা ফাংশনাল অবসট্রাকশনের মতো তৈরি হয়। যার ফলে তার কোষ্ঠকাঠিন্য নিশ্চিতভাবে বেড়ে যায়। এটা হচ্ছে সবচেয়ে প্রচলিত। সবার মধ্যেই এটা কমবেশি দেখা যায়। দুই নম্বর হচ্ছে, ওইটা ওখানকার ভেনাস প্লেকসাসগুলোর উপরে চাপ দেয়, চাপ দেওয়ার ফলে সেখানে পাইলস হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। এবং এর একটা আলাদা নাম রয়েছে প্রেগনেন্সি পাইলস। আর যাদের আগে থেকে পাইলস আছে তাদের সেই প্রকোপ গর্ভাবস্থায় বেড়ে যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কারণে তার মলত্যাগ করতে যে সমস্যা হয়। সেই সমস্যার কারণে এনাল ফিসার হতে পারে। কারণ কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে যেই ঘর্ষণ বা চাপ হয় সে জন্য জায়গাটা কেটে গিয়ে এনাল ফিসার হতে পারে। তারপর চাপ দিয়ে তাকে মলত্যাগ করতে হয়। এই চাপের কারণে রেক্টাল প্রোলাপসও এই সময়ে হতে পারে। এগুলোই সাধারণত প্রচলিত সমস্যা যেগুলো গর্ভাবস্থায় হয়ে থাকে।
প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় পাইলস হলে কী করণীয়?
উত্তর : গর্ভাবস্থায় প্রথম পরামর্শ হবে তার (বাউয়েল হেবিট) অন্ত্রের অভ্যাস যেন স্বাভাবিক রাখে। তার স্বাভাবিকভাবেই প্রবণতা হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া। এই কোষ্ঠকাঠিন্য না হওয়ার জন্য খাবার দাবার ওষুধ দিয়ে অন্ত্রকে স্বাভাবিক রাখতে হবে। তাহলে সেখানে চাপটা কম পড়বে। পাইলস হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও কমে যাবে।
এখন যদি পাইলস হয়ে যায় কারো সে ক্ষেত্রে কী করণীয়? গর্ভধারণ করেছে এমন একজন মহিলার নিজের প্রয়োজনের জন্য শিশুর প্রয়োজন মেটাতে হয়। যদি তার রক্ত ঝড়ে সেখান থেকে তবে শরীরের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। তবে তখন উনি অবশ্যই একজন কোলোরেক্টাল সার্জনের কাছে যাবেন। হলে যদি কোনো ওষুধপত্রের মাধ্যমে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে নিয়ন্ত্রণ করবেন। এসব পাইলসের একটা সুবিধা হলো অনেকগুলো গর্ভাবস্থায় চলে যায়। যেহেতু তখন জরায়ুর চাপটা আর থাকে না, তাই কমে যায়। তখন যদি খুব বেশি রক্তপাত হয়, ওষুধপত্রের মাধ্যমে ভালো না হয়, সবচেয়ে ভালো হলো অস্ত্রোপচার করে নেওয়া। আর এখন অস্ত্রোপচারগুলো অত্যন্ত নিরাপদ। কারণ রক্তপাত অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একজন মায়ের জন্য। আর যাদের আগে থেকে পাইলস রয়েছে সে ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হবে গর্ভধারণের আগে এর চিকিৎসা করিয়ে নেওয়া। অস্ত্রোপচার বা অন্য চিকিৎসা যেটাই হোক করিয়ে নিলে সে নিরাপদ থাকবে এবং জটিলতা থেকে মুক্ত থাকবে।
আর যদি ওষুধ খেয়ে ভালো থাকে তাহলে পরবর্তীকালে দেখতে হবে কোনো অস্ত্রোপচারে না গিয়ে নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায় কি না।
প্রশ্ন : সেটি কতদিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে হবে?
উত্তর : তিন মাস পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। যদি ভালো হয়ে যায় তাহলে আর কোনো সার্জিক্যাল চিকিৎসার প্রয়োজন হবে না। আর যদি না হয় তবে সার্জারির মাধ্যমেই এর চিকিৎসা করাতে হবে।
প্রশ্ন : বলছিলেন গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য অনেক বেড়ে যায়। সেটি যাতে না বাড়ে সেজন্য কী কী ধরনের খাবার একজন গর্ভবতী মাকে খেতে হবে?
উত্তর : কোষ্ঠকাঠিন্য হয় খাদ্যতালিকায় আঁশ জাতীয় খাবার না থাকলে। এই ধরনের খাবার না খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি অন্যতম কারণ। আর শরীরবৃত্তীয় বিষয়গুলোতো আছেই। এগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তবে যেটা আমার কারণে হচ্ছে সেটা হলো খাবার। তাই আঁশ জাতীয় খাবার খেতে হবে। ওষুধ খেতে হবে যাতে পায়খানা নরম হয়। এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে গর্ভধারণের সময় সব ধরনের ওষুধ তোমার জন্য প্রযোজ্য নয়। যে ওষুধগুলো শরীরে শোষণ হবে না, শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশকে বিঘ্নিত করবে না শুধু সেই জিনিসগুলোই তার জন্য প্রযোজ্য। এ ক্ষেত্রে নিরাপদ ওষুধ হলো মিল্কোম্যাগনেশিয়া। এই ধরনের ওষুধগুলো নিরাপদ। এগুলোর তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। সেটি আসলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া ঠিক হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গর্ভাবস্থায় কোনো ওষুধ খাওয়া কোনোভাবেই ঠিক নয়। এ সময় পানি বেশি খেতে হবে।
প্রশ্ন : গর্ভধারণের সময় পাইলসের যদি চিকিৎসা করা না হয় তবে কী ধরনের জটিলতা হতে পারে?
উত্তর : এ ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ রক্তক্ষরণ হতে পারে। এখানে থ্রোম্বোসিস, গ্যাঙরিন হতে পারে। রক্তক্ষরণ হলে সেটা মা এবং শিশু উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। এতে রক্তশূন্য হয়ে এনিমিক হয়ে যাবে। একিউট ব্লাডলস ( স্বল্প সময়ের রক্তক্ষরণ) অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এনিমিয়ার বাইরেও রক্তে সঞ্চালনের সমস্যা হবে। শিশু কম রক্ত পাবে। কম অক্সিজেন পাবে।
আর যদি ইনফেকশন বা গ্যাঙ্গরিন হয় তবে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে। মা এবং শিশুর জন্য সেটা ঝুঁকিপূর্ণ। সময়ে আগে প্রসব, মিসক্যারেজ এগুলো হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে।