লিভারের রোগীদের খাদ্যতালিকায় কী থাকা উচিত

লিভার মানবদেহের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি। দেহ প্রক্রিয়ায় যতগুলো কাজ হয়, তার সবগুলোর সঙ্গে লিভার জড়িত। তাই সুস্থ থাকার জন্য লিভারের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। লিভারকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে ভালো পুষ্টি। লিভারের কোনো রোগ বা সমস্যা থাকলে সঠিক খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি।
লিভারের বিভিন্ন ধরনের রোগের মধ্যে হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস, ফ্যাটি লিভার ডিজিজ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। লিভারের রোগগুলোর মধ্যে যেসব কারণগুলোকে দায়ী করা হয়, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, দেরি করে ঘুমাতে যাওয়া, ঘুম থেকে দেরিতে ওঠা, সকালবেলা প্রস্রাব না করা, সকালের নাশতা না করা, অতিরিক্ত ভাজাপোড়া চর্বি-জাতীয় খাবার গ্রহণ, অ্যালকোহল জাতীয় খাবার গ্রহণ ইত্যাদি।
তাই খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের বিশেষভাবে খাবার নির্বাচন করতে হবে, যাতে এমন কোনো খাবার আমরা নির্বাচন না করি, যেটি লিভারের ওপর চাপ ফেলে। তাই খাদ্য নির্বাচনের সময় সহজপাচ্য অর্থাৎ সহজে খাবার হজম হবে এমন খাবার আমাদের নির্বাচন করা উচিত। এর মধ্যে সবজির ক্ষেত্রে যেমন আমরা পেঁপে, লাউ ধরনের খাবার নির্বাচন করতে পারি।
অনেকেরই ধারণা, লিভারের রোগের ক্ষেত্রে প্রোটিন রেসট্রিকশনের প্রয়োজন। কিন্তু সব ক্ষেত্রে এ ধারণাটি ঠিক নয়। প্রোটিন দেহের গঠন, ক্ষয়পূরণ এবং বৃদ্ধি সাধন করে। কিন্তু লিভারের রোগে লিভার তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এতে লিভারে বর্জ্য পদার্থ তৈরি হয়। এটি মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে এবং এতে হেপাটিক এনসাফেলোপ্যাথি দেখা দেয়।
লিভারকে ভালো রাখার জন্য কিছু নিয়ম আমাদের মেনে চলা উচিত। যেমন দৈনন্দিন খাদ্যচাহিদার ৬০ থেকে ৭০ ভাগ আমরা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার থেকে নিতে পারি। এর মধ্যে হোল গ্রেইন জাতীয় খাবার, যেমন ভাত, পাস্তা ইত্যাদি নিতে পারি। ২০ থেকে ৩০ ভাগ আমরা প্রোটিন-জাতীয় খাবার থেকে নিতে পারি। এর মধ্যে সবজির প্রোটিন, প্রাণিজ লিন প্রোটিন হতে পারে। ১০ থেকে ২০ ভাগ ফ্যাট জাতীয় খাবার, যেমন পলি আনস্যাচুরেটেট ফ্যাট হিসেবে আমরা বাদাম, মাছের তেল ইত্যাদি নিতে পারি। সারা দিন আট থেকে ১২ গ্লাস পানি আমাদের পান করা উচিত। তা ছাড়া সারা দিনের খাবারে সোডিয়ামের চাহিদা কখনো এক থেকে ১ দশমিক ৫ গ্রামের বেশি হবে না।
ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট আমাদের নেওয়া উচিত। এই সময় অনেক ক্ষেত্রে নার্ভাস সিস্টেমে অসুবিধা দেখা দেয়। তা ছাড়া লো ব্লাড কাউন্ট হতে পারে। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার হিসেবে আমরা আমলকী নিতে পারি। কারণ, এই ভিটামিন সি আমাদের সবজির আয়রন শোষণে সাহায্য করে।
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার খেতে হবে। অ্যালকোহল জাতীয় খাবার অবশ্যই এড়িয়ে যেতে হবে। চা, কফি সারা দিনে কখনো দুবারের বেশি খাওয়া যাবে না। এ ছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ আয়রন, ভিটামিন বি৩ গ্রহণ করা যাবে না। তাই আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় এমন খাবার রাখতে হবে যেগুলো লিভারের ওপর অতিরিক্ত চাপ না ফেলে। সঠিক খাদ্য নির্বাচনের মাধ্যমে উচিত লিভার সুস্থ রাখা।
লেখক : পুষ্টিবিদ, স্কয়ার হসপিটাল
অনুলিখন : শাশ্বতী মাথিন