চোখের বিভিন্ন সমস্যায় করণীয়

চোখে আমাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৬০তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছ্নে ডা. শারফুদ্দিন আহম্মেদ।
বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ব বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য এবং কমিউনিটি ও অপথালমোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : সাধারণত চোখে কী কী ধরনের রোগ হয়ে থাকে?
উত্তর : চোখে আসলে অনেক রোগ হয়। জন্মগত, জন্মের পরে, ঋতুগত কারণে, বয়সজনিত, বিভিন্ন সিস্টেমিক রোগনির্ভর অনেক রোগ হয়।
সাধারণত আমরা বাংলাদেশের মানুষ যে রোগটিকে বেশি দেখতে পাই, নিজের হয়, অন্যের দেখতে পাই, সেটি হলো কনজাংটিভাইটিস। এটাই চোখ ওঠা। কখনো এটা হয় ব্যাকটেরিয়াল। কখনো ভাইরাল, কখনো ফাঙ্গাল- এ রকম। কর্নিয়াল আলসার। সঙ্গে কনজাংটিভাইটিসও থাকতে পারে। আবার অস্ত্রোপচারের পরেও অনেক সময় প্রদাহ আমরা দেখতে পাই। তো ব্যাকটেরিয়াল কনজাংটিভাইটিস যেটি, ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস সেটি কিন্তু ঋতুবদলের বিভিন্ন অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত। ইদানীং একটি কনজাংটিভাইটিস লক্ষ করছি, চোখ ওঠে, চোখ ফুলে যায়, চোখ দিয়ে পানি পড়ে, চোখের পাতা ফুলে যায়, চোখ বড় করতে পারে না। ঝাপসা লাগে, ব্যথা হয়, লাল হয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে অনেকে মনে করে দোকান থেকে নিয়ে একটি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলেই হবে। কিন্তু ল্যাম্পে দেখি, তখনই কর্নিয়াতে একটি দাগ পড়ছে। অর্থাৎ কেরাটোকনজাংটিভাইটিস হচ্ছে। অর্থাৎ কনজাংটিভাইটিস হচ্ছে, আবার কর্নিয়াতে দাগ পড়ছে। এই ক্ষেত্রে শুধু অ্যান্টিবায়োটিক দিলে হবে না। এই ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাল ওয়েনমেন্টও ব্যবহার করি। সুতরাং চোখ উঠলে আগের মতো দোকান থেকে ওষুধ কিনলে হবে না। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলে, যদি ভাইরাল কেরাটোকনজাংটিভাইটিস হয়, তাহলে অ্যান্টিভাইরাল ১৪ দিন থেকে ২১ দিন ব্যবহার না করলে, ওই চোখে দেখতে না পাওয়ারও আশঙ্কা থাকে।
প্রশ্ন : এটি কী সবার ক্ষেত্রেই হতে পারে?
উত্তর : এই ক্ষেত্রে একটি জিনিস মনে রাখা দরকার, চোখ ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই, রোগীর ব্যবহৃত জিনিস অন্য কেউ যাতে ব্যবহার না করে, সেদিকে খেয়াল রাখবে। কালো চশমা পরবে, চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ ব্যবহার করবে। ওষুধ ব্যবহার করলে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে। আর যদি শুধু ব্যাকটেরিয়াল হয়, কেরাটোকনজাংটিভাইটিস না হয়, দু-তিনদিন থেকে সাতদিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে কেরাটোকনজাংটিভাইটিস এতে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। তখন আমরা অ্যান্টিবায়োটিক দিই। বিভিন্ন ওষুধ দিই।
আবার বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, জন্মের পর তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। মায়েরা বলে ময়লা হচ্ছে। সেটার জন্য একটি ব্যায়াম মাকে শিখিয়ে দিলে, একটি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিলে ভালো হয়ে যায়। এ ছাড়া দেখা যায় যে, চোখের একটি মাংস বাড়ে। যে সমস্ত ময়লা এলাকা অথবা আমাদের দেশের উত্তরবঙ্গ যেখানে শুষ্কতা বেশি, ধুলা বেশি, সেসব জায়গায় কনজাংটিভাইটিস একটু বেড়ে প্রদাহ হয়ে, কর্নিয়ার ওপর পর্যন্ত চলে যায়। অনেকে এর দিকে খেয়াল করে না। আস্তে আস্তে এতটা বেড়ে যায় যে কর্নিয়ার অর্ধেক অংশ যখন আসে, তখন মনিটা ঘিরে যায়। দেখতে অসুবিধা হয়। সে ক্ষেত্রে একটি অস্ত্রোপচার করে নিলে সে ভালো হয়ে যায়। বারবার যদি এটি হয়, তাহলে দেখা যায় ল্যামেলার কেরাটোপ্লাস্টি বলে আরেকটি চিকিৎসা আছে, কর্নিয়ার অর্ধেকে আবার ট্রান্সপ্লানটেশন করতে হয়। এ রকম অনেক রোগী আমরা পেয়েছি।
এ ছাড়া আমি কর্নিয়ার ঘায়ের কথা বলেছিলাম। সাধারণ রোগের মধ্যে দেখা যায় যে, আমাদের দেশের মানুষ কানের ময়লা পরিষ্কার করে, কোনো কিছু দিলে একটা ময়লা রুমাল দিয়ে পরিষ্কার করে, কোনো একটি বাইরের জিনিস চলে গেল। এমনকি চুল কাটানোর সময় চুল ঢুকতে পারে। লেদ মেশিনে কাজ করার সময় লোহার টুকরো ঢুকতে পারে। রাস্তায় চলার পথে বাদামের খোসা চলে যেতে পারে। ধান মাড়াইয়ের সময় ধানের একটি অংশ চলে যেতে পারে। এই সব কিছু কর্নিয়াতে যে ঘা হয়, এই ঘা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভালো হয়। এটি কর্নিয়াল এব্রেশন। আর কর্নিয়াল আলসারটি যদি দেরি করে ফেলে আমাদের কাছে আসতে, তাহলে কর্নিয়াল আলসার হতে পারে।
ধান মাড়াইয়ের সময় যে পার্ট থাকে সেটি চোখে গেলে ফাঙ্গাল কর্নিয়াল আলসার হতে পারে। এই ক্ষেত্রে দেখা যায় ভাইরাল, ব্যাকটেরিয়াল এবং ফাঙ্গাল আলাদা আলাদা। এটা সাধারণত আমাদের কৃষকরা মাঠে যে কাজ করে, তখন এটা বেশি হয়। কালো চশমা ব্যবহার করে, এটা রোধ করা যায়।
এ ছাড়া আমি সিস্টেমিক কিছু রোগের কথা বলেছিলাম, আজকাল তো বয়স বাড়ছে, বয়সজনিত রোগ হচ্ছে, ডায়াবেটিস হলেও কিন্তু চোখের সমস্যা হয়। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিতে বহুলোক ভুগছে। এর চিকিৎসা রয়েছে। আমরা অনেক সময় লেজার দিই, যদি ভেতরে রক্ত জমে তখন সার্জনের মাধ্যমে রক্ত বের করে দিয়ে সিলিকন ওয়েল দিয়ে চিকিৎসা করি। এ ছাড়া থাইরয়েড, একটি সিস্টেমিক রোগ আছে, আপনি জানেন গলগণ্ড রোগ হয়, এই ক্ষেত্রে চোখ সামনের দিকে এগিয়ে যায়, একে আমরা বলি চোখ সামনে এগিয়ে যাওয়া। সে ক্ষেত্রে চোখটা বন্ধ হয় না। চোখ শুকিয়ে যায়, চোখে ঘা হয়, এগুলো থাইরয়েড হলে হয়। সেই ক্ষেত্রে এর সমস্যা সমাধান করতে হবে।
চোখের প্রেসারের একটি রোগ আছে। সেটি হলো গ্লুকোমা। এটা জন্মগত হতে পারে। ছোট বেলায়ই গরুর মতো চোখ বড় হয়ে যায়। আরেকটি হতে পারে, যারা বয়সজনিত, চল্লিশে একটি গ্লুকোমা হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, দুই ধরনের গ্লুকোমা থাকে। সেই প্রাইমারির মধ্যে আবার ওপেন এঙ্গেল, ন্যারো এঙ্গেল গ্লুকোমা থাকে। গ্লুকোমা হলো, যেমন রক্তের চাপ মানুষের বাড়ে, পরীক্ষা না করে বোঝা যায় না, চোখও যদি পরীক্ষা করে, চোখের প্রেসার না মাপা হয়, স্বাভাবিক থাকে ১৪ থেকে ২১ পর্যন্ত, এর বেশি হয়ে গেলে গ্লুকোমা হয়েছে কি না, এর চিকিৎসা করি, ওষুধে না হলে অস্ত্রোপচার করে, এর চিকিৎসা করি।