শরীর চুলকানোর কারণ কী?

বিভিন্ন কারণে শরীরে চুলকানি বা বডি ইচিংয়ের সমস্যা হতে পারে। সঠিকভাবে চিকিৎসা না করালে রোগ জটিল আকার ধারণ করতে পারে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৫২৯তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. রাশেদ মোহাম্মদ খান। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : বডি ইচিংয়ের ধরনগুলো কী?
উত্তর : আমরা প্রথমে যেটি বলি ভাগ্যিস ইচিং ছিল। এই সমস্যাকে সাধারণ মনে হলেও তা মোটেও সাধারণ নয়। অনেক কারণে এটি হতে পারে। কিছু কিছু দেখা যায় স্বাভাবিক কারণ। যেমন যাদের ত্বক খুব শুষ্ক, শীতকালে যখন ময়েশ্চার কমে যায়, তখন দেখা যায় চুলকাতে পারে। কারো যেমন ধরেন রক্তশূন্যতা আছে, সেখান থেকে সারা গা চুলকাতে পারে। কারো ডায়াবেটিস আছে, সেখান থেকে সারা গা চুলকাতে পারে। কারো কারো হরমোনে সমস্যা আছে, যেমন আমরা বলি থাইরয়েডের যদি কোনো তারতম্য হয়, বা কম বেশি হয়, দুটো থেকেই চুলকানি হতে পারে। এ ছাড়া সিস্টেমিক রোগ—যেমন অবসট্রাকটিভ জন্ডিস, লিভার সমস্যা; এসব থেকে ইচিং হতে পারে। কিডনিতে যাদের সমস্যা আছে, দেখা যায়, সারা গা চুলকাচ্ছে। এমনকি ম্যালিগন্যান্সি, রক্তের ক্যানসার সেখান থেকে সারা গায়ে ইচিং হতে পারে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে গরম পানিতে গোসল করে চুলকাচ্ছে। কারো কারো দেখা যায় ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করে চুলকাচ্ছে। এটা বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে।
প্রশ্ন : ত্বকের কারণে যেই চুলকানি হচ্ছে সেগুলো কী?
উত্তর : বেশির ভাগ ত্বকের সমস্যাতেই চুলকানি হয়। আমাদের দেশে একটা খুব প্রচলিত রোগ, শীতকালে অনেক বেশি হয় স্ক্যাবিজ। এক সঙ্গে অনেক লোক থাকে, একজনের কাছ থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে যায়। পুরো পরিবারকে চুলকাচ্ছে। একধরনের পরজীবী দিয়ে এটা হয়। চুলকাবে রাতে বেশি। রাতে যখন বেশি চুলকানি হয়, আমরা ভাবি স্ক্যাবিজ হতে পারে। আমরা এসব লক্ষণগুলো খুঁজি। দেখি আঙুলের ফাঁকে কোনো দানা দানা আছে কি না। জেনিটাল রিজিয়নে, নারীদের স্তনের নিচে, খাঁজগুলোতে কোনো দানা দানা আছে কি না। পারিবারিক ইতিহাস নিচ্ছি আমরা। চুলকানির ধরন দেখে আমরা পুরো বিষয়টিকে নির্ণয় করে ফেলি।
সোরিয়াসিস একটি রোগ। এতেও চুলকানি হয়। আমাদের চামড়ায় সিলভার স্কেল উঠতে পারে। তবে এর ভাগ রয়েছে। এক ধরনের সোরিয়াসিস হয়—ছোট ছোট, দানা দানা। সোরিয়াসিস যদি ঠিকমতো চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে সমস্যা হয়। সোরিয়াসিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে খুব হিসাব করে। তখন সারা গায়ের চামড়া ঝরে পড়ে যাবে। সেখানে অনেক চুলকানি হতে পারে। এ ছাড়া আরো অনেক রোগ হয়।
প্রশ্ন : কোন কারণে ইচিং হচ্ছে সেটি বোঝার উপায় কী?
উত্তর : ইচিংকে উপেক্ষা করা যাবে না। অনেকে মনে করেন চুলকাচ্ছে, হয়তো ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু চুলকানির বিষয়ে সতর্ক থাকাই উচিত হবে।
চুলকানি দুই রকমের হতে পারে। শুধু একটি জায়গায় চুলকাচ্ছে। যেমন বলছিলেন ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কথা। কিছু কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় চুলকাতে পারে। আবার সারা গায়ে চুলকাতে পারে। সারা গায়ে চুলকানোর কিছু ত্বক সম্পর্কিত কারণ আছে। সারা গায়ে চুলকানোর কিছু সিস্টেমিক কারণ রয়েছে। ত্বক সম্পর্কিত বিষয়গুলো আমরা দেখে বুঝতে পারি। আর কোনো কারণই যখন বোঝা না যায় তখন লিভার ফাংশন করি। যেমন হয়তো জন্ডিস দেখলাম। তখন বুঝব লিভারের কারণে সারা গায়ে চুলকানি হতে পারে।
কিডনি ফাংশন যাদের কমে যায়, যাদের রেনাল ফেইলিউর তাদের সারা গায়ে আবার চুলকানি হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাইকোজেনিক ইচিং বলি। অনেকের মনে হয় গায়ের মধ্যে পোকা হাঁটছে। এটা কিন্তু মানসিক রোগ। এদেরও চিকিৎসা আছে। সাইকিয়াট্রিস্ট, ডার্মাটোলজিস্ট সবাই মিলে চিকিৎসা করতে হয়।