কীভাবে বুঝবেন চোখের রেটিনায় সমস্যা?
রেটিনার চোখের ভেতর খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিভিন্ন কারণে রেটিনা অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৮৩তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান। বর্তমানে তিনি ভিশন আই হাসপাতালরে রেটিনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : রেটিনার গুরুত্ব কী এবং এর কাজটা কী?
উত্তর : রেটিনা হলো চোখের একদম পিছনের একটি পর্দা। সিনেমার পর্দায় যেমন ছবি তৈরি হয়, ক্যামেরাতে ঠিক যেভাবে ছবি আসে, ফিল্মের ভিতরে, তেমনি রেটিনা হলো চোখের ফিল্ম। এখানে আমাদের ছবিটা আসলে তৈরি হয়।
প্রশ্ন : এটি চোখের কোন অংশে থাকে? আমরা কী এটি দেখতে পাই?
উত্তর : এটি বাইরে থেকে দেখা যায় না। চোখ তো গোল একটি বলের মতো। আমরা যদি কল্পনা করি, চোখের সামনে থেকে পেছনের দেয়াল, যদি কেটে ফেলি একদম, পেছনের যে দেয়াল,সেই দেয়ালের বরাবর পাতলা একটি পর্দা লাগানো থাকে,এটি হচ্ছে রেটিনা।রেটিনায় যেহেতু ছবিটা তৈরি হবে তাই এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা দেখতে পাব না। সিনেমার পর্দা গুটে গেলে যেমন ছবি হবে না, রেটিনার ভেতরে যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে ছবিটিই তৈরি হবে না।
প্রশ্ন : রেটিনায় সাধারণত কী ধরনের রোগ হয়ে থাকে?
উত্তর : রেটিনাতে দেশে সবচেয়ে প্রচলিত যে রোগটি হয়, ডায়াবেটিসের কারণে, সেটির নাম ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপের কারণে চোখের পর্দার ভিতরে কিছু সমস্যা হয়। এ ছাড়া জন্মগত কারণেও রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যারা মায়োপিক, যার মানে যাদের অনেক মাইনাস পাওয়ারের চশমা লাগে, তাদেরও অনেক সময় রেটিনার ভিতরে অনেক ধরনের সমস্যা থাকতে পারে। অথবা কখনো কখনো আঘাত লাগার কারণে, অথবা বয়সজনিত কারণে কিছু পরিবর্তন রেটিনার মধ্যে আসতে পারে।
প্রশ্ন : আমার রেটিনা ঠিক আছে কি না আমি বুঝব কী করে? বা কী ধরনের সমস্যা দেখলে আমার মনে করা উচিত হবে রেটিনায় সমস্যা হতে যাচ্ছে?
উত্তর : ঠিক এই জায়গাতে একটি সমস্যা। সমস্যা হলো রেটিনা যেহেতু চোখের গভীরে থাকে, একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে এটি বুঝে ওঠা কঠিন যে আমার রেটিনাতে কোনো সমস্যা আছে কি না? হ্যাঁ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে একজন মানুষ তার রেটিনার সমস্যাকে ধরতে পারে। যেমন হঠাৎ করে সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠে মনে হলো চোখের ভেতর কালো মেঘের মতো ছায়া চলে এসেছে। আমি দেখতে পাচ্ছি না। আমার দৃষ্টির যে পরিসীমা তার কোনো একটি অংশে কালো একটি পর্দার মতো এসে পড়েছে। তাহলে আমরা বুঝতে পারব যে রেটিনার সমস্যা। বয়স্ক মানুষ মাঝে মাঝে এটি বুঝতে পারে যে সাদা কোনো পর্দার দিকে তাকালে, ঠিক মাঝখানে কোথাও কালো একটি ছায়ার মতো বা ছোপের মতো দেখা যাচ্ছে। তাহলে মনে করতে হবে এটি রেটিনার কোনো একটি কারণে হয়ে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে যখনই এ রকম মনে হবে, চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, রেটিনা পরীক্ষা করার জন্য।
প্রশ্ন : পরীক্ষায় আপনারা কী করেন যা দিয়ে বোঝা যাবে রেটিনা কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে?
উত্তর : পরীক্ষার কতগুলো ধাপ রয়েছে। প্রথমত, আমরা একটি মানুষের দৃষ্টি কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটি সাধারণ কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে দেখি।কিছু বিশেষ পরীক্ষা যেগুলো আমরা সরাসরি নিজেরা করে থাকি,সেগুলো হলো চোখের মণিকে আমরা বড় করি। কারণ, আমরা জানি যে চোখের ভেতরটা আমাদের দেখতে হবে। সেই গভীরে দেখার জন্য ওষুধের মাধ্যমে সেই মণিকে আমরা বড় করে পরীক্ষা করি। এরপর আমরা আমাদের বিশেষ কিছু যন্ত্রপাতির মাধ্যমে চোখের ভেতরে রেটিনা পুরোপুরি চেক করে দেখি যে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুধু খালি চোখে দেখাটাই যথেষ্ট নয়। সেক্ষেত্রে আরো কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা রয়েছে, যে রকম চোখের ভেতর একটি ছবি তোলা, ওসিটি, এর মানে হলো চোখের ভেতর স্ক্যান করা।
আমরা জানি রেটিনার ১০টি লেয়ার রয়েছে। একটি রেটিনার পুরত্ব হলো ২৭০ থেকে ৩০০ মাইক্রোন। এক মিলিমিটার থেকেও অনেক অনেক কম। তাই এর ভেতর কোনো সমস্যা আছে কি না এর জন্য আমরা ওসিটি করি। ওসিটি করলে এর প্রতিটি লেয়ারকে আমরা আলাদা আলাদা করে নির্দিষ্ট করতে পারি। ঠিক তখনই আমরা কোন লেয়ারে কতটুকু সমস্যা হয়েছে সেটা ধরে নিতে পারি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চোখের এনজিওগ্রাম রয়েছে, সেগুলো করি।