জরায়ুমুখের ক্যানসারে কখন থেকে পরীক্ষা করতে হবে?

জরায়ুমুখের ক্যানসার আগে থেকে ধরতে পারলে চিকিৎসা করা সহজ হয়। এই জন্য নিয়মিত পরীক্ষা করা জরুরি। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৬৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. আফরোজা খানম। বর্তমানে তিনি জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের গাইনি অনকোলজি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : প্রাথমিক অবস্থায় ধরার জন্য তো স্ত্রিনিং করা জরুরি। একজন নারীর কোন বয়স থেকে এটি করা উচিত?
উত্তর : স্ক্রিনিং বিষয়টি আসলে খুঁজে দেখা, যে না আদৌ সে ভালো আছে কি না। স্ক্রিনিং আমরা তাদেরই করব যাদের কোনো রোগ নেই। তাহলেই স্ক্রিনিংয়ে সফলতা আসবে। আমরা এই অবস্থায় এগিয়ে যাব। আর স্ক্রিনিংয়ের জন্য আমরা বলে থাকি যে বয়সে তার বিয়ে হবে, তার তিন বছর পর থেকে সে স্ক্রিনিং করবে। এবং প্রতি তিন বছর পরপর সে স্ক্রিনিং করে যাবে, ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত।
প্রশ্ন : স্ক্রিনিংয়ে আপনারা কী করে থাকেন?
উত্তর : আমরা এখানে ভায়া পরীক্ষা করে থাকি। আমরা প্যাপসমিয়ার করে থাকি। আজকাল আধুনিক হলো এইচপিভি ডিএনএ ভাইরাস, যেটা দিয়ে ক্যানসার হয়। এটা স্ক্রিনিংয়ের মধ্যে বের করা যায়। যদি এইচপিভি ডিএনএ ভাইরাস নেগেটিভ থাকে, আমরা বলি পাঁচ বছর পর্যন্ত তুমি একদম নিশ্চিন্ত। কোনো কোনো জায়গায় বলে সে ১০ বছরের জন্য নিশ্চিন্ত। এটা যদি কেউ নিয়মিত করায় তাহলেই কিন্তু যথেষ্ট ক্যানসার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। আমার ক্যানসার হবে, তারপর আমি যাব এটি ঠিক নয়। স্ক্রিনিং করতে গিয়ে যদি ধরা পড়ে পূর্বাভাস ধরা পড়ছে। এর চিকিৎসাগুলো অনেক সোজা। বরং ক্যানসার হয়ে গেলে তার চিকিৎসা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক খরচের বিষয় আছে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের সব জেলায় বা সব জায়গায় কি স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা আছে?
উত্তর : সব হাসপাতালেই এখন ভায়া পরীক্ষা হচ্ছে। এগুলো বিনামূল্যে করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের নারীরা বসে থাকে যে তার কিছু হবে, এরপর সে চিকিৎসকের কাছে যাবে। তার কিছু হওয়ার দরকার নেই। সুস্থ অবস্থাতেই একবার গিয়ে চেক করুক।
প্রশ্ন : এইপিভির কথা বলছিলেন। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস। এর বিরুদ্ধে কি কোনো ভ্যাকসিন বা টিকা নেওয়ার সুযোগ আছে?
উত্তর : হ্যাঁ, আছে।
প্রশ্ন : সেটা কি বা কারা নিতে পারবে?
উত্তর : ৯ থেকে ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত সে নিতে পারে। তবে বিয়ের আগে নিয়ে নিতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। টিকাগুলো নিয়ে নেবে। তবে শর্ত আছে। টিকা নিয়ে ফেললেই যে আমার কাজ শেষ তা কিন্তু নয়। কারণ, টিকাগুলো মাত্র দুটো ভাইরাসের বিরুদ্ধে। কিন্তু জরায়ু ক্যানসার আরো অন্যান্য ভাইরাস দিয়েও হতে পারে। তাই টিকা নিলেও কিন্তু তিন বছর পরপর জরায়ুর মুখ পরীক্ষা করতে হবে। তবে টিকা নিলে ঝুঁকিটা কমে আসে। টিকা নিলে তার আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণটা কমে আসছে ঠিকই, তবে তাকে নিয়মিত চেক করাতে হবে। টিকা নিয়ে নিতে হবে তার সচেতনতার জন্য। যারা সচেতন থাকে তাদের ক্যানসার হওয়ার কথা নয়। টিকা নিতে হবে। তবে এরপর জরায়ুমুখের পরীক্ষাটা অবশ্যই করাবে।
প্রশ্ন : জরায়ুমুখের ক্যানসারের যথাসময়ে চিকিৎসা নিলে নিরাময় হার কতখানি?
উত্তর : এটা নির্ভর করে রোগী কোন পর্যায়ে আমাদের কাছে এলো। আমরা পর্যায়ে ভাগ করি। একদম প্রাথমিক পর্যায়ে এক বা দুই তে আমরা অস্ত্রোপচার করতে পারি। অস্ত্রোপচারের পর রেডিওথেরাপি দিই। লাগলে কনকারেন ক্যামোরেডিয়েশন আমরা দিই। এগুলো খুবই ভালো ফলাফল হয়। পর্যায় তিন-চারেও যেন সে চিকিৎসা করতে আসে। বসে যেন না থেকে, ভয় না পেয়ে তাকে চিকিৎসা নিতে হবে।