মামসের চিকিৎসা কী

শিশুদের ক্ষেত্রে ভাইরাস রোগ মামস বেশি দেখা যায়। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে রোগটি জটিল আকার ধারণ করতে পারে। এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৪৫তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মো. রিয়াজ মোবারক। বর্তমানে তিনি ঢাকা শিশু হাসপাতালের এইচডিইউ অ্যান্ড আইসুলেশন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : একটি বাচ্চার মামস হলে তাকে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া কি প্রয়োজন আছে? কেমন হলে প্রয়োজন নেই?
উত্তর : আসলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার একেবারেই প্রয়োজন নেই। কিন্তু আমরা মা-বাবারা যখন সচেতন হয়ে যাই, সেই অল্প ক্ষেত্রে ফোলা বা গা ব্যথা, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, জ্বর বা বমির জন্য চিকিৎসকের কাছে মামসের রোগীকে নিয়ে যাই। তাদের পরামর্শটা খুব বেশি প্রয়োজন।
প্রশ্ন : ফুলে গেলে যে রোগটা মামসই, সেটা বুঝবে কী করে।
উত্তর : সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। আর আরেকটি জিনিস হলো মামস তো একটি জানা বিষয়। যখন গাল দুটো ফুলে যাবে, বাচ্চা যখন খাবে না, বমি করবে, বাচ্চা যখন টক্সিক লুক দেবে, তখন মা কিন্তু বাচ্চাকে নিয়ে যাবে। আর তখন চিকিৎসকের কাছে নেওয়াই উচিত হবে।
এই রোগটি খুবই সংক্রামক। স্পর্শ না করেও এই রোগ ছড়াতে পারে। এ ক্ষেত্রে অন্য বাচ্চারা নিরাপদ না। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চায়, তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। ডাক্তারের কাছে নেওয়াই উচিত। এতে শতভাগ রোগ নির্ণয় হবে। আর ডাক্তারের কাছে না নিলে তারা নিজেরা নিজেরা হয়তো একটি কড়া ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করে দেয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো কবিরাজি চিকিৎসা শুরু করে দেয়।
প্রশ্ন : আপনাদের কাছে আনলে তখন কী চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
উত্তর : যদি মামসের কোনো জটিলতা না থাকে, যদি সাধারণ মামস নিয়ে আসে তাহলে আমরা জ্বর কমানোর চেষ্টা করি। লক্ষণ বুঝে চিকিৎসা দিই। বমি কমানোর চেষ্টা করি বা ব্যথা কমানোর চেষ্টা করি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মায়েরা বলে যে আমরা একটু স্যাঁক দিতে পারি? আমি বলি ঠিক আছে স্যাঁকটা দিতে পারেন। এতে আরাম লাগবে। আর প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, সবজি খাওয়ানো লাগবে। এ বিষয়ে নির্দেশ দিই। পানি পানের জন্য নির্দেশ দিই। যেন শরীর থেকে ভাইরাসটা বেরিয়ে যেতে পারে। খুব জটিল আকার না হয়ে গেলে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই।
প্রশ্ন : মামস হয়ে গেলে বাচ্চার মায়েরা জোর দেন চিকিৎসককে, অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার জন্য। আসলে মামসের বেলায় সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকের ভূমিকা আছে কি?
উত্তর : মামসের ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই। কিন্তু আমরা কখনো কখনো অ্যান্টিবায়োটিক দিই যেহেতু মনে করি যে মামস একটি ভাইরাস অসুখ এবং এতে করে মানুষ, এতে করে মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়, তাতে করে অন্য ব্যাকটেরিয়াগুলোও জেগে ওঠে। গলাব্যথা অনেক কিছু হয়। মামস হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে অনেকদিন পর গলাব্যথা ভালো হচ্ছে না। মামস হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে জ্বর কমছে না। তখন আমরা অ্যান্টিবায়োটিকের কথা অবশ্যই চিন্তা করব। ভাবব এর সঙ্গে সঙ্গে একটা কো মরবিডিটি আছে, সঙ্গে সঙ্গে একটা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ আছে। সেই ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই একটি অ্যান্টিবায়োটিক দেব। আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা মায়েদের বলার কারণে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দেয়। আমার মনে হয়, সেটি ঠিক নয়। এতে অ্যান্টিবায়োটিকের ভুল ব্যবহার হচ্ছে।
প্রশ্ন : ঠিকমতো মামসের চিকিৎসা না নিলে কী কী জটিলতা দেখা দিতে পারে?
উত্তর : চিকিৎসা মানে ব্যবস্থাপনা যদি ঠিকমতো না হয়, সে ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। ব্যবস্থাপনা মানে যে শুধু ওষুধ দিতে হবে সেটি নয়। পুষ্টি বা অন্যান্য জিনিসগুলো যদি ঠিকমতো মেনে না চলি, তাহলে জটিলতার দিকে যেতে পারে। মস্তিষ্কের ঝিল্লিতে সংক্রমণ করতে পারে। আরো হতে পারে যেটা আমাদের প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়, এর মধ্যে সংক্রমণ হতে পারে। প্যানক্রিয়াটাইটিস হতে পারে। ছেলেদের ক্ষেত্রে টেসটিসের মধ্যে সংক্রমণ হতে পারে। এতে করে এত বেশি খারাপ সংক্রমণ হতে পারে যে প্রজননক্ষমতাও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মেয়েদের ক্ষেত্রে টিউবের মধ্যে সংক্রমণ হতে পারে। তাদেরও ডিম্বাণুর মধ্যে প্রজননক্ষমতা নষ্ট করে দিতে পারে। এই ধরনের জটিল আকার যেকোনো মুহূর্তে হতে পারে।
প্রশ্ন : মামস কি প্রতিরোধযোগ্য? টিকা বা ভ্যাকসিনেশনের সুযোগ আছে কি?
উত্তর : অবশ্যই মামস প্রতিরোধযোগ্য। একটি ভ্যাকসিন আছে, এটি সম্মিলিত ভ্যাকসিন। সরকারিভাবে আমরা দিই রুবেলা ও মিসজলস, হামের ভ্যাকসিন। কিন্তু বেসরকারিভাবে এখন পাওয়া যায়, সরকারিভাবে এখনো দেওয়া হয় না। আমি বলব যে দেওয়া হোক, সেটি হলো এমএমআর ভ্যাকসিন। এটা হলো মিজলস, মামস ও রুবেলা। এই ভ্যাকসিন খুব জরুরি। সাধারণত এক বছর বয়স থেকে আমরা শুরু করি। এক বছরের বয়সের পরে তিন মাস পরেই যদি আমরা আরেকটি দিই, তাহলে দ্বিতীয় ডোজ হবে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে বড় হলে, যেমন ১৩-১৪ বছর বয়সে আমরা দিই। মামসের একটি ভ্যাকসিন সারা পৃথিবীতে আছে, বাংলাদেশেও আছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সরকারিভাবে মামসের ভ্যাকসিন দিচ্ছি না।