ব্রণ সারাতে করণীয়

কমবেশি অনেকেই ব্রণের শিকার হন। সাধারণত ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলে মেয়েদের ক্ষেত্রে ব্রণ একটি সাধারণ অসুখ। তবে যেকোনো বয়সে ব্রণ হতে পারে। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে ২০ শতাংশ এবং ৪০ বছর বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে ৫ শতাংশ ব্রণের সমস্যায় ভোগেন।
ব্রণ বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন : ছোট ছোট গোল ফুসকুরির মতো, লালচে ছোট ছোট গোটা, আবার পুজপূর্ণ বড় বড় চাকাও হতে পারে। ব্রণটি পরে ভাতের দানার মতো বের হয়ে আসে। অনেকের ব্রণ খুব যন্ত্রণা দায়ক হয়। ব্রণের কারণে ত্বকে ছিদ্র দেখা দিতে পারে। কারো কারো মুখে ব্রণের তীব্রতা বেশি থাকলে তা এবড়ো থেবড়ো দেখায়। ব্রণে বেশি হাত দিয়ে খোঁচাখুঁচি করলে সেখানে কালো দাগ সৃষ্টি হয়।
ব্রণের চিকিৎসায় অনেকেই অনেক আয়োজন করে থাকে। অনেক অনেক কসমেটিকস বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে তা ব্যবহার করে এবং দেখা যায় এসব কসমেটিকস প্রকৃতপক্ষে বাড়িয়ে তুলছে ব্রণের তীব্রতা।
ব্রণ কোথায় হয় : ব্রণ সাধারণত মুখে বেশি হয়। বিশেষ করে গালে, নাক, কপাল ও থুতনি- এসব জায়গায়। তবে ঘাড়, কাধ, বুক, পিঠ, স্তন, নাভি ও উরুতেও ব্রণ হয়ে থাকে।
ব্রণ কেন হয় : আমাদের ত্বকে অনেক ‘সিবাসিয়াস’ গ্রন্থি থাকে। এটি থেকে সবসময় ‘সিবাম’নামের এক ধরনের তৈলাক্ত রস নিঃসৃত হয়। লোমকূপ দিয়ে এই ‘সিবাম’বের হয়ে ত্বকে ছড়িয়ে পড়ে বিধায় ত্বকে নরম, মসৃণ ও তৈলাক্ত ভাব আসে। যদি কোনো কারণে সিবামের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায় এবং লোমের গোড়ায় বিদ্যমান ‘কেরাটিন’(এক ধরনের প্রোটিন জাতীয় পদার্থ) ধুলোবালির সঙ্গে মিশে সেখানকার ছিদ্রপথ বা নির্গমণের পথ বন্ধ করে দেয়। এতে সিবাম বের হতে না পেরে জমা হয়ে ব্রণ হিসেবে প্রকাশ পায়। এই ব্রণ প্রোপাইনি ব্যাকটেরিয়াম একনিস নামক এক ধরনের জীবাণু দিয়ে সংক্রমিত হয় এবং পরে আরো তীব্রতা লাভ করে। উল্লেখ্য, সিবাসিয়াস গ্রন্থী শরীরের মধ্যে মুখের ত্বকে বেশি থাকে। তাই ব্রণও মুখেই সবচেয়ে বেশি হয়। এনড্রজেন নামক এক প্রকার হরমনের প্রভাবে সিবামের উৎপাদন ও নিঃসরণ বেড়ে যেতে পারে। যাদের এনড্রজেন হরমোন বেশি নিঃসৃত হয় তাদের সিবামের নিঃসরণের মাত্রাও বেড়ে যায়। এতে এখান থেকে ব্রণ সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনের সঙ্গে ব্রণের তীব্রতা ও উঠানামা করতে পারে। মানসিক অশান্তি, অতিরিক্ত চিন্তা এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রতিবার ঋতুস্রাবে আগে ব্রণের তীব্রতা বেড়ে যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য, কৃমি, শরীরে পুষ্টিহীনতা, অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্রণ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। অতিরিক্ত গরম এবং বাতাসের আর্দ্রতা বেশি হলেও ব্রণ হতে পারে। যারা অতিরিক্ত প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করেন তাদেরও ব্রণ হতে পারে। দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ওষুধ ব্যবহারে ব্রণ দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া জন্ম নিয়ন্ত্রণ ওষুধ খেলেও ব্রণ হতে পারে।
ব্রণ সারাতে করণীয় :
১) প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
২) তাজা ফলমূল খান।
৩) চর্বি জাতীয় এবং অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন।
৪) ব্রণের দাগ সারাতে চিনি দিয়ে স্ক্রাব করতে পারেন। এতে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৫) ডিমের সাদা অংশও ব্রণের দাগ কমাতে সাহায্য করে।
৬) বেকিং সোডা, টমেটো, এলোভেরা ও হলুদের প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
৭) টি ট্রি অয়েল, চন্দনের ফেস প্যাক, মধু, হলুদ ও দুধ দিয়ে ফেস প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
৮) আলুর রস, টক দই, কমলার খোসা, সসা, জায়ফল, কোকোনাট অয়েল, পেপে, ডাবের পানি ব্রণের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে।
৯) ফুসকুরির দাগ মুছে ফেলার জন্য দুধের সঙ্গে মেথি বীজ ব্যবহার করতে পারেন।
১০) সাইট্রাস ফেস প্যাক ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। সাইট্রাস ফলের মধ্যে আপনি বাজারে পাবেন লেবু, কমলা লেবু ।
১১) ঘুমের পরিমাণ ঠিক রাখতে হবে।
ব্রণের চিকিৎসা :
- সব ধরনের প্রসাধন বর্জন করতে হবে।
- নখ দিয়ে বরণ খোঁটাখুঁটি করা যাবে না।
- বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্রণ আপনা আপনি সেরে যায়। দিনে অন্তত তিনবার মুখ ধুতে হবে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ ব্যবহার করবেন।
লেখক : প্রধান প্রশিক্ষক অ্যান্ড ইনচার্জ, পারসোনা হেলথ।