রোজায় স্বাস্থ্য
গর্ভবতী ও শিশুকে স্তন্যদানকারী মায়েদের রোজা

গর্ভবতী ও যেসব মা শিশুদের স্তন্য পান করান, তাঁদের রোজা রাখার বিষয়ে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪২৩তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. কহিনূর খান। বর্তমানে তিনি গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজ, গণ-বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি ও অবস বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : রমজান মাসে গর্ভবতী ও যেসব মা শিশুদের স্তন্য পান করান, তাঁদের সুস্থতার ক্ষেত্রে কী কী করণীয়?
উত্তর: তাঁদের সুস্থতার জন্য খাবারদাবারের প্রতি নিয়মিত সজাগ থাকতে হবে। পরিমাণমতো খেতে হবে। অতিরিক্ত খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। যেমন ঝাল-মসলাযুক্ত খাবার, ভাজাপোড়া এসব খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। কারণ, এতে গ্যাসট্রিকের সমস্যাটা বেশি হয়। আর যেসব মা এই অবস্থায় রোজা রাখেন, এই অবস্থায় তাঁরা যখন ইফতার করবেন অতিরিক্ত পানি পান করবেন এবং ফলফলাদি খাবেন। এই ঝাল-মসলাযুক্ত, ভাজাপোড়া খাবারগুলো এড়িয়ে গেলে বেশি ভালো হয়। খাবারটা খুব অল্প হতে হবে।
বেশি করে খেলে দেখা যাবে যে পরে আবার খাবার খেতে রুচি হবে না এবং দুটো নামাজের মাঝখানে আবার কিছু খাবার খেয়ে নিলে সেহরির খাবারটা পরে সুষ্ঠুভাবে খেয়ে নিতে পারবেন।
প্রশ্ন : যাঁরা গর্ভবতী বা যাঁরা স্তন্য দান করছেন শিশুকে, তাঁদের ক্ষেত্রে রোজা রাখার বিষয়টি কী রকম বা তাঁরা রোজা রাখতে পারবেন কি না?
উত্তর : যাঁরা সুস্থ-সবল, অনেকেই পারেন রোজা রাখতে এবং তাঁরা ইচ্ছে করেই রোজা রাখেন। রোজার আগে তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে থাকেন। পরামর্শ নিয়ে তাঁরা যদি রোজা রাখতে পারেন, তাহলে পারবেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা তাঁদের বলি যাঁরা গর্ভবতী নারী, তাঁরা প্রথম তিন মাস এবং যাঁরা দুধ পান করান বাচ্চাকে, তাঁদের বেলায় প্রথম ছয় মাস একটু অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এই সময়ে রোজা এড়িয়ে গিয়ে পরে রোজা কাজা করে নিতে পারেন। যদি বাচ্চা শুধু স্তন্যপানের ওপর নির্ভর হয়ে থাকে, বাড়তি খাবার যদি না খায়, যেটা আমরা ছয় মাস পরেই দিতে পারি, যেমন খিচুড়ির মাধ্যমে ডিম বা সবজি দিতে পারি। এটা যদি বাচ্চা না খেতে চায়, যেসব বাচ্চা কেবল স্তন্যপানের ওপর নির্ভর করে, তাদের বেলা একটু অসুবিধা হয়ে পড়ে রোজাটা। তখন তারা কাফফারা দিতে পারে। একজন লোককে দুই বেলা সুষ্ঠুভাবে খাওয়ালে রোজার কাফফারা হয়ে যায়।
যখন বাচ্চারা অন্যান্য খাবারের দিকে চলে যায়, তখন দুধপান খুব কম করান মায়েরা। সেই সময় তাঁরা এই কাজা রোজা করতে পারেন। গর্ভবতী নারীদের বেলায় প্রথম তিন মাস এবং শেষের তিন মাস বাচ্চার জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়ায়। মাঝখানের তিন মাস তেমন একটা অসুবিধা হয় না। প্রথম তিন মাস বাচ্চাদের গর্ভে বৃদ্ধিটা কম হয়ে যায়, যদি রোজা রাখে। শেষের তিন মাস দেখা যায় বাচ্চার ওজন কমে যায়। এ জন্য গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রথম তিন মাস বা শেষের তিন মাসের মধ্যে যদি রোজা আসে, তাঁদের ক্ষেত্রে বলা হয়, তাঁরাও ওই রোজাকে এড়িয়ে গিয়ে প্রসব-পরবর্তী সময়ে তাঁরা একে কাজা হিসেবে করে নিতে পারেন। অথবা তখনো যদি না পারেন, যেমন একটি রোগী হয়তো উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, ডায়াবেটিসে ভুগছেন, সে ক্ষেত্রে যদি না করতে পারেন তখন কাফফারা দিতে পারেন।
প্রশ্ন : রোজা যদি রাখেন, সেই ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসের কিছু পরিবর্তন আনতে হবে, সেই বিষয়ে কিছু বলেন।
উত্তর : যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস আছে, তাঁরাও খাদ্যাভ্যাসের কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন। ওষুধের নিয়মের কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন। ওষুধের সময়টা তিন বেলার জায়গায় দুই বেলা করে নিতে পারেন। ইনসুলিনও দুই বেলা করে নিতে পারেন। অর্থাৎ সেহরির সময় ও ইফতারের সময় করে নিতে পারেন। উচ্চ রক্তচাপের রোগীও ওষুধ দুই বেলা করে নিতে পারবেন। অন্যান্য ওষুধ যেসন ভিটামিন থাকলে এগুলোও ভাগ করে নিতে পারবেন। আয়রন একবার বা দুবার খেতে পারবেন। এরকমভাবে ওষুধ ও ডোজকেও তারা ঠিক করে নিতে পারে।
আর খাবারের বিষয়টি যেটা বলেছি, সাধারণ একজন মানুষের মতো খেতে হবে। তবে তাঁদের বেলায় আমরা বলি কিছু ক্যালোরি বাড়িয়ে খেতে হয়। ভাজাপোড়া, ভাত এগুলো বেশি এড়িয়ে গিয়ে অন্যান্য খাবার দিয়ে যদি একে পূরণ করতে পারি তাহলে ভালো। অনেকে বলে মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে গেলে ভালো। কারণ, এতে এসিডিটি হয়। ভোর রাতে যখন আমরা খাই, তখন দেরিতে খাবার খাবে। খাবারের সঙ্গে সালাদ খাবে। রুটি খাবে, দুধ খেতে পারে। এসব খাবার হজম হতে বেশি সময় নেয়।
প্রশ্ন : অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় গর্ভবতী মায়েরা সেহরি খেতে চাচ্ছেন না বা ইফতারে অলসতা লাগছে, এটা কি পরে তার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে?
উত্তর: হ্যাঁ, ক্ষতি করে। এটা বাচ্চার ওপর প্রভাব ফেলে। মা যদি ওজনে বেশি হন, সেই ক্ষেত্রে সেগুলো প্রভাবিত হবে। তবে ওই সময়ও খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চা যেন ওই অবস্থাতেও খাবার কম না পায়। তখন বাচ্চার বৃদ্ধিতে গরমিল হয়ে যাবে। বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি ভালোভাবে হবে না। পেটের পানির পরিমাণ কমে যেতে পারে। এই জন্য প্রচুর পরিমাণ পানির দরকার হয়। বিশেষ করে গরমের দিন, আর্দ্রতা বেশি ওই ক্ষেত্রে পানির পরিমাণ কমে যায়। এই জন্য মাকে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
প্রশ্ন : রাতের খাবার কেমন হবে?
উত্তর : ইফতারের পরে মাগবিবের নামাজ পড়ে, তারাবি নামাজের আগে কিছু খেয়ে নিলে ভালো হয়। পরেও যদি মা নামাজ পড়েন, কোরআন পাঠ করেন, ১০-১১টা বেজে যায় তখনো কিছু খাবার খেয়ে নিতে পারেন। পাশাপাশি যাতে সেহরিতে সুষ্ঠুমতো খান।