রোজায় স্বাস্থ্য
রোজায় মুখ ও দাঁতের যত্ন যেভাবে করবেন

রোজায় মুখ ও দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা হয়। এ জন্য যত্ন নেওয়া জরুরি। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৪২১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনজারভেটিভ ডেন্টিস্টি অ্যান্ড এন্ডোডন্টিকস বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
urgentPhoto
প্রশ্ন : রমজান শুরু হয়ে গেছে ও চলছে। এই সময় অনেকেরই চিন্তা হলো মুখের এবং দাঁতের কীভাবে যত্ন নেওয়া যায়। যেহেতু অনেকটা সময় না খেয়ে থাকা এবং খাবার গ্রহণেরও একটি অন্য রকম পরিবর্তন চলে এসেছে। কী কী ধরনের যত্ন এই সময়ে নিতে হবে মুখের ও দাঁতের?
উত্তর : আসলে সামগ্রিকভাবে যদি আমরা বিষয়টি বিবেচনা করি, স্বাস্থ্যের একটি বড় অংশ মুখ। বলা হয়ে থাকে, মুখ হচ্ছে স্বাস্থ্যের প্রবেশদ্বার। স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে আমাদের খাদ্যগ্রহণ করতে হয়, পানীয় গ্রহণ করতে হয়। এই প্রক্রিয়াগুলো মুখের মাধ্যমেই সম্ভব। এগুলো করার কারণে মুখে অনেক সময় খাবার লেগে থাকে। সেগুলো আবার পরিষ্কার করারও একটি প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তা না হলে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
মাহে রমজানে দীর্ঘ সময় মানুষ খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থাকে। এই সময়ে শারীরিকভাবে কিছু পরিবর্তন আমাদের হয়। যেমন শরীরে পানির কিছু ঘাটতি ঘটে। সেই কারণেই দেখা যায় মুখ শুকিয়ে আসে। মুখের যে লালা, যাকে আমরা স্যালাইভা বলি; এটিও কমে যায়। কমে যাওয়ার কারণে ভেতরে স্বাস্থ্যগত যে পরিবর্তন হয়, এর কারণে ভেতরে শুষ্ক একটি পরিবেশ বিরাজ করে। এই শুষ্ক অবস্থা মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর একটি ব্যাপার। এই শুষ্ক অবস্থা তো কোনো কিছু খেয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়, যেহেতু রমজান চলছে।
আমরা যদি আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কথা চিন্তা করি, ১৪০০ বছর আগে একটি কথা বলেছেন, আমরা পাঁচ ওয়াক্ত যখন নামাজের জন্য যাই, তখন অজু করি, অজু করলে তখন মুখে তিনবার পানি দিতে হয়, এর আগে একটি কথা বলে দিয়েছে, সেটা কিন্তু পরিচর্যার বিষয়। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দাঁতের যত্নে মেসওয়াক করা হয়েছে। এই মেসওয়াক রমজানের সময় করলে কোনো ক্ষতি নেই। মেসওয়াক করলে দাঁত পরিষ্কার থাকে। এতে রোজার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। ১৪০০ বছর আগে যেই পদ্ধতিটি আবিষ্কৃত হয়েছিল সেটি ভালো। সেটা কতটুকু বৈজ্ঞানিক সেটাও প্রমাণিত হয়েছে ব্রাশিং এবং আমরা যে পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করি, সেটার সঙ্গে এর একটি তুলনামূলক পরীক্ষা করে। বিভিন্ন দেশেই এই পরীক্ষা হয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে দাঁত পরিষ্কারের বিষয় আসলে অজু যেভাবে করি, মেসওয়াক যেভাবে করি সেভাবে হচ্ছে। আরেকটি বিষয় হলো, ইফতারের সময় আমরা যেই খাবারগুলো খেয়ে থাকি—সেগুলো সাধারণত একটু ভারী খাবার, ভাজাপোড়া, তেলজাতীয় খাবার। সেই ক্ষেত্রে আমার সবার উদ্দেশে অবশ্যই একটি পরামর্শ থাকবে যে দিনে অন্তত দুবার দাঁত পরিষ্কার করতে হবে।
প্রশ্ন : এই যত্ন সঠিকভাবে না নিলে কী কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : একটা জিনিস খেয়াল করবেন, যারা রোজা রাখে তাদের মধ্যে বারবার থুতু ফেলার একটি প্রবণতা দেখা যায়। যদিও তখন স্যালাইভা কিন্তু খুব বেশি থাকে না। এটা কিন্তু অপ্রয়োজনীয়। কোনো প্রয়োজনও নেই। আমাদের প্রতিদিন যে এক থেকে দেড় লিটার স্যালাইভা তৈরি হয়, সেটা এমনিতে আমাদের পাকস্থলীতে বা খাদ্যনালিতে চলে যায় বা খাদ্যনালিতে চলে যায়।
রোজার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে বারবার থুতু ফেলাটাও কিন্তু একটি খারাপ দিক। কারণ, মানুষের মুখ গহ্বরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ জীবাণু থাকে। এখানে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস থাকে। এবং বলা আছে যে সাতশরও বেশি প্রজাতির জীবাণু মুখের মধ্যে বসবাস করে। সুতরাং বুঝতেই পারেন যে একটি কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা। তাই এই জায়গাটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা রমজানের সময় যেমন জরুরি, তেমনি রোজা না রেখেও জরুরি।
রোগীরা অনেক সময় অভিযোগ করে, মাড়িতে রক্তপাত হয়। মাড়ি দিয়ে একটু রক্ত পড়ল, রোজা আছে কি না? আবার কেউ বলে যে স্কেলিং করতে গেলে রোজা থাকবে কি না। আজকাল অনেক আল্ট্রাসোনিক বা যে ধরনের স্কেলার মেশিন চলে আসছে, ওগুলোতে রক্তপাত হয় না। রক্তহীন ও ব্যথাহীনভাবে করা যায়।
আর যাদের প্রদাহ আছে, যাকে আমরা বলি জিনজিভাইটিস বা মাড়ির প্রদাহ সেটি কিন্তু যত্নটা না করলে আরো বেশি বেড়ে যায়। সেখানে খাদ্যকণা জমে যায়। খাদ্যকণার মধ্যে ব্যাকটেরিয়া বা বিভিন্ন জীবাণু এসে একটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করে। এতে মাড়ির প্রদাহ, প্রদাহের কারণে রক্তপাত, মুখে দুর্গন্ধ ও নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সুতরাং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর বিষয়টি বেশির ভাগ নির্ভর করবে। আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ, এটা তো হাদিসেই বলা আছে।
রমজানের মধ্যে নয় শুধু, এর পরও মুখ ও দাঁতের যত্ন নেবেন আশা রাখছি। ভালো থাকবেন।