ডায়াবেটিস
পায়ের ক্ষত থেকে সাবধান

ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের বড় ধরনের বিপদের একটি পায়ে ক্ষত। এটি এতই মারাত্মক যে ছোট একটা পিন ফোটার কারণে গ্যাংগ্রিন হতে পারে। তখন সার্জারির মাধ্যমে পা কেটে ফেলতে হতে পারে। এ নিয়ে ভয় পাবেন না। একটু সচেতন থাকলে সহজেই এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
ক্ষত থেকে সাবধানে থাকতে বলার কারণ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ু ধ্বংস হয়ে যায়। পায়ে ছোটখাটো আঘাত, কাটাছেঁড়া বুঝতে পারেন না। খালি পায়ে হাঁটলে পায়ের নিচে নুড়ি-পাথরের মাধ্যমে ক্ষত হলেও বুঝতে পারেন না। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নেওয়ায় ক্ষতের আকার বাড়তেই থাকে। এ ছাড়া পায়ের রক্তনালি ধ্বংস হয় বলে রক্ত চলাচল কমে যাওয়ায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় ছোট ক্ষতও সহজেই সাড়ে না; বরং ব্যাকটেরিয়া সহজেই সংক্রমণ করতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলেও রক্ত চলাচল কম হয় বলে তা আক্রান্ত স্থানে পৌঁছে না। দেখা দেয় গ্যাংগ্রিন। একবার গ্যাংগ্রিন হলে পা কেটে ফেলে দেওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না। এটাই সবচেয়ে মারাত্মক।
গ্যাংগ্রিন প্রতিরোধ করতে আপনার সচেতনতাই যথেষ্ট। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ু ও রক্তনালি বেশি ধ্বংস হয়। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে পা পরীক্ষা করার অভ্যাস করুন।
পায়ে কোনো ক্ষত হোক না যত ছোট, পিনের খোঁচার মতো ক্ষত হলেও চিকিৎসা নিন। টাইট জুতা পরার কারণে পায়ে ক্ষত দেখা দিতে পারে। নতুন জুতা পরার পর যদি পায়ে লাল দাগ, ক্ষত, পানিযুক্ত দানা বা ব্লিস্টার ও পায়ে ব্যথা অনুভূত হয়, তাহলে ওই জুতা পরবেন না। সাইজ ঠিক রেখে জুতা পরুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ধূমপান করলে পায়ের ছোট ছোট রক্তনালি সহজেই ধ্বংস হয়। ধূমপান আজই বাদ দিন। কোনো কিছু দিয়ে কেটে যাওয়ার আগেই সচেতন হোন। ধারালো জিনিসপত্র যেখানে-সেখানে রাখবেন না। রাতে চলাচলের সময় লাইট ব্যবহার করুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। এতে পায়ে রক্ত চলাচল যেমন বাড়বে, তেমনি ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। নখ কাটার সময় সাবধান থাকবেন। নখ খুব ছোট করে না কেটে একটু বড় রাখুন। চোখে দেখতে সমস্যা হলে অন্যকে দিয়ে নখ কাটান। ডায়াবেটিস আক্রান্তের পায়ের ঘামগ্রন্থি ও তেলগ্রন্থির নিঃসরণ কম থাকে বলে সহেজই পা শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়। এটি প্রতিরোধ করতে ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম পায়ে ব্যবহার করুন। আঙুলের ফাঁকায় ক্রিম লাগাবেন না। পায়ে কোনো ইনফেকশন দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
লেখক : মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।