কারা রক্ত দিতে পারবেন না

শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতায় রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়। তবে রক্ত নেওয়া ও দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। নয়তো এটি থেকে রোগ ছড়াতে পারে।
আজ ১ ফেব্রুয়ারি, এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২৮৪তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. তাশমিম ফারহানা দীপ্তা। বর্তমানে তিনি বারডেম জেনারেল হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি এবং ট্রান্সফিউশনের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : রক্ত পরিসঞ্চালন বা ব্লাড ট্রান্সফিউশন বলতে আমরা কী বুঝি?
উত্তর : রক্ত পরিসঞ্চালন তাঁদেরই দরকার হয়, যাঁদের কোনো ওষুধ বা অন্য কোনো থেরাপিউটিক কারণ ছাড়া শুধু রক্ত এবং রক্তজাত উপাদান সামগ্রী দিয়েই জীবন বাঁচাতে হয়। মূলত এঁদেরই রক্ত পরিসঞ্চালনের প্রয়োজন।
প্রশ্ন : রক্ত দেওয়ার সময় কোন কোন বিষয় মাথায় রাখা উচিত?
উত্তর : যে রক্ত দিচ্ছেন, তাঁকে অবশ্যই সুস্থ হতে হবে। কিছু রোগ রয়েছে, যেমন—হার্টের অসুখ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি—এসব সমস্যা থাকলে রক্ত দেওয়া যাবে না। যিনি রক্ত দিচ্ছেন, তিনি রক্তের ক্যানসারের রোগী হলে চলবে না। এ ছাড়া ডায়াবেটিক রোগীরা এবং যাঁরা ডায়েট করেন, তাঁরা শুরুর দিকে দিতে পারলেও পরে দেওয়াটা ঠিক হবে না।
প্রশ্ন : যদিও মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে, তার পরও রক্তদানের প্রতি অনেকেই অনাগ্রহী হয়ে পড়েন। এটি কেন?
উত্তর : আসলে আমাদের ভয়টা কিন্তু সুচের ভয়। মনে রাখতে হবে, সবচেয়ে বড় কাজ হলো অন্যকে সাহায্য করা। রক্ত সাধারণত শরীরে চার মাসের বেশি থাকে না। নতুন কোষ গঠিত হয়। কাজেই আমরা যদি এটি দান করি, একটি শিশু বা অসুস্থ মানুষকে বাঁচাতে পারি, এর চেয়ে বড় উপহার আর কিছু হয় না।
এ ছাড়া যিনি রক্তদান করছেন, তাঁরও কিন্তু কিছু স্ক্রিন আউট হয়। এটি একটি প্যাকেজের আওতায় হয় বলে স্বল্পমূল্যের হয়। এখানে পাঁচটি অসুখের নিরক্ষণ হয়। সেই পাঁচটি অসুখ থেকে দূরে আছেন কি না, সেটিও বুঝতে পারেন। এগুলো হলো : এইডস, হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস, হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস, ম্যালেরিয়া ও সিফিলিস। এই পাঁচটি অসুখ থেকে ব্যক্তি মুক্ত কি না, সেটি তিনি জানতে পারেন। এ ছাড়া তাঁর শরীরে কোনো ক্ষতিকর অ্যান্টিবডি আছে কি না, সেটি সম্পর্কেও তিনি জানতে পারেন। রক্ত দিলে একজন ব্যক্তির বোনম্যারু উদ্দীপ্ত হয়। তাঁর নতুন কোষ তৈরি হয়। বলতে পারেন, যিনি দিচ্ছেন, তিনিও নতুন জীবন লাভ করেন। এতে একই সঙ্গে দুজনেরই উপকার হচ্ছে। যিনি নিচ্ছেন, তাঁরও উপকার হচ্ছে। যিনি দিচ্ছেন, তাঁরও হচ্ছে। গাছে নতুন পাতার মতো উনি নতুন হয়ে উঠতে পারেন।
প্রশ্ন : রক্ত পরিসঞ্চালনের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের কোন কোন বিষয় মাথায় রাখা উচিত? কারণ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এই রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে অনেক রোগ ছড়িয়ে যেতে পারে। এটি দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি।
উত্তর : অবশ্যই রক্তকে শতভাগ স্ক্রিনিং করে নিতে হবে। বিশেষ করে এই পাঁচটি অসুখ আছে কি না দেখে নিতে হবে। তবে রক্তের আরো অনেক অসুখ রয়েছে। একেকটি দেশের একেকটি মাপকাঠি অনুযায়ী এটি করা হয়, যেমন : আমাদের দেশে ম্যালেরিয়া আছে কি না, সেটি দেখা হয়। অনেক দেশে ক্যানসার ছড়ায় রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে। আমাদের দেশে আবার এটির প্রাদুর্ভাব কম। তাই বিভিন্ন দেশ অনুযায়ী অসুখের স্ক্রিনিং করার বিষয়ও ভিন্ন হয়।
তা ছাড়া রক্তকে অবশ্যই ক্রস ম্যাচিং টেস্ট করে নিতে হবে। আরেকটি জিনিস দেখতে হবে, এই রক্ত যেন জীবাণু আক্রান্ত না হয়।
রক্ত নেওয়ার বিষয় থেকে শুরু করে রোগীর শরীরে ভরা পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায় যেন সঠিক এবং গুণগত মান বজায় থাকে, সেটি খেয়াল করতে হবে। গুণগত মান কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। রক্তের ব্যাগ আমরা যে ফ্রিজে রাখি, সেটি কিন্তু স্বাভাবিক ফ্রিজ নয়।
আরেকটি হলো, কোথাও হয়তো ভলান্টেয়ারি রক্ত সঞ্চালন হলো, তার পর রক্তকে যখন ল্যাবে নিয়ে আসা হবে, তখনো কিন্তু চেইন মেনেই আনতে হবে।
প্রশ্ন : সবাই কি চাইলে রক্ত দিতে পারেন?
উত্তর : রক্ত দিতে হলে সাধারণত ৫০ কেজি ওজন হতে হবে। ১৮ বছরের ওপরের মানুষ যাঁরা নিজের স্বাক্ষর দিতে পারেন, তাঁরা দিতে পারবেন। যারা শিশু, তারা রক্ত দিতে পারবে না।
আরেকটি জিনিসের প্রবণতা আমাদের দেশে আছে। আমরা আত্মীয় বা চেনাজানার মধ্যে রক্ত নিতে পছন্দ করি। তবে এর উদ্দেশ্য হতে হবে শতভাগ স্বেচ্ছায় রক্তদান।
আমি কাকে রক্ত দেব, জানব না। তখনই আমি সঠিক রক্ত দিতে পারব। যখন আপনি পরিচিত লোককে রক্ত দেবেন, তখন মানসিক সীমাবদ্ধতাও চলে আসে। আসলে দান তো হবে নিঃস্বার্থভাবে।