শিশুর জন্মগত ত্রুটির সার্জিক্যাল চিকিৎসা

বিভিন্ন ধরনের জন্মগত ত্রুটি নিয়ে একটি শিশু জন্মগ্রহণ করতে পারে। তবে অধিকাংশ জন্মগত ত্রুটি ঠিক করার জন্যই চিকিৎসা রয়েছে। আজ ১৮ জানুয়ারি এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২৭০ তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. এম কবিরুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি ঢাকা শিশু হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : শিশুর কী কী জন্মগত ত্রুটি হতে পারে?
উত্তর : শিশুর জন্মগত ত্রুটি মাথা থেকে নিয়ে একদম পা পর্যন্ত হতে পারে। যেকোনো একটি জায়গায় হতে পারে। মাথায় যদি হয় তাহলে হয়তো মস্তিষ্কে পানি জমে যায়। মস্তিষ্কে পানি থাকে যাতে নড়াচড়া করার সময় কোনো আঘাত না পায়, সেখানে যদি কোনো রাস্তায় ব্লক থাকে, সেখানে পানি একটু বেশি জমে যাবে।
এরপর আমাদের মাথায় অনেকগুলো হাড় আছে, সেগুলো একসঙ্গে থাকে, ওখানে কিছু একটা ফাঁকা থেকে কিছু জিনিস যদি বের হয়ে আসে, মগজ বেরিয়ে আসতে পারে,পানি বেরিয়ে আসতে পারে। গলার এখানে খাদ্যনালি তৈরি হয় না। বা খাদ্যনালি গিয়ে শ্বাসনালিতে যোগ হতে পারে। একে ফিস্টুলা বলে। এগুলো আপনাকে আগেভাগেই করতে হবে। আর পেটের মাঝখানে অনেক নাড়ি রয়েছে, সেগুলো উল্টো থাকতে পারে। নাড়ি তৈরি হতে পারে না। পেটের সামনের দিকে অনেক ফাঁকা থাকে। ওখান থেকে বের হয়েও আসে না। তবে সব সমস্যারই চিকিৎসা রয়েছে। কোনোটির চিকিৎসা বাদ নেই। যত আগে আসবেন বাচ্চারাও তত ভালো থাকবে। তবে আমাদের এখানে সাধারণত আমরা অনেক দেরি করে আসি চিকিৎসকের কাছে। মনে করি হয়তো বাচ্চা ধীরে ধীরে পরে সুস্থ হবে।urgentPhoto
অনেক চিকিৎসকই বলেন, আরেকটু দেরি করে যান। সেটা আসলে ভুল। কারণ, বাচ্চা তখন যা খাচ্ছে সেটি শরীর আর রাখছে না। এর কারণ বাচ্চা পানিশূন্যতা হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। সেই বাচ্চার পুষ্টির অভাব হচ্ছে। সেগুলো সব কিছুরই একটি বিরাট কারণ সার্জারি করার জন্য।
প্রশ্ন : শিশু যখন গর্ভাবস্থায় থাকে, আমরা কি তখন জানতে পারি সে ত্রুটি নিয়ে জন্মাচ্ছে কি না?
উত্তর : আমাদের দেশে আলট্রাসনোগ্রামের ক্ষেত্রে যদি খুব বিশেষজ্ঞ আলট্রাসনোগ্রাফিস্ট হন, তাহলে ওনারা অনেক সময় বের করতে পারেন। সেই প্রতিবেদন অনুসারে যখন শিশুটি প্রসব হয়, তখন পেডিয়াট্রিক সার্জন ডাকেন। অনেক সময় গাইনোকলোজিস্টরা পাঠিয়ে দেন।
প্রশ্ন : আপনি যে সমস্যাগুলোর কথা বললেন, তার সবগুলোই কি সার্জারি করে ঠিক করা সম্ভব?
উত্তর : বেশির ভাগই সার্জারির মাধ্যমে ঠিক করা সম্ভব। যে সমস্যাই হোক যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন, ততই আপনার বাচ্চার জন্য সুবিধা।
প্রশ্ন : জন্মগত ত্রুটির সবই তো জন্মের শুরুতে বোঝা যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে কী কী বিষয় লক্ষ রাখলে মা বুঝতে পারবেন বাচ্চাটি ত্রুটিপূর্ণ?
উত্তর : বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আসলে সমস্যাটি বোঝা যায়। বাচ্চা জন্মের সঙ্গে সঙ্গে যতগুলো স্বাভাবিকভাবে খোলার বিষয় আছে, যেমন চোখ খোলার বিষয় রয়েছে। চোখটা দেখলেন, চোখে কোনো অসুবিধা রয়েছে কি না। নাকের ভেতর টিউব ঢুকিয়ে দেখা হয় কোনো সমস্যা আছে কি না। তারপর গলার ভেতর দিয়ে টিউব ঢুকিয়ে পাকস্থলী পর্যন্ত নেবেন, দেখবেন এটি ঠিক আছে কি না।
এরপর প্রস্রাবের রাস্তাটি দেখবেন, পায়খানার রাস্তা দেখবেন- এগুলো যদি স্বাভাবিক থাকে, তাহলে অনেকটা নিরাপদ হয়ে গেল। এখন যদি ধরেন টিউব ঢোকাতে পারছি না। তার মানে এখানে ব্লক রয়েছে। তাহলে আপনার দ্রুত কোনো সার্জনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
আমরা ইদানীং বেশি যেটি পাই শিশু হাসপাতালে, পায়খানার রাস্তায় রাস্তা তৈরি হয় না। সেই জায়গায় যদি দেখেন কোনো পায়খানার রাস্তা নাই বা আছে সামান্য সুরু- সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর কিছু রয়েছে যেটি হয়তো পড়ে ধরা পড়বে। দেখা যাবে, আপনার হয়তো নাড়িতে কোনো সমস্যা রয়েছে। দেখা যাবে বাচ্চা খাচ্ছে। তবে পায়খানা ঠিকমতো হচ্ছে না। আস্তে আস্তে পেটটা ফুলে যাচ্ছে। বেশির ভাগ বিষয়গুলোই কিন্তু জন্মের সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায়। তার হাত বাঁকা আছে কি না। পা বাঁকা আছে কি না। এগুলো সবই বোঝা যায়।
প্রশ্ন : এই সব সমস্যাগুলো নিয়ে একজন পেডিয়াট্রিক সার্জনের কাছে যাওয়ার সঠিক সময় কোনটি?
উত্তর : আসলে যত আগে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া হবে তত ভালো।
প্রশ্ন : আগে না হলে কী কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : বাচ্চা খাচ্ছে তবে তার স্বাভাবিক পায়খানা হচ্ছে না- এই সমস্যা হতে পারে। এগুলো তো পেটের ভেতর জমবে। আস্তে আস্তে পেটের নাড়ি ফুলবে। পেট বড় হবে। বা কোনো জায়গায় যদি নাড়িতে ফুটো থাকে, বা কোনো জায়গায় যদি নাড়ি প্যাঁচ খেয়ে থাকে, নাড়ি পচে গেল যতই খাবে ততই পেটের ভেতরেই জমতে থাকবে। সে জন্য আগে যেতে হবে।
অনেক সময় আমরা গ্রামের দিকে পাই, চিকিৎসকের কাছে গেলেও হয়তো চিকিৎসক বলেন ওষুধ খাওয়ান আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। এমন সময়ে হয়তো আসে যে কিছু করার থাকে না। অনেক সময় দেখা যায় নাড়ি সবগুলো পচে কালো হয়ে গেছে। তখন এগুলো তো আমরা রাখতে পারব না। এগুলো আমাদের ফেলে দিতে হয়। এখন নাড়ি ফেলে দিলে বাচ্চা বাঁচবে কী করে?- এ ধরনের সমস্যা হয়। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা ভালো।
প্রশ্ন : সার্জারির ক্ষেত্রে আমরা যদি বলি, প্রি অপারেটিভ প্রস্তুতির কথা-এগুলো বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কীভাবে কী করা হয়?
উত্তর : প্রি অপারেটিভ বিষয়টি নির্ভর করে অনেক বয়সের ওপরে। পেডিয়াট্রিক সার্জারি জন্ম থেকে নিয়ে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত। এখন অস্ত্রোপচার করলে অন্তত চার থেকে ছয় ঘণ্টা খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এখন ছয় মাসের বাচ্চাকে তো ছয় ঘণ্টা খাবার বন্ধ রাখা যাবে না। এ জন্য আমরা একটি স্যালাইন লাগিয়ে দিই। আর যদি বড় বাচ্চা হয়, তখন তো সেই ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা পাওয়াই যায়। বাচ্চার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয় রয়েছে। বড় বাচ্চার ক্ষেত্রে আমরা বলি সেদিন সকাল বেলা সাবান দিয়ে বাচ্চাকে পরিষ্কার করাবেন। বয়সের সঙ্গে নির্ভর করবে অস্ত্রোপচারের আগের বিষয়গুলো। মূল কাজ হলো তাকে না খাইয়ে রাখা। আমার আগে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক নিতে হবে। নাড়ির যে ব্যাকটেরিয়া আছে, সেগুলো আমাকে ঠিক করতে হবে। এমন কিছু প্রস্তুতি নিতে হয়।