দাঁতের মাড়িতে যখন পেরিকরোনাইটিস

পেরিকরোনাইটিস একটি প্রদাহজনিত রোগ, যা দাঁতের ওপরে লেগে থাকা মাড়িতে হয়ে থাকে। সাধারণত আমাদের নিচের মাড়িতে যখন ৮ নম্বর দাঁত বা আক্কেল দাঁত ওঠার সময় হয় (১৭-২৪ বছর বয়সে), তখন দাঁতটি সঠিকভাবে না উঠে কিছুটা আড়াআড়িভাবে উঠতে থাকে—দাঁতের নিচের অংশ হাড়ের সঙ্গে লেগে থাকে এবং ওপরের অংশ মাড়ির দ্বারা আবৃত থাকে। পুরুষ ও নারী সবারই এই রোগ হতে পারে।
কোথায় হয়
আগেই উল্লেখ করেছি, নিচের মাড়ির ৮ নম্বর দাঁতের অংশে হয়। তা ছাড়া ওপরের মাড়ির ৮ নম্বর দাঁতে এবং কোনো কোনো সময় ৬ ও ৭ নম্বর দাঁতের অবস্থানের দিকেও হতে পারে।
লক্ষণ
১. তীব্র ব্যথা এবং আক্রান্ত স্থান ফুলে যেতে পারে।
২. আক্রান্ত স্থান লালচে বর্ণের হতে পারে।
৩. খাবার চিবুতে অসুবিধা হতে পারে।
৪. মাড়ি নাড়াচাড়া করতে অসুবিধা হতে পারে।
৫. হাঁ করতে অসুবিধা হতে পারে।
৬. মুখ ফুলে যেতে পারে।
৭. খাবার গিলতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কারণ
নিচের মাড়ির ৮ নম্বর দাঁত যখন আড়াআড়িভাবে ওঠে, তখন দাঁতের ওপরের অংশে মাড়ি দ্বারা আবৃত থাকে। আবৃত মাড়ির ভেতরে খাদ্যকণা গিয়ে আটকে থাকে এবং একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যাকটেরিয়া প্রধানত, এর সাহায্যে ওই জায়গায় ইনফেকশন তৈরি হয়, তখনই রোগীরা দাঁতের মাড়িতে তীব্র ব্যথা অনুভব করতে পারে। এ ছাড়া ওপরের মাড়ির ক্ষেত্রে খাদ্য খাওয়ার সময় দাঁত ও মাড়িতে ঘর্ষণের ফলে দাঁতের মাড়িতে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে।
রোগের পরবর্তী তীব্রতা
রোগী ব্যথা অনুভব করলে যত দ্রুত সম্ভব ডেন্টাল সার্জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। আমাদের দেশের রোগীরা সাধারণত ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ না করে কোনো ফার্মেসিতে গিয়ে ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে ব্যথা উপশম করে। কিন্তু সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না করলে এই রোগ জটিল আকার ধারণ করতে পারে, যেমন—১. সেলুলাইটিস, ২. এলভিওলার অ্যাবসেস (মাড়িতে পুঁজ), ৩. অস্টিওমাওলাইটস (হাড়ে প্রদাহ রোগ) দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা
খুব সহজেই এবং নিরাপদভাবে এই রোগের চিকিৎসা করা যায়। এর ব্যয়ও অনেক কম। প্রথমে একটি এক্স-রে নিতে হবে। এক্স-রেতে যদি বোঝা যায় যে দাঁত ওঠার পর্যাপ্ত জায়গা আছে, শুধু মাড়ির বাধার কারণে উঠতে পারছে না, তাহলে আবৃত দাঁতের উপরি ভাগে লেগে থাকা মাড়ি কেটে ফেলতে হবে। স্যালাইনের পানি দিয়ে জায়গাটি পরিষ্কার করতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক এবং ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করতে হবে।
আর যদি দাঁত মাড়ির সঙ্গে লেগে থাকে এবং মনে হয় দাঁতটি আর স্বাভাবিকভাবে উঠবে না, তাহলে দাঁতটি ফেলে দিতে হবে।
লেখক : ডেন্টাল সার্জন