শিশুদের যেসব হৃদরোগ হয়
কেবল বড়দের নয়, শিশুদেরও হতে পারে হৃদরোগ। অনেক শিশুর জন্মগতভাবে হৃদরোগ হয়। আবার অনেকের বড় হয়ে এই সমস্যা হতে পারে।
শিশুদের হৃদরোগের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৩৮৬তম পর্বে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. নুরুন্নাহার ফাতেমা। বর্তমানে তিনি ল্যাব এইড হাসপাতালের শিশু কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : শিশুরা সাধারণত কোন কোন হৃদরোগ জনিত সমস্যায় ভুগে থাকে?
উত্তর : শিশুদের হৃদরোগ আসলে দুই রকম হয়। তারা জন্মগ্রহণ করে যে হৃদরোগ নিয়ে, সেটি একরকমের। আরেকটি হলো, পরে তাদের হতে পারে। জন্মের সময় ছিল না পরে হয়ে যায়।
জন্মগত হৃদরোগের মধ্যে হার্টে বিভিন্ন ছিদ্র, রক্তনালি চিকন অথবা ভাল্ভ চিকন, এরকম হয়। অথবা সংযোগের ক্ষেত্রে দেখা যায়, উল্টোপাল্টা সংযোগ। ডান দিকের হার্টের সঙ্গে হয়তো বাম দিকে সংযোগ হয়নি। আবার বাম দিকের সঙ্গে হয়তো ডান দিকের সংযোগ হয়নি। এ রকম অনেক জটিল জটিল বিষয় হতে পারে। তৃতীয় সপ্তাহের গর্ভাবস্থার সময় থেকে হার্ট তৈরি হতে থাকে। তখন থেকে এর মধ্যে যদি কোনো ধরনের সমস্যা হয়, পরিবেশগত কোনো সমস্যা হতে পারে, মায়ের মানসিক কোনো সমস্যা হতে পারে। অথবা যেকোনো বিষয় যদি ওই সময় মাকে প্রভাবিত করে, তাহলে সেখান থেকে জন্মগত হৃদরোগের উৎপত্তি হয়। এটাতো জন্মের পর থেকে বোঝা যায়। কারো কারো হয়তো একটু দেরি করে প্রকাশ পায়। আবার কারো বড় বয়সেও প্রকাশ পায়। এটি হলো কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ।
আরেকটি হলো অ্যাকোয়ার্ড হার্ট ডিজিজ। অ্যাকোয়ার্ড হার্ট ডিজিজ অনেক সময় অনেক নবজাতকেরও হয়ে যায়। যেমন : এরিদমিয়া বলে একটি বিষয় রয়েছে। হার্ট বিট অনেক বেড়ে গেল। অনেক নবজাতক আমাদের কাছে ২০০ থেকে ৩০০ হার্ট রেট নিয়ে আসে। দেখা যায়, এত হৃদস্পন্দন যে গণনাই করা যায় না। এটি নবজাতকদের মধ্যে খুব প্রচলিত। অনেকে হয়তো বিষয়টি খেয়াল করে না। তখন দেখা যায়, এতো দ্রুত হার্ট চলতে চলতে হার্ট ফেইল হয়ে যায়। আমাদের কাছে আসে ডাইলাইটেড হার্ট নিয়ে। বিরাট বড় একটি হার্ট। তখন অনেকে কারণটি না খুঁজে হার্ট ফেইলিউরের চিকিৎসা শুরু করে দেয়। কিন্তু তার যেই কারণটি রয়েছে, এর চিকিৎসা না করলে কিন্তু বাচ্চাটি মারা যাবে। এটি জটিল। তবে চিকিৎসা করলে আবার খুব সহজ।
প্রশ্ন : এর কি কোনো উপসর্গ রয়েছে?
উত্তর : বাচ্চা খুব বিরামহীন লাগবে। হার্ট থেকে ভালো মতো রক্ত বের হচ্ছে না। সেটা কিন্তু মাথা থেকে পা পর্যন্ত ভালো মতো পৌঁছাচ্ছে না। এই কারণে প্রত্যেক জায়গায় তার ঘাটতি হচ্ছে। একেই বলে হার্ট ফেইলিউর। এই সময় বাচ্চারা ক্লান্ত হয়ে যায়, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে থাকে, কান্নাকাটি করতে থাকে, বিরক্তি প্রকাশ করে। দেখা যায়, কাঁদছে কেন কারণটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ছাড়া কার্ডিওমায়োপ্যাথি বলে একটি রোগ রয়েছে। অনেক বাচ্চার ক্ষেত্রেই আমরা এটি পাই, বড়দেরও পাই। এটি পেশির রোগ। পেশিগুলো হয়তো খুব শিথিল হয়ে গেল আবার খুব আটসাঁট হয়ে গেল।
প্রশ্ন : এটি শিশুদের ক্ষেত্রে কোন বয়সে পাওয়া যায়?
উত্তর : এটি যেকোনো বয়সেই পাওয়া যায়। সাধারণত এটা হতে হতে একটু সময় লাগে। যেসব মায়েদের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকে, তাদের শিশুদের এই সমস্যাটা বেশি পাওয়া যায়। এ ছাড়াও অ্যাকোয়ার্ড হার্ট ডিজিজের মধ্যে আমরা এখন পাই কাউয়াসাকি ডিজিজ। আগে একে হাম হয়েছে ভেবে অনেকে ভুল করতো। কিন্তু এখন দেখা যায় র্যাশ, জ্বর নিয়ে যেসব বাচ্চা আসে, তাদের কাউয়াসাকি ডিজিজ পাওয়া যায়। এটি একটি জাপানি রোগ। তবে আমাদের দেশে এখন প্রচুর হচ্ছে। এই কারণে ছোট বাচ্চাদেরও বড়দের মতো হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
আমরা জানি, ছোট বাচ্চাদের করনারি আর্টারি রোগগুলো হয় না। কিন্তু এই কাউয়াসাকি রোগের ক্ষেত্রে তাদের আবার হার্টের রোগও হয়।
প্রশ্ন : উপসর্গগুলো কী?
উত্তর : বাচ্চাদের খুব উচ্চ মাত্রার জ্বর থাকবে। যেকোনো বাচ্চার পাঁচ দিনের উচ্চ মাত্রার জ্বর থাকে। চোখটা লাল হয়ে গেল। জিহ্বার রঙটা স্ট্রোবেরির মতো হয়ে যাবে। আবার র্যাশ থেকে চামড়া উঠা শুরু করবে। দেখা যাবে হাত- পায়ের চামড়া উঠছে। এ ধরনের কিছু বিষয় পাওয়া গেলে বুঝতে হবে এটি কাউয়াসাকি ডিজিজ। একেবারেই দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। গিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই ইকো কার্ডিওগ্রাফি করতে হবে। করোনারি আর্টারি চেক করতে হবে। এর একটি প্রতিশেধক রয়েছে। ইন্ট্রাভেনাস ইমোনোগ্লোবিন থেরাপি। এটি দিলে করনারির যুক্ত হওয়াকে প্রতিরোধ করা যায়। এগুলো হলো অ্যাকোয়ার্ড হার্ট ডিজিজ। এ ছাড়া বাচ্চাদের হাইপার কোলেস্টেরোলোমিয়াও হতে পারে। অনেক পরিবারে কোলেস্টেল উচ্চ থাকে। এটা থেকে হতে পারে।
আবার অনেক বাচ্চার উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। আবার আজকাল অনেক বাচ্চা স্থূল হয়ে যাচ্ছে। এই বাচ্চাগুলোর উচ্চ রক্তচাপও হচ্ছে, পাশাপাশি ডায়াবেটিসও হয়ে যাচ্ছে। শুকিয়ে যাওয়া বাচ্চার তুলনায় স্থূল বাচ্চা বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। তাদের অ্যাজমা হতে পারে। অনেকের দেখা যায়, ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা হয়ে যাচ্ছে। ওরা অনেক বেশি রোগব্যাধি প্রবণ হয়।