নারীদের অনিয়মিত রক্তস্রাব কেন হয়?

ঋতুস্রাব নারী শরীরের একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। তবে কখনো কখনো অনেকে অনিয়মিত রক্তস্রাবের সমস্যায় ভোগেন। এর কারণ কী?
এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩১০৯তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. নাজনীন রশীদ শিউলী। বর্তমানে তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : নারীদের অনিয়মিত রক্তস্রাবের কারণ কী?
উত্তর : এই রোগীরা বেশিরভাগ সময় গাইনি চিকিৎসকের কাছে আসে। বেশিরভাগ বিষয়ই গাইনোকোলজিক্যাল কারণে থাকে। রিপ্রোডাকটিভ (প্রজনন) বয়সের একজন নারী যদি আসেন, তার প্রচলিত কারণ হলো, জরায়ুর টিউমার। তার জরায়ুতে টিউমার হতে পারে। যেমন : ফ্রাইব্রয়েড। যেমন : ক্যানসার ও নন-ক্যানসার। ক্যানসার নয়, এ রকম টিউমারও হয়। যেমন : ফাইব্রয়েড ইউট্রাস। এটি অনেক প্রচলিত। আরেকটি হতে পারে অ্যাডিনোমায়োসিস। এটা যেহেতু মেডিকেল টার্ম। তবে আমি দর্শকদের জন্য বুঝিয়ে বলছি। জরায়ুর ভেতরের স্তরের যে কোষগুলো এগুলো কোনো কারণে তার মাঝের স্তরে চলে যেতে পারে। সে সময় যখন তার ঋতুস্রাব হবে, মাঝের স্তরের যে কোষগুলো চলে গেল, সেগুলো একটা চাপের সৃষ্টি করে, ব্যথার সৃষ্টি করে। মারাত্মক ব্যথা নিয়ে আসে এই রোগীগুলো। অ্যাডিনোমায়োসিস যাদের তাদের ম্যানোরেজিয়া থাকতে পারে। ম্যানোরেজিয়া মানে হলো তার চক্র ঠিক রয়েছে, নিয়মিত বিরতি দিয়ে হচ্ছে, তবে তার অনেক দিন থাকছে। অথবা তার রক্তের স্রাবটা অনেক বেশি হচ্ছে। আগে তিনি হয়তো তিনটি প্যাড ব্যবহার করছেন, এখন হয়তো ছয়টা থেকে আটটা প্যাড ব্যবহার করছেন। এটা দিয়েও আমরা অনেক সময় নির্ণয় করি। রোগী জটিল রক্তস্বল্পতা নিয়ে আসতে পারে, দুর্বলতা নিয়ে আসতে পারে। সে এসে বলে আমার অনেক রক্ত যায়। অনেকে চাকা চাকা যায়। অনেক ব্যথা হয়। অনেক বেশি হয়, বেশি দিন থাকে। কেউ কেউ দুটো সমস্যা নিয়ে আসতে পারে। এটা প্যালভিক ইনফ্লামেটোরি রোগ। এর মানে জরায়ুর আশপাশে জরায়ুসহ তার একটি প্রদাহযুক্ত অবস্থা হয়। এরপর হতে পারে অ্যান্ড্রোমেট্রোসিস। ভেতরের স্তরগুলো বাইরে গিয়ে, আশপাশে বের হয়ে সেখানে হতে পারে। সেখানে রক্তপাত হতে পারে। এখানে একটি থকথকে অবস্থা তৈরি হয়, সেখানে ব্যথা হয় এবং আশপাশের গঠনগুলো যেগুলো রয়েছে, যেখানে একটি জটিলতা তৈরি হয়। এটাকে আমরা অ্যান্ডোমেট্রিওসিস বলি। এরপর তার সংক্রমণ হতে পারে। সংক্রমণের কথা বললাম, সেটি হতে পারে। এরপর তার ওভারিয়ান টিউমারের কারণে হতে পারে। তবে এই কারণে রক্তপাত খুব কম সময়ে হয়। সাধারণত এসব কারণে আমাদের রক্তপাত হতে পারে। এর বাইরে কিছু সিস্টেমিক কারণে অনিয়মিত রক্তস্রাব হতে পারে।
প্রশ্ন : আমাদের শিশুকন্যাদের বেলায় যাদের রিপ্রোডাকটিভ বয়স শুরু হয়নি, তাদের বেলায় কখনো কখনো মায়েরা এই সমস্যা অনুভব করেন এবং আপনাদের কাছে নিয়ে আসেন। এর কারণ কী এবং করণীয় কী?
উত্তর : এটা খুবই প্রচলিত যে প্রিভারটি মেনোরেজিয়া বা অ্যাডোলোসেন্স মেনোরেজিয়া। তার ঋতুস্রাব তো ৯ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে হতে পারে। দেখা যায়, তার প্রথম দুই থেকে তিন বছর, তার যে একটি চক্র রয়েছে, সেটি প্রতিষ্ঠিত হতে কারো কারো কিছু সময় লাগে। অনেক বয়ঃসন্ধিরাই এতে আক্রান্ত হয়। একে বলা হয় পিবারটি মেনোরেজিয়া। তার বেশি রক্তপাত হতে পারে। নিয়মিত চক্র হতে পারে। এই মায়েরা আসলে প্রথমে কাউন্সেলিং করে দেওয়া ভালো। কিছু স্বাভাবিক ওষুধ দিয়ে দিলে তার সেটি ভালো পর্যায়ে ফিরে যেতে পারে। তবে এটি খুবই প্রচলিত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই শিশুগুলোর ভর্তিও হওয়া লাগে, এত গুরুতরভাবে আক্রান্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমাদের হয়তো একটু বেশি ওষুধ দিতে হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা এগুলো ধারণা করতে পারি, এরপর আমরা দেখব যে এদের হেমাটোলজিক্যাল কোনো ডিজঅর্ডার রয়েছে কি না। রক্ত কণিকায় কোনো ঝামেলা থাকতে পারে। অথবা তার থাইরয়েড ডিসফাংশন থাকতে পারে। এই জিনিসগুলো আমাদের তখন বের করে নিতে হবে। আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং ও স্বাভাবিক ওষুধ দিয়ে আমরা তাদের সুস্থ করে দিতে পারি।