জটিল ভাইরাস জ্বর, কীভাবে বুঝবেন?

ভাইরাস জ্বর এখন সাধারণ থেকে জটিল । কীভাবে বুঝবেন সাধারণ ভাইরাস জ্বর হয়েছে, না কি জটিল জ্বর হয়েছে? এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৮১১তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. কে এফ এম আয়াজ। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : কী লক্ষণ দেখলে বোঝা যাবে, সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বর না কি জটিল কোনো জ্বর?
উত্তর : আমরা যেভাবেই চিন্তা করি না কেন জ্বরের প্রথম লক্ষণ কিন্তু একই রকম। ভাইরাস জ্বরে সাধারণত প্রথমেই জ্বর অনেক বেশি আসে। প্রথম থেকে দেখা যায় জ্বরটা শুরু হয়। জ্বরের মাত্রা থাকে অনেক। প্রায় ১০৩/১০৪-এ উঠে যাচ্ছে। জ্বর কমানোর ওষুধ যেগুলো রয়েছে বাজারে প্যারাসিটামল দলের, সেগুলো খাচ্ছেন। তবে জ্বরটা বেজ লাইন স্পর্শ করতে চাচ্ছে না। রোগী খুব আতঙ্কিত। দেখা যায় রোগীর স্বাভাবিক অবস্থারও অবনতি হতে থাকে। যেহেতু রোগীর জ্বর বেশি থাকে। তার ভালো লাগে না। এর সঙ্গে ব্যথা থাকতে পারে। নাক দিয়ে পানি ঝরতে পারে, কাশি হতে পারে। কখনো কখনো শ্বাসতন্ত্রকে যুক্ত করে। দীর্ঘ সময় ধরে জ্বরটা একই রকমভাবে চলছে। জ্বরের সঙ্গে অন্যান্য কিছু লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। যেমন ধরুন ব্যথা, সেটা মাংসে বা জোড়ায় হতে পারে। জ্বরের সঙ্গে গায়ের মধ্যে র্যাশ বা লুনতি দেখা দিচ্ছে। তখন চিন্তা করতে হবে আমি সম্ভবত অন্য কোনো ভাইরাস জ্বরে ভুগছি। আর আট-দশটি সাধারণ জ্বরের মতো নয়। রোগী অনেক বেশি ল্যাথার্জিক হয়ে যাচ্ছে। নেতিয়ে পড়ছে। জ্বরের মাত্রা যত না বেশি, এর তুলনায় রোগীর স্বাভাবিক অবস্থার অবনতি অনেক বেশি। সেটি যখন হবে দেখা যাবে রোগী অনেক বেশি বমি করছে, রোগী খাচ্ছে না। তখন একটু সতর্ক হতে হবে। এটি জটিল ভাইরাস জ্বর।
খেয়াল রাখতে হবে ভাইরাস জ্বর যেটিই হোক না কেন মূল ব্যবস্থাপনা একই। রোগীকে কোনো অবস্থাতেই না জেনে, না শুনে জ্বর নাশক প্যারাসিটামল ওষুধগুলো ছাড়া অন্য কোনো কড়া ওষুধ যেন দেওয়া না হয়। রোগী যেন যথেষ্ট পরিমাণ পানি, ওরস্যালাইন খায়। অর্থাৎ তার শরীরের পানি যেন ঠিক থাকে।
দেখেন আমার বেশির ভাগ রোগ সারানোর ক্ষমতা আল্লাহ আমাকে দিয়ে দিয়েছেন। এটাকে ব্যবহার করা আমার কাজ। এটার জন্য আমার শরীরকে ঠিক রাখতে হবে। আমাকে পানি পান করতে হবে। খেতে চাইব না, কষ্ট করতে হবে। তবে খেতে হবে। যেমন অনেক সময় আমরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে যাই, রোগীর এত মাথাব্যথা কী হবে? মাথাব্যথার চিকিৎসা, মাথা কেটে ফেলে দেওয়া নয়। মাথাব্যথা হচ্ছে, আমরা রোগীকে ডাইকোফ্লেনাক্স সোডিয়াম দিয়ে দিলাম বা একটু কড়া ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে দিলাম। তবে এটি হবে ব্যথার কারণে মাথা কেটে ফেলে দেওয়ার মতো। কারণ, আমি জানি না এই রোগীটার ডেঙ্গু কি না। আমি জানি না এই রোগীটার চিকুনগুনিয়া কি না। আমি জানি না এই রোগীটা হেপাটাইটিসের প্রাথমিক অবস্থায় কি না। আপনি ভালো করে জানেন যে জন্ডিসেরও প্রথম লক্ষণ দেখা দেয় জ্বর। এরপর গিয়ে এটি পুরোপুরি ভাইরাল হেপাটাইটিস তৈরি করে। তাহলে কোনটি আমরা জানি না? এই ব্যথা নাশক ওষুধটি আমাদের জন্য কাল হতে পারে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জ্বর একটি লক্ষণ মাত্র। জ্বর কমিয়ে ফেলা মানে রোগ সেরে যাওয়া নয়। রোগীদের এই বোধ প্রায়ই হয় না। তারা ভাবে জ্বর নামিয়ে দেওয়া মানে আমি ভালো হয়ে গেছি। যখন আমি রোগীকে জ্বর কমানোর জন্য এই ধরনের ওষুধগুলো দিতে প্ররোচনা করলাম, এটি ঠিক নয়। কোনো অবস্থাতেই যেন এই কাজটি না করা হয়। সবাই জানে ডেঙ্গু জ্বরে প্লেটিলেট কাউন্ট কমে যায়। সবাই জানে ডেঙ্গু জ্বরে প্রেশার কমে যায়,স্যালাইন দেওয়া লাগে। সাধারণ মানুষও জানে এই জিনিসটি।
দুই নম্বর বিষয়টি হলো অ্যান্টিবায়োটিক কেনার এবং খাওয়া প্রবণতা। আমরা সবাই ভাবি যে অ্যান্টিবায়োটিক বোধ হয় একটি মহা ওষুধ। অনেকের ধারণাও নেই যে অ্যান্টিবায়োটিক একটি ওষুধের দল। এক একটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে এক একটি অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে। অনেকে নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে থাকেন। এতে আপনি দুটো সমস্যা করছেন। এক আপনার শরীরকে অযথা ওষুধ দিচ্ছেন। আর যেই ওষুধ প্রদান করছেন এর কার্যকারিতাকে নষ্ট করছেন। আর তিন হলো আপনি যেহেতু রোগ নির্ণয় জানেন না, আপনি সময়ও জানেন না। এক একটি রোগীর অ্যান্টিবায়োটিকের সময় এক এক রকম। কোনোটার তিনদিন কোনোটার সাত দিন, কোনোটার ১৪ দিন, কোনোটার ২১ দিন। তাই আপনাকে প্রথমে জানতে হবে, কোন রোগ হয়েছে। এর পর তার ওপর ভিত্তি করে, ওষুধ।