নাকে যেসব সমস্যা হয়

নাকে সামান্য থেকে গুরুতর-নানা সমস্যা হতে পারে। নাকের কিছু সমস্যার নিয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৭৯৫তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. ফুয়াদ মো. শহীদ হোসেন। বর্তমানে তিনি হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের নাক, কান, গলা বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : কী কী সমস্যা নাকের হতে পারে?
উত্তর : আমি যদি খুব ছোট করে বলি, ধরেন, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে, অনেক ছোট বাচ্চার সমস্যা হলো তাদের নাক খোঁটানোর একটা অভ্যাস থাকে। বাচ্চাদের নখ খুব তীক্ষ্ণ থাকে। অনেক সময় বাচ্চার মা-বাবা বলে বাচ্চার নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তারা হয়তো ভয় পেয়ে যায়। কী হলো আমার বাচ্চাটার? তবে এটি খুব সাধারণ একটি ব্যাপার। দেখা যায়, নখের খোঁচা খেয়ে রক্ত বের হয়েছে। দেখা যায়, এটা খুব সাধারণ একটি বিষয়। নখ একটু কেটে রাখলে এবং অ্যান্টিবায়োটিক মলম দিলে ঠিক হয়ে যায়।
অনেক সময় বাচ্চারা মা-বাবার অগোচরে, নাকের ভেতর মটরসুটি ঢুকায়, শিমের বিচি ঢুকায়। কখনো হয়তো নাকে ইরিটেশন হচ্ছে, সে মনে করল, নাকে এটি ঢুকালে আরাম পাব। এ ধরনের সমস্যা আমরা অনেক পাই। সেই ক্ষেত্রে দেখা যায় নাক থেকে দুর্গন্ধ আসছে অথবা নাক থেকে নিঃসরণ হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে নাক পরীক্ষা করলে একে ফরেন বডি হিসেবে দেখা হয়। সেটা বের করে দেওয়া যায়। কখনো কখনো এমনিতে আমরা আউটডোরে এটি ঠিক করে দিতে পারি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অজ্ঞান করে করতে হয়।
আরেকটি বিষয় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় অ্যালার্জিক মেনিফেসটেশন। তার যদি ছোট বেলা থেকে থাকে, দেখা গেল, ঋতুবদলের সময় নাক দিয়ে সমানে পানি ঝরছে। এর খুব ভালো চিকিৎসা রয়েছে। কিছু ওষুধ রয়েছে, যেগুলো দিলে খুব ভালো থাকে।
বয়ঃসন্ধিতে ছেলেবাচ্চাদের ক্ষেত্রে নাকের একটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হলো, বয়ঃসন্ধিতে কোনো বাচ্চার যদি নাক থেকে রক্তপাত হয়, কোনো কারণ ছাড়াই, তখন কিন্তু আমাদের একটি জিনিস সন্দেহ করতে হবে যে তার নাকের মধ্যে কোনো টিউমার আছে কি না। ন্যাজোফেরিংজিয়াল এনজিওফাইব্রোমা। যদিও একে আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় বিনাইন। তবে এটি একটি ম্যালিগনেন্স অবস্থা। কারণ, এর পুনরায় হওয়ার হার বেশি এবং এর কারণে প্রচুর রক্তপাত হয়। আপনি জানেন সার্জন হিসেবে যে এর অস্ত্রোপচারটিও খুব চ্যালেঞ্জিং। অনেক রক্ত নিয়ে এর অস্ত্রোপচারের জন্য তৈরি থাকতে হয়। এই বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হলে, বিশেষ করে ছেলেদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হলে কখনো এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।
আরেকটি বিষয় হলো ঠান্ডা লেগে নাক বন্ধ থাকা। অনেক সময় এই বন্ধ থাকাকে আমরা সয়ে যাই। তারা ভাবে, বন্ধ বা নাকের সমস্যা এটি তেমন কিছু নয়। নাকের সেপটাম বা পার্টিশনটা, হাড়টা কারো কারো একদিকে খুব বেশি বেড়ে যায়। কারো কারো ক্ষেত্রে নাকের হাড় বাঁকা থাকলে হয়তো টেরও পায় না। তবে যদি এটি লক্ষণ দেখায়- তার নাকটা বন্ধ বা কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় কানও বন্ধ- এই ধরনের সমস্যা যখনই হবে তখন খুব ছোট একটি পরীক্ষা করে আমরা বুঝতে পারি তার নাকের হাড় বাঁকা কি না।
অনেক সময় সাইনোসাইটিসের কারণে নাক বন্ধ থাকে। নাকের আশপাশের জায়গাগুলো বন্ধ থাকে। প্রচণ্ড ব্যথা করে। বিশেষ করে এখনকার যে আবহাওয়া চলছে, এটি সাইনোসাইটিসের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। এর কারণে নাক থেকে রক্তপাত হতে পারে, সেটা নিয়েও আমরা সতর্ক থাকি।
অনেক সময় নাকের ভেতর কিছু গ্রোথ থাকলে সমস্যা হয়। এরপর ম্যাক্সিলা বলে একটি জায়গা আছে, যেখানে সাইনাস হয়, এখানে অনেক সময় ক্যানসার হয়। আমরা অনেক সময় মনে করি এগুলো শুধু বয়ঃসন্ধিতেই হবে। তবে মরণব্যাধি ক্যানসার এমন একটি রোগ যেটি কোনো বয়সকেই ছাড় দিচ্ছে না। যদি উপসর্গগুলো তার সঙ্গে মিলে যায়, তাহলে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।