শিশুর ভাষা বিকাশ যেভাবে হয়
শিশুর ভাষা বিকাশে সমস্যা বিভিন্ন কারণে হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৭৪৫তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. ফাহমিদা ফেরদৌস। বর্তমানে তিনি জেড এইচ সিকদার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মানসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : ভাষা বা কথার মানে কী?
উত্তর : আমাদের জানতে হবে ভাষা, কথা ও যোগাযোগের বিষয়ে। যদি আমরা আলোচনা করতে চাই, তাহলে জানতে হবে যোগাযোগ কী? মানুষ সামাজিক জীব। প্রতিনিয়ত আমরা একজন আরেকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি অথবা তথ্য আদান-প্রদান করছি। অথবা মনের ভাব প্রকাশ করছি। তার প্রথম ও প্রধান মাধ্যমই হচ্ছে ভাষা। ভাষার দুটি দিক আছে। একটি হচ্ছে বাচনিক দিক বা ভারবাল দিক। আরেকটি হচ্ছে অবাচনিক দিক বা নন-ভারবাল দিক। আকার-ইঙ্গিত যেটি তাকে বলা হচ্ছে অবাচনিক দিক।
এর মাধ্যমেই আমরা সামাজিকতা স্থাপন করছি বা ভাবের আদান-প্রদান করছি। মনের ভাব প্রকাশ করছি। মনের ভাব প্রকাশ করছি ভাষা দিয়ে। আর যখন এটি সামাজিকতার পর্যায়ে যায় বা আরেকজনের সঙ্গে দ্বিমুখী প্রক্রিয়া হয়, তখন একে বলে যোগাযোগ।
প্রশ্ন : একজন শিশুর জন্মের পর থেকে কোন পর্যায়ে কী বৃদ্ধি হয়?
উত্তর : একটি মানব শিশু মাতৃগর্ভে থাকাকালীন তার শারীরিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভাষা বিকাশের পর্বটি শুরু হয়ে যায়। তবে তার বহিঃপ্রকাশ হয় জন্মের পরপরই। যখন মায়ের সঙ্গে সন্তানের একটি বিচ্ছেদ ঘটানো হয়, তখনই শিশুটি কান্না জুড়ে দেয়। তখনই শব্দ বেরিয়ে এলো। তার কথা বা ভাষার বহিঃপ্রকাশ হলো। এক মাসের কম বয়সী শিশুদের জন্য ওই কান্নাটাই কথা। কথার মাধ্যমেই শিশুটি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
প্রশ্ন : পরবর্তী পর্যায়ে ভাষার যে বৃদ্ধি সেখানে কী হয়?
উত্তর : পরে আস্তে আস্তে দেখা যায় শিশুর যখন এক মাস বয়স হয়, তখন শিশুটি তার প্রয়োজন অথবা অপ্রয়োজনে কান্না জুড়ে দেয়। যেকোনো অসুবিধা হলেই কান্না শুরু করে। কান্নাটাই কথা। অথবা যখন আমরা আমাদের চোখের দিকে অল্প অল্প করে দশমিক ৩ সেকেন্ডের জন্য তাকায়। এটিই হলো শিশুর যোগাযোগ। আবার যখন তিন থেকে চার মাস বয়স হয়, তখন সে যেকোনো মানুষ দেখলেই একটি হাসি দেয়। ভালোভাবে চোখের দিকে তাকায়। একে আমরা বলছি শিশুর অবাচনিক বা নন-ভারবাল পথে যোগাযোগ। তখন শিশু মুখে কিছু ধ্বনি উচ্চারণ করে। এটিই হলো শিশুর কথা। আস্তে আস্তে শিশুটি যখন বড় হতে থাকে, শিশুর বাচনিক-অবাচনিক ও সামাজিকতা তিনটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন হতে থাকে। যখন শিশুর এক বছর বয়স হয়, তখন সে একটি অর্থবহ শব্দ বা কথা দিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। অথবা সামাজিকতা স্থাপন করে। যেমন মা বা বাবা। একে বলে অর্থবহ শব্দ। এ শব্দ দিয়ে শিশুটি যোগাযোগ করবে। যখন দুই বছর বয়স হবে, তখন দুটি শব্দ দিয়ে একটি সরল বাক্য তৈরি করবে, ‘আমি খাব।’ এটা শিশুর সঙ্গে অথবা অন্য পরিবেশের সঙ্গে অথবা সঙ্গীর সঙ্গে তার একটি যোগাযোগ। এখানে তার মনের ভাবও প্রকাশ হয়। এটিই হচ্ছে শিশুর ভাষা। তবে আমরা সারা দিনে বাচনিকতার চেয়ে অবাচনিক পদ্ধতিতেই বেশি যোগাযোগ করে থাকি।