ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ : করণীয়

ঋতুস্রাবের সময় রক্তক্ষরণ স্বাভাবিক। তবে যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তবে এটি সমস্যা। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে মেনোরেজিয়া।
কীভাবে বুঝবেন মেনোরেজিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন?
ঋতুস্রাবের সময় প্রতি এক থেকে দুই ঘণ্টা পরপর বা সারা দিনে ১০ বারের বেশি স্যানিটারি প্যাড বদলাতে হলে অথবা সাত দিনের বেশি সময় ধরে রক্তক্ষরণ হলে বুঝবেন মেনোরেজিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। কিশোরী মেয়েদের ঋতুস্রাব শুরুর বছর এবং নারীদের ঋতুস্রাব বন্ধের (মেনোপজ) আগে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তবে মেনোরেজিয়া যেকোনো বয়সেই হতে পারে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণের সঙ্গে তলপেটে ব্যথাও হয়। রক্তক্ষরণ থেকে আয়রনের ঘাটতি, রক্তস্বল্পতা বা এনিমিয়া হয়। এতে দুর্বলতা, অবসন্নতা, মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা দেখা, ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।
কেন হয়?
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কারণ জানা যায় না। তবে বিশেষ কিছু কারণ এর পেছনে কাজ করে বলে ধারণা করা হয়।
১. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা।
২. ঋতুচক্রে যদি ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু তৈরি না হয় (ডিম্বাণু থেকে প্রজেস্টেরন হরমোন আসে। এটি রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। ডিম্বাণু না থাকলে প্রোজেস্টেরনও থাকে না। এতে অনিয়ন্ত্রিত রক্তক্ষরণ হয়)।
৩. জরায়ুতে ফাইব্রয়েড (এক ধরনের টিউমার)।
৪. জরায়ুতে পলিপ।
৫. এডেনোমায়োসিস নামের জরায়ুর বিশেষ একটি সমস্যা।
৬. কপার টি (অনেক সময় আইইউডি বলা হয়)।
৭. গর্ভধারণজনিত জটিলতা, অ্যাবরশন, জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ ইত্যাদি।
৮. থাইরয়েডের সমস্যা।
৯. মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা।
১০. রক্তক্ষরণজনিত জটিলতা, প্লেইটলেট কমে যাওয়া ইত্যাদি।
১১. কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
১২. তলপেটের প্রদাহ (পিআইডি)।
১৩. ক্যানসার ইত্যিাদি।
রোগনির্ণয়
সঠিকভাবে রোগের ইতিহাস নেওয়া, গাইনি পরীক্ষা, আলট্রাসনোগ্রাফি, রক্তের জমাটবাঁধার ক্ষমতা পরীক্ষা, রক্তের রুটিন পরীক্ষা, হরমোন পরীক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে রোগের কারণ নির্ণয় করা হয়। প্রয়োজনে ল্যাপারোস্কপি, জরায়ুর ভেতরে ক্যামেরা দিয়ে পরীক্ষা, সিটিস্ক্যান ইত্যাদির মাধ্যমেও রোগ নির্ণয় করা হয়।
চিকিৎসা
- রক্তক্ষরণ কমানোর জন্য ট্র্যানেকজেমিক এসিড দেওয়া হয়।
- রক্তক্ষরণের কারণে আয়রনের ঘাটতি হয়। এতে আয়রন ট্যাবলেট দিতে হয়।
- ব্যথানাশক ওষুধ ব্যথা এবং রক্তক্ষরণ দুই ক্ষেত্রেই উপকার করে।
- মেনোরেজিয়ার কারণটি নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসা সহজ হয়ে যায়। কারণ, অনুযায়ী চিকিৎসা দিলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণও বন্ধ হয়।
- হরমোন ইমব্যালেন্সের কারণে হলে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেতে দেওয়া হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভালো কাজ করে।
- প্রজেস্টেরন কম হলে প্রেজেস্টেরন ট্যাবলেট দেওয়া হয়।
- ফাইব্রয়েড থাকলে অস্ত্রোপচার করে টিউমার ফেলে দিতে হয়।
- ডিএন্ডসি করলে অনেক সময় ভালো ফল পাওয়া যায়।
- ওপরের সব পদ্ধতি কাজে না এলে জরায়ু অস্ত্রোপচার করে ফেলে দিতে হয়।
পরামর্শ
নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাবেন। যথেষ্ট পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল খাবেন। ঋতুস্রাবের সময় প্রচুর পানি পান করবেন। মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করার চেষ্টা করবেন। নিয়মিত ব্যায়াম করবেন।
ওপরের সংজ্ঞা অনুযায়ী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছে বলে মনে হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। সমস্যা লুকাবেন না বা নিজে নিজে ব্যবস্থা নেবেন না। মেনোরেজিয়া মেয়েদের রক্তস্বল্পতার (এনিমিয়া) অন্যতম প্রধান কারণ। এ থেকে অন্যান্য জটিলতাও হতে পারে। তাই সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
লেখক : আবাসিক চিকিৎসক, বিএসএমএমইউ।