হেলথ ড্রিংকস খেলে কি লম্বা হয়?

হেলথ ড্রিংকস খেলে কি লম্বা হওয়া যায়? এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে বরং একটি প্রশ্ন করা যাক, আমাদের দেশের গরিব মানুষ, যাঁরা শ্রমজীবী, তাঁদের তো দামি ওসব ড্রিংকস কেনার সামর্থ্য নেই। তো, তাঁদের সবার কি আকৃতি কম? কিংবা চীন, জাপান ইত্যাদি দেশের মানুষ কি এসব হেলথ ড্রিংকসের কথা জানে না? তারা তো এসব ড্রিংকস খেয়েই লম্বা হয়ে যেত, অন্ততপক্ষে তাঁদের ফুটবল টিমকে খাওয়াত, যাতে লম্বা হয়ে হেড দিয়ে গোল করা যায়!
আসলে শিশুদের লম্বা হওয়া নিয়ে মায়েদের বিভ্রান্তির একটি বড় কারণ হলো, তাদের বৃদ্ধির গতি সব সময় সমান নয়। জন্মের পর থেকে এক বছর বয়স পর্যন্ত যেভাবে শিশু বাড়ে, এর পর থেকে সেভাবে বাড়ে না। জন্মানোর পর থেকে প্রথম বছরে শিশু ১০ ইঞ্চি লম্বা হয়। এর পরের বছর পাঁচ ইঞ্চি, তিন থেকে ছয় বছরে প্রতিবছর তিন-চার ইঞ্চি করে বাড়ে। তবে সাত বছরের পর থেকে বছরে দুই ইঞ্চি করে বাড়ে। এখানেই মা-বাবারা বিভ্রান্ত হন। কারণ, ছয়-সাত বছরে তাঁরা যখন দেখেন, সন্তান আগের মতো দ্রুত বাড়ছে না, তখন তাঁরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং বাজার থেকে বিভিন্ন হেলথ ড্রিংকস নিয়ে আসেন।
একটু ভেবে দেখুন তো ব্যাপারটা, জন্মের সময় শিশু ১৮ থেকে ২০ ইঞ্চি লম্বা হয়, এর পর প্রথম বছরেই তার উচ্চতা ১০ ইঞ্চি বাড়ে, এই হারে প্রতিবছর উচ্চতা বাড়লে আট বছরে সন্তানের উচ্চতা হবে ছয় ফুট, আর ১৮ বছরে হবে ১০ -১২ ফুট! কিন্তু এটা তো একেবারে অবাস্তব। তাই প্রথম দিকে শিশু যে হারে বাড়ে, পরের দিকে সেই হারে বাড়ে না। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কোনো হেলথ ড্রিংকস বা ওষুধ খাইয়ে এর ব্যতিক্রম করা যাবে না। আবার কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, একটি শিশু তার সমবয়সী অন্য ছেলেমেয়েদের তুলনায় খাটো। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক টেস্ট করে যদি দেখেন যে সব স্বাভাবিক, সে ক্ষেত্রে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এক ধরনের অবস্থা আছে, যাতে প্রথম দিকে বাচ্চারা খাটো হয়। একে বলে কনস্টিটিউশনাল ডিলে। শিশু প্রথম দিকে ধীরে বাড়ে, তবে শেষ দিকে খুব দ্রুত বাড়তে থাকে। এ পরিস্থিতিতেও কোনো ওষুধ বা ড্রিংকস দরকার নেই।
প্রায় ক্ষেত্রে দেখা যায়, মায়েরা অহেতুক দুশ্চিন্তা করছেন, আসলে তাঁদের সন্তানের উচ্চতা বয়স অনুযায়ী ঠিকই আছে। আপনার সন্তান যদি খাটো হয়, তাহলে তাকে কোনো হেলথ ড্রিংকস বা চমকদারি ওষুধ খাইয়ে অথবা ঝুলন্ত বাবু করে রাখলেই সে কিন্তু লম্বা হয়ে যাবে না। কারণ, মানুষ আকারে খাটো হয় অনেক কারণে। যেমন—পারিবারিক বা জেনেটিক কারণে, হরমোনের সমস্যায় (গ্রোথ, সেক্স, থাইরয়েড, ইনসুলিন ইত্যাদি) খাবারের অভাবে, দীর্ঘদিনের অসুস্থতায় (ক্রনিক কিডনি ফেইলিওর), জন্মগত হার্টের অসুখ, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খেলে, হাড়ের সমস্যার কারণে। এ ছাড়া আরো কারণ রয়েছে।
পাঁচ বছরের নিচের বাচ্চারা পুষ্টিকর খাবারের অভাবে খাটো হতে পারে। তবে এ জন্য খেতে হবে সুষম পুষ্টিকর খাবার। যেমন—খিচুড়ি কিংবা ভাতের সঙ্গে তেল দিয়ে রান্না করা মাছ/মাংস, ডাল, সবজি, খাওয়ার পর পুষ্টিকর ফল, দুধ ইত্যাদি। এ জন্য কোনো হেলথ ড্রিংকসের দরকার নেই, কারণ হেলথ ড্রিংকস কোনো পুষ্টিকর খাবার নয়।
তবে পারিবারিক বা জেনেটিক কারণে খাটো হলে চিকিৎসা তেমন নেই, অর্থাৎ মা-বাবা দুজনেই খাটো এবং তাঁদের সন্তানও যদি খাটো হয়, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা তেমন কাজে আসে না। তবে দীর্ঘদিনের অসুস্থতায়, হরমোনের সমস্যায় কিংবা জন্মগত হার্টের অসুখের কারণে বাচ্চা খাটো হলে এর চিকিৎসা রয়েছে। এসব সমস্যা বাচ্চার হয়েছে কি না, সেটি তো আর সবার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তাই সন্তানকে খাটো মনে হলে অভিভাবকদের উচিত একজন শিশু বিশেষজ্ঞ এবং হরমোন বিশেষজ্ঞ, অর্থাৎ এনডোক্রাইনোলজিস্টের কাছে যাওয়া।
লেখক : শিশু বিশেষজ্ঞ, ঢাকা মেডিকেল; কনসালট্যান্ট, ইনসাফ বারাকাহ হাসপাতাল, মগবাজার।