পায়ে ব্লক হলে চিকিৎসা কী?

পায়ে ব্লকের চিকিৎসা দ্রুত করতে হয়। নয়তো পা হারানোর মতো বিপদও ঘটতে পারে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৯৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. এস এম জি সাকলায়েন। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ ভাসকুলার সার্জন হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : পায়ে ব্লক হলে কী চিকিৎসা দিয়ে থাকেন?
উত্তর : ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে যদি তিনি চলে আসেন, তাহলে ইতিহাস নেই। নিয়ে দেখার চেষ্টা করি যে এই ব্লক হওয়ার কোনো কারণ আছে কি না। যেমন, হৃৎপিণ্ডে হয়তো তার ভালভ লাগানো আছে, সে ওষুধটি খায় কি না রক্ত পাতলা করার জন্য। যদি না খায়, আমি হয়তো তাকে ঠিক করে দিলাম, আবার কিন্তু ব্লক হবে। এটা প্রথমে আমরা দেখার চেষ্টা করি। এরপর আমরা নির্দিষ্ট চিকিৎসায় চলে যাই। আমরা খুব সাধারণ একটি চিকিৎসা করি। আমরা তার কুঁচকির কাছে যে রক্তনালি আছে, এটা খুলে ওই দিক দিয়ে চিকন কিছু তার ঢুকিয়ে দিই। পুরো পায়ের মধ্যে তারগুলো ঢুকিয়ে দিই। ঢুকিয়ে দিয়ে যে রকম আম পেড়ে নিয়ে আসা হয়, বড় লাঠি দিয়ে, যন্ত্রের মাধ্যমে ফাঁস লাগিয়ে আমরা ঠিক সেভাবে ময়লাটাকে বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করি। এর পর আমরা তাকে কিছু ইনজেকশন দিয়ে দিই। অস্ত্রোপচারের টেবিলেই আমরা দেখি, রোগীর ব্যথা চলে গেছে, পা গরম হয়ে গেছে এবং তখন আমরা তাকে খুশির খবর দিতে পারি যে আপনার পা এ মুহূর্তে নিরাপদ। আর যদি তিনি দেরি করে ফেলেন, বেশির ভাগ সময় রোগীরা দু-তিন দিন পরে আসে, তখন আমরা পায়ের পরীক্ষা করে দেখি যে পা আসলে জীবিত আছে কি না। যদি জীবিত থাকে, তখনই আমরা কেবল ওই রক্তনালিতে হাত দিই। আর যদি জীবিত না থাকে, সে ক্ষেত্রে আমাদের আর কিছুই করার থাকে না। হয়তো পা কেটে ফেলার জন্য আমরা অর্থোপেডিকসের কাছে পাঠিয়ে দিই।
প্রশ্ন : একজন মানুষের যদি এই সমস্যা ধীরে ধীরে হয়, সে ক্ষেত্রে তার সমস্যা কী হতে পারে এবং উভয় ক্ষেত্রে আপনারা সাধারণত কী পরীক্ষা করেন বা কী প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করেন যে পায়ের কোনো রক্তনালিতে বা কোথায় ব্লকটা আছে?
উত্তর : ধীরে ধীরে যে ব্লক হয়, সেই রোগীর সংখ্যা আমাদের দেশে বেশি। যাঁরা সিগারেট খান, এঁদের ক্ষেত্রে দেখা যায় হাঁটতে গেছেন, ভালো লাগছে। কিছুদূর হাঁটার পর দেখা যায় তার পায়ে কামড়াচ্ছে বা খিল ধরে ব্যথা হচ্ছে। সে একটু ম্যাসাজ করলে ভালো লাগে। একটু এগোলো আবার ব্যথা হচ্ছে। বিশ্রাম নিল ভালো লাগছে। দেখা যায় অল্প একটু হাঁটলে ভালো হয় এবং রোগের তীব্রতায় এক সময় দেখা যায় সে বসে আছে, অথচ পায়ে ব্যথা হচ্ছে। একটি সময় দেখা যায় কিছুই নয়, পায়ের আঙুলের মাথায় ঘা হয়েছে। সে দিনের পর দিন সেটি ড্রেসিং করছে, সার্জারি করছে। অনেক চিকিৎসকও আছেন, যেহেতু গ্যাংরিন, সেটুকু কেটে ফেলছেন। আসলে মাথায় রাখতে হবে আমি যে কেটে ফেললাম, সেই জায়গাটা শুকাবে কী দিয়ে? তার তো রক্তের প্রবাহ আনতে হবে। সে কারণে আমরা তখন প্রথমে পালস দেখি যে কতদূর পর্যন্ত আছে। যদি পালস না থাকে, খুবই সহজ একটি পরীক্ষা, যাকে সাধারণ মানুষ আলট্রাসনোগ্রাম বলে, একে আমরা ডুপ্লেক্স বলি, কম্পিউটারে পরীক্ষা করে ডুপ্লেক্স করলে আমরা বুঝতে পারি কোন পর্যায়ে ব্লক আছে। হৃৎপিণ্ডে যে রকম এনজিওগ্রাম করা হয়, এখানেও ঠিক একইভাবে এনজিওগ্রাম করে, রোগের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়, একই সঙ্গে চিকিৎসার পদ্ধতিও ঠিক করা হয়। আমি কি এর ময়লা পরিষ্কার করে দেব? আমি কি এর বাইপাস করে দেব? নাকি আমি ইনজেকশন থেরাপি দেব? আমাকে এনজিওগ্রাম নিশ্চিতভাবে এটি বলে দেবে। এই পরীক্ষাগুলো করার পর আমরা ঠিক করি যে আমি তার চিকিৎসাটা ওইভাবে দিতে চাই।
প্রশ্ন : পায়ের বাইপাস কীভাবে করা হয়?
উত্তর : বাইপাস মানে হলো আপনার মূল রাস্তা ভেঙে গেছে, এখন গাড়িগুলো জমি দিয়ে পার হবে। একে বাইপাস বলে। তার মূল রক্তনালি বন্ধ। আমরা তার পায়ের একটি রক্তনালি দিয়ে, কৃত্রিম একটি রক্তনালি দিয়ে ওই রাস্তাকে বাইপাস করে রক্ত পাঠানোর ব্যবস্থা করি। আপনি শুনে আনন্দিত হবেন, এখন আর সেই বাইপাস করারও দরকার নেই। হাতে যে রকম রিং পরাচ্ছেন, পায়েও সে রকম রিং পরানো যায়। ভারজার ডিজিজ বলে যে ভুল কথাগুলো বলা হচ্ছে, সেটি আমাদের দেশে খুবই কম। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় বাইপাস করাও যাবে না। রিং পরানোও যাবে না। তাহলে কি তার পা কেটে ফেলতে হবে? না। আমরা এক ধরনের ইনজেকশন দিই যে প্রকৃতগতভাবে কিছু রক্তনালি তৈরি হয়ে যাচ্ছে। একে আমরা প্রকৃতগত বাইপাস বলি। তিনি পা ততটুকু পর্যন্ত সুরক্ষিত রাখতে পারেন, যতটুকু তার গ্যাংরিন হয়নি। আমরা আগে একটি জিনিস দেখেছি পালস নেই যে পর্যন্ত, সে পর্যন্ত পা কেটে ফেলা হয়। এখন সেটি করতে হচ্ছে না। এখন চেষ্টা করা হয় নতুন করে পা বাঁচাতে।