শিশুর ডায়রিয়ায় খাওয়ার স্যালাইনের গুরুত্ব
দেশে গরমে শিশুদের ডায়রিয়া খুব সাধারণ এক স্বাস্থ্য সমস্যা। শিশুরা এই রোগে একটু বেশিই ভুগে থাকে। আজ আমরা একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে জানব, শিশুদের ডায়রিয়ায় ওরস্যালাইনের গুরুত্ব।
এনটিভির নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রতিদিনের একটি পর্বে গরমে শিশুদের ডায়রিয়ায় ওরস্যালাইনের গুরুত্ব নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন ডা. রিফাত জামান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন ডা. মুনা তাহ্সিন।
শিশুদের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি রোগ হচ্ছে ডায়রিয়া। এই রোগটি হওয়ার পেছনে কী কী কারণ রয়েছে, মায়েদের কিংবা পরিবারের বড়দের অসচেতনতা শিশুদের ডায়রিয়ায় ভোগাতে পারে কিনা, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. রিফাত জামান বলেন, ‘ডায়রিয়া অনেক সুপরিচিত একটি রোগ। এটাকে অনেক বছর পূর্বে থেকে মোকাবিলা করে আসছি। কিন্তু, সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। এর কারণ হচ্ছে, সচেতনতার অভাব। একটি শিশু এই রোগ সম্পর্কে তো জানবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, বড়দের মধ্যে এই সম্পর্কে সচেতনতার অভাব হওয়ার ফলে শিশুরা বেশি অসুস্থ হচ্ছে বা কষ্ট পাচ্ছে।
সবাই জানে, ডায়রিয়া হলে ওরস্যালাইন খাওয়াতে হয়। কিন্তু, সঠিক সময়ে স্যালাইন খাওয়ানো হয় না। সঠিক উপায়ে অনেকে স্যালাইন তৈরি করতে পারে না। যেভাবে স্যালাইন খাওয়ানো উচিত, সেভাবে খাওয়ানো হয় না।
কখন একটি শিশুকে বাসায় স্যালাইন খাওয়ানো উচিত এবং কখন হাসপাতালে বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এটা সম্পর্কে অনেক অভিভাবকরা জানেন না। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। তবুও অধিকাংশ মানুষ গুরুত্ব দিচ্ছে না। তারা চিন্তা করে, ডায়রিয়া হলে ওরস্যালাইন খাওয়াতে হবে। আবার অনেক ওরস্যালাইনকে গুরত্ব না দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কিনে খাওয়ান।
এই চিকিৎসক জানান, ডায়রিয়ার প্রধান জীবাণু হচ্ছে রোটা ভাইরাস। এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। এই ভাইরাস খুব দ্রুত শিশুকে পানিশূন্যতা করে দেয়। এক্ষেত্রে শিশু যতো ছোট হবে, পানিশূন্যতার হার ততো বেশি হবে। ডায়রিয়া হলে একটি শিশু দ্রুত পানি হারায়। এই দ্রুত পানি হারানো কমানোর জন্য ওরস্যালাইন খুবই উপযোগী।
ওরস্যালাইনের গুরুত্ব কতটুকু, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. রিফাত জামান জানান, ডায়রিয়া ব্যবস্থাপনায় ওরস্যালাইনের গুরুত্ব অপরিসীম। এটিই জীবন রক্ষাকারী। ডায়রিয়ায় পানিশূন্যতা মৃদু থেকে মারাত্মক পর্যায়ে হতে পারে। তাই কোনো পর্যায়ের পানিশূন্যতাকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। মৃদু অবস্থায় ডায়রিয়ার সঠিক চিকিৎসা দিয়ে নিরাময় করা সম্ভব। তাহলে সে মাঝারি আকারে যাবে না। মাঝারিকে বাড়তে না দিলে মারাত্মক আকারের পানিশূন্যতায় পৌঁছাবে না। এ সময় অনেক অভিভাবকরা চিকিৎসকের কাছে শরণাপন্ন হয়ে শিশুর পায়খানা বন্ধ করার অনুরোধ জানান। আসলে পায়খান বন্ধ করা ডায়রিয়ার প্রকৃত চিকিৎসা নয়।
বর্তমানে শিশুর ডায়রিয়া চিকিৎসায় হাসপাতালগুলোতে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করছে না। বরং, ওসব হাসপাতালের চিকিৎসকরা শুধু স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দেন। অথবা শিশুর প্রয়োজন অনুযায়ী স্যালাইনের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া যখন মরাত্মক আকার ধারণ করলে, আইভি স্যালাইন দিতে হবে।