মেরুদণ্ডের যক্ষ্মার লক্ষণ কী?
মেরুদণ্ডের যক্ষ্মা তেমন প্রচলিত না হলেও যক্ষ্মায় আক্রান্ত ৩ শতাংশ রোগী এ সমস্যায় ভোগে।
এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৬৪০তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. সৈয়দ সহিদুল ইসলাম। তিনি একজন স্পাইন ও অর্থোপেডিক সার্জন।
প্রশ্ন : মেরুদণ্ডের টিবির লক্ষণ কী?
উত্তর : ঘাড় থেকে শুরু করে একদম মলদ্বার পর্যন্ত পেছনের যে হাড় রয়েছে, সেটি মেরুদণ্ড। আমাদের বুকের যে পাঁজরের ১২টি খাঁচা রয়েছে, সেই ১২টি হাড়ের প্রবণতা হলো বেশি। শতকরা ৪২ ভাগ টিবি কিন্তু এখানে হয়। এর নিচে লাম্বার, নিচে সার্ভাইক্যাল কলার। আমরা যখন রোগ নির্ণয় করতে পারি, তখন তিন থেকে চার মাস চলে যায়। খুব ধীরে ধীরে এটি হয়। লক্ষণের ক্ষেত্রে প্রথমে তার পিঠ ব্যথা হতে পারে। এটি সবচেয়ে আগে আসে।
তার ক্ষুধামান্দ্য থাকতে পারে, খাওয়ার অরুচি থাকতে পারে। তার ওজন কমে যেতে পারে। স্বাস্থ্য দিন দিন খারাপ হতে পারে এবং রাতে রাতে জ্বর হচ্ছে। এই ব্যথার একটি খারাপ বিষয় হলো, ব্যথা পিঠ থেকে শুরু করে পায়ের দিকে যেতে পারে। যদি পায়ের দিকে যায়, একে আমরা বলি রেডিকিউলোপ্যাথি। আমরা মনে করব মেরুদণ্ডের হাড়ের ভেতর টিবি হয়ে, মেরুদণ্ডের যে স্পাইনাল কর্ড রয়েছে অথবা স্নায়ু রয়েছে, এর মাধ্যমে এগুলো যখন চাপ দেয়, ব্যথা পায়ে যেতে পারে। ব্যথা ছাড়াও এর আরেকটি যেই লক্ষণ কাজ করতে পারে, সেটি হলো ডিফরমিটি। মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যেতে পারে। অথবা হাড় ফুলে উঠতে পারে। আরেকটি যেটি হয় সেটি হলো, রোগী কাত হয়ে যেতে পারে। ব্যথা হলো, ব্যথার সঙ্গে তার জ্বর হতে পারে, খাওয়ার অরুচি হতে পারে।
মেরুদণ্ডের ভেতর যে স্পাইনাল কর্ড রয়েছে, সেই কর্ডের ওপর প্রেশার দিলে প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে। বিভিন্ন ধরনের প্যারালাইসিস রয়েছে। অনেক প্যারালাইসিসে রোগী হাঁটাচলা করতে পারে, সে বুঝতে পারে না। আমরা দেখলে বুঝতে পারি, আসলে প্যারালাইসিস হবে। আপনি এখানে স্পর্শ করলেন, পা লাফ দিয়ে উঠল। শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্যারালাইসিস হতে পারে। প্যারালাইসিসের আরেকটি লক্ষণ হলো তার প্রস্রাব-পায়খানা আক্রান্ত হবে। নিয়ন্ত্রণে থাকবে না অথবা সে বুঝতে পারবে না। এগুলো একটি জটিলতা।
টিবি দেখার জন্য সবচেয়ে প্রথম যে পরীক্ষাটা করা দরকার, সেটি হলো এক্স-রে। এক্স-রে করলে আমরা দেখতে পারব, হাড়ে একটি ক্ষত তৈরি হচ্ছে। এটি একটি হাড়ে হতে পারে বা দুটো হাড়ের মাঝখানে হতে পারে। যখন দুটো হাড়ের মাঝখানে হয়, দুটো হাড়ের মাঝখানে যে ফাঁকা থাকে, সেটি কমে যায়। কমে যাওয়া কারণে সরু হয়ে যায়। ওখানে একটি জায়গা থাকবে বড়, সেটি থাকে না। এর সঙ্গে পুঁজ হওয়া, টিস্যু হওয়া ইত্যাদি দেখা যায়। কিন্তু এক্স-রে ছাড়াও আরো কিছু পরীক্ষাও আমাদের করতে হবে। একে আমরা বলি এমআরআই। এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারব টিবি কোথায় হয়েছে। এর ব্যাপ্তি কতটুকু নিখুঁতভাবে এটি বোঝা যাবে। রক্তশূন্যতা হয়। আমরা বলি অ্যানিমিয়া হয়েছে। এ দুটো থাকতে পারে। অন্যান্য আরো পরীক্ষা রয়েছে। আমরা বোন স্ক্যান করি, সিটি স্ক্যান করি।
স্পাইনাল টিবি যখন হয়, রোগী যখন আমাদের কাছে আসে, তিন থেকে চার মাস চলে যায়। স্পাইনাল টিবির চিকিৎসা সাধারণ টিবির মতোই। প্রথমে যদি এর প্যারালাইসিস না হয়, এর সঙ্গে যদি দেখি এর ব্যাপ্তি বেশি না হয়, জায়গাকে আক্রমণ করেনি, তাহলে আমরা তাকে মেডিকেল চিকিৎসা দিতে পারি। আমরা একে কনজারভেটিভ চিকিৎসাও বলি। এখানে অ্যান্টিটিবি ড্রাগস দিয়ে রোগীর চিকিৎসা করি।