ডিপ্রেশন কাটাতে স্বজনদের নিয়ে মিউজিয়াম দর্শন
অনেক সময় আমরা ডিপ্রেশনে থাকলেও কাউকে বলি না। চিকিৎসকের কাছে যেতে চাই না। বেলজিয়ামে এক পরীক্ষামূলক প্রকল্পে অভিনব উপায়ে এমন রোগীদের সাহায্যের চেষ্টা চলছে৷ বিষণ্ণতা মনের অন্ধকার৷ দৈনন্দিন জীবনে ডিপ্রশেনের প্রভাব অনেক কঠিন। যিনি প্রতিদিন ভোগেন তিনি এর অবস্থা হাড়ে হাড়ে বোঝেন।
নিজের সমস্যার উদাহরণ হিসেবে একজন রোগী বলেন, ‘‘জামাকাপড় বদলে বাইরে যাওয়া, অন্যদের সঙ্গে দেখা করা, কোনো যানে ওঠা, সবই কঠিন৷'' তবে আজ তিনি তাঁর থেরাপিস্টের কাছ থেকে ভিন্ন ধরনের প্রেসক্রিপশন পাচ্ছেন৷ তিনি ও তাঁর ডাক্তার ভ্যাঁসঁ লুস্তিজিয়ে ছয় মাসের এক পরীক্ষামূলক প্রকল্পে অংশ নিচ্ছেন৷ তার আওতায় প্রেসক্রিপশন হিসেবে ডিপ্রেশনের রোগীদের ব্রাসেলস শহরে পছন্দের পাঁচটি মিউজিয়াম ঘুরতে বলা হয়।
ব্রুগমান হাসপাতালের চিকিৎসক ভ্যাঁসঁ লুস্তিজিয়ে বলেন, ‘‘আমাদের মতে, এটা সবার জন্য উপকারী হতে পারে৷ কিন্তু কেউ কেউ নিজের বাসার চেনা পরিবেশ ছেড়ে বাইরে যেতে লজ্জা পায় বলে যেতে চায় না৷ তবে বেশিরভাগ রোগী আগ্রহ দেখিয়েছেন।''
আর্ট থেরাপি নতুন কিছু নয়৷ ডিপ্রেশনের রোগীদের মিউজিয়ামে যাবার পরামর্শও নতুন নয়৷ কিন্তু পরীক্ষামূলক প্রকল্পের আওতায় এই প্রথম সেই পরামর্শকে প্রেসক্রিপশন হিসেবে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে রোগীরা সম্ভবত সত্যি বের হবার প্রেরণা পাচ্ছেন। সেইসঙ্গে তাঁরা বিনামূল্যে তিন জন মানুষকে সঙ্গে নিতে পারেন৷ সেটা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, ডাক্তারদের মতে, যিনি মনস্তাত্ত্বিক এবং আর্থিক কষ্টে ভুগছেন, তাদের সমাজের অংশ হবার অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করা উচিত৷ লুস্তিজিয়ে বলেন, ‘‘রোগী কাছের মানুষ বা নিজের পরিবারের সঙ্গে যেতে পারেন৷ আমাদের জন্য সেটা একটা নতুনত্ব। তাই আমরাও খুব রোমাঞ্চ বোধ করছি৷'' ব্রাসেলস শহরের ডেপুটি মেয়র ডেলফিন উবা এই প্রকল্প চালু করেন৷ ক্যানাডায় একই রকম উদ্যোগের কথা শুনে তিনিও এমন পরীক্ষা চালাতে চেয়েছিলেন৷ তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘‘বেলজিয়ামে দশ বছরে ডিপ্রেশনের রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এটা বিশাল সমস্যা৷ কত লোক যে কষ্টে আছেন আমরা তা জানি না। মিউজিয়াম ঘুরতে যাওয়ায় আমাদের হারানোর কিছু নেই৷ এতে ডাক্তার ও রোগীদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না৷ আর মিউজিয়ামেও দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে।''
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক রিপোর্টে ৯০০টিরও বেশি গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী স্বাস্থ্যের উপর শিল্পকলার ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। মার্চ মাসে পরীক্ষামূলক প্রকল্প শেষ হবে। কিন্তু উবার মতে চূড়ান্ত পরিসংখ্যানের আগেই বিশাল মাত্রায় ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন তিনি। সেই কর্মসূচি আরও সম্প্রসারণের আশা করছেন। ডেলফিন উবা বলেন, ‘‘অন্য কয়েকটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। অনেক ডাক্তারও প্রকল্পে যোগ দিতে চেয়েছেন। মানুষের মধ্যে অনেক উৎসাহ দেখতে পাচ্ছি। এই কর্মসূচি সম্পর্কে মানুষকে বোঝাতে এবং তাদের এখানে আসার সাহস দিতে হয়তো আরও সময় লাগবে। তবে আমার মতে, কয়েকজন মানুষ উপকার পেলেও সেটা খুব ইতিবাচক ফল৷'' কয়েকজন দর্শনার্থী প্রেসক্রিপশন ছাড়াই উপকার পাচ্ছেন। স্টেফান কঁপিয়ঁ-র অভিজ্ঞতা আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে যে, চাঙ্গা বোধ করতে ‘সুন্দর' কিছু দেখার প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, ‘‘আমি অনেক ভালো বোধ করছি, সন্দেহ নেই। নিজের সমস্যা ভুলে পৃথিবীর বিস্ময় দেখছি৷'' পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে মিলে তিনি যা শিখেছেন, তা সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে তিনি আগ্রহী৷ এভাবে তিনি আরও কিছুটা অন্ধকার দূর করতে চান।