শিশুর হাতের লেখা সুন্দর করার উপায়

ছোট হাতের আর বড় হাতের অক্ষর প্রায়ই গুলিয়ে ফেলে শিশুরা। লিখতে বসলে অক্ষরগুলো গুলিয়ে যায়। পরীক্ষার খাতায় এমন অগোছালো লেখা শিক্ষকরা একেবারেই পছন্দ করেন না, ফলে নম্বরও কমে যায়। এমনিতেই পড়াশোনায় মনোযোগ না দেওয়া নিয়ে বাবা-মায়ের উদ্বেগ লেগেই থাকে। তার উপর হাতের লেখা যদি ঠিকঠিক না হয়, তাহলে সমস্যা আরও বাড়ে। সুন্দর, পরিষ্কার হাতের লেখা—যাকে অনেকেই 'মুক্তোর মতো' লেখা বলেন—তা সকলের হয় না, তবে চেষ্টা করতে ক্ষতি কি। ছোটবেলা থেকেই যদি সঠিক নিয়মে অনুশীলন করানো যায়, তাহলে লেখাও হবে ঝরঝরে, সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার। শিশুর হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। চলুন শিশুর হাতের লেখা সুন্দর করার উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
সুন্দর হাতের লেখা শেখানোর উপায়
– ভাষার মতোই লেখারও ছন্দ আছে। অক্ষরছন্দ। সেই ছন্দে হাতের লেখাকে বাঁধতে গেলে শুরু করতে হবে প্রথম থেকেই। শিশু যখন প্রথম অক্ষর লেখা শুরু করবে, তখন থেকেই বাংলা স্বরবর্ণ বা ব্যঞ্জনবর্ণ হোক অথবা ইংরেজি অক্ষর, সবই স্পষ্ট করে লেখা শেখাতে হবে। শিশু যখন স্কুলে গিয়ে শব্দ লেখা শিখবে, তখন একটি শব্দের প্রতিটি অক্ষরই যেন স্পষ্ট হয়, তা শেখাতে হবে। বাংলা শব্দ মাত্রা দিয়ে লেখা, ইংরেজি হলে প্রতিটি অ্যালফাবেট পর পর জুড়ে শব্দ লেখার সময়ে খেয়াল রাখতে হবে অক্ষর যেন বিকৃত না হয়ে যায়। অনেক সময়েই শিশুরা ছোট হাতের ও বড় হাতের অক্ষর গুলিয়ে ফেলে, সেগুলো যত্ন সহকারে বসিয়ে লেখাতে হবে।
– ইংরেজির জন্য শুরুর দিকে ফোর লাইনার পাতাই যথেষ্ট। হাতের লেখা ভালো হতে শুরু করলে তারপরে সিঙ্গল রুলড পেপার এবং পরে একেবারে সাদা পাতায় লেখার অভ্যাস করতে হবে।
– লেখার সময়ে লাইন যেন সোজা ও এক সরলেখায় হয়, তা দেখতে হবে। হাতের লেখা সুন্দর করার সেটিও একটি কৌশল। একটি গোটা লাইন লেখার সময়ে, তার অক্ষরগুলো এলোমেলো থাকলে ও লাইন এঁকেবেঁকে চললে, লেখা দেখতে খুবই অপরিচ্ছন্ন ও খারাপ লাগবে। তাই লেখার সময়ে প্রতিটি অক্ষর যেন সমান মাপের হয় ও লাইন সোজা থাকে, তা খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে মার্জিন ধরে লেখার অভ্যাস করাতে হবে।
– সাদা পাতায় দু’টি শব্দের মাঝে এবং দু’টি লাইনের মাঝে পর্যাপ্ত ফাঁক রেখে লিখলে অপটু হাতের লেখাও পাঠযোগ্য হয়। এই ফাঁকটুকু কীভাবে রাখতে হবে ও কতটা, তা শেখাতে হবে শিশুকে।
– পেনসিল ও কলম ধরাও শিখতে হবে। শিসের ডগা থেকে অন্তত দেড়-দু’ইঞ্চি দূরে পেনসিল বা কলম ধরা জরুরি। এতে লেখা ভাল হবে।
– আট-নয় বছর বয়স পর্যন্ত পেনসিলে লেখা দরকার। এর পরে এগোনো যেতে পারে কলমের দিকে। তবে অনেক স্কুলে কলমের ব্যবহার পরেও শুরু হয়। তাই পেনসিল থেকে কলম ব্যবহার করার সময়ে ফাউন্টেন কলমের ব্যবহারই শুরুতে হওয়া উচিত, পরে জেল বা বল পেন।
– প্রতিদিন নিয়ম করে বাংলা ও ইংরেজি হাতের লেখা অভ্যাস করাতে হবে। অন্তত দু’পাতা করেও লিখতে দিন শিশুকে। ছুটির দিনে আরও বেশি। ভালো হয়, পাঠ্য বই থেকেই পাতা ধরে লিখতে দিলে। এতে পড়াও হয়ে যায় ও লেখার অভ্যাসও তৈরি হয়। এই অভ্যাস থাকলে পরীক্ষার সময়েও দ্রুত লিখতে সুবিধা হবে শিশুর।