অনন্যা
সবকিছুতেই পরিমিতবোধ জরুরি : মারিয়া

মায়ের হাতের কাজ দেখে ডিজাইনের প্রতি ভালোলাগা শুরু। এরপর প্যাটার্ন আর ডিজাইন নিয়েই তাঁর কাজ করার ইচ্ছে জাগে। একসময় তিনি নিজেকে দেশের স্বনামধন্য ডিজাইনারের তালিকায় নাম লেখাতে সক্ষম হন। বলছি ‘মুমু মারিয়া’ ফ্যাশন হাউসের কর্ণধার ও ডিজাইনার মারিয়া সুলতানা মুমুর কথা। যাকে দেখলেই মনে হয় ফ্যাশন মানে পশ্চিমা কোনো পোশাক নয়। ফ্যাশন মানে সুন্দর ও স্বাভাবিভাবে নিজেকে উপস্থাপন করা। এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে নিজের পছন্দ আর ভালোলাগার কথা জানালেন সফল এই নারী।
প্রশ্ন : ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের পেশা কেন বেছে নিলেন?
মারিয়া সুলতানা মুমু : ঠিক ফ্যাশন ডিজাইনার হবো- এমনটা চিন্তা করিনি। যখন আমি ক্লাস থ্রি বা ফোরে পড়ি তখন আম্মুকে হাতের কাজ করতে দেখতাম। নানা ধরনের উলের কাজ, অ্যাম্ব্রয়ডারি, নকশি কাঁথার কাজ করতেন তিনি। যা দেখে ছোটবেলা থেকেই আমার ডিজাইনের প্রতি আকর্ষণ কাজ করত। কীভাবে প্যাটার্নে পরিবর্তন করতে হয়, ডিজাইনে ভিন্নতা কীভাবে আনা সম্ভব এগুলো আমাকে ছোটবেলা থেকেই ভাবাত। আমি নিজেকে এখনো ডিজাইনার বলি না। বলব আমি এখনো ডিজাইনার হওয়ার পথে আছি।
প্রশ্ন : এই পেশার সঙ্গে ফ্যাশনের কী সম্পর্ক আছে?
মারিয়া সুলতানা মুমু : ফ্যাশনের পুরো বিষয়টাই হচ্ছে আমাদের জীবনযাপনের ধারা। আমি ফ্যাশন ডিজাইনার বলে এ কথা বলছি না। আমার কাছে মনে হয়, প্রত্যেকটি পেশাই ফ্যাশনের সঙ্গে সম্পর্কিত।
প্রশ্ন : স্টাইল বা ফ্যাশন বলতে আপনি কী বোঝেন?
মারিয়া সুলতানা মুমু : স্টাইল একটা নির্দিষ্ট ধরন, যা মানুষকে উপস্থাপন করে। আর ফ্যাশন হচ্ছে পরিবর্তন। মূলত প্রতিনিয়ত সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় সেটাই ফ্যাশন।
প্রশ্ন : প্রতিটি মানুষের ফ্যাশন বিষয়ে গ্রুমিং থাকা কি প্রয়োজন?
মারিয়া সুলতানা মুমু : হ্যাঁ। তবে ফ্যাশন সম্বন্ধে আমাদের একটা ভুল ধারণা আছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন মনে করেন ফ্যাশন মানেই স্টাইলিশ বা পশ্চিমা কোনো পোশাক পরা। এই ধারণাটা একেবারেই ঠিক না। নিজেকে সুন্দর ও স্বাভাবিভাবে উপস্থাপন করার নামই ফ্যাশন। ফ্যাশনে গ্রুমিং না ফ্যাশন সম্বন্ধে ধারণা থাকা জরুরি। যাতে জীবন সুন্দরভাবে পরিচালনা করা যায়।
প্রশ্ন : পেশার ক্ষেত্রে আপনি কেমন পোশাক বেছে নেন?
মারিয়া সুলতানা মুমু : যখন নিজে ডিজাইনারের কাজ করি তখন সুতি বা লিলেনের সালোয়ার কামিজ কিংবা কুর্তি ও ডিভাইডার পরতে পছন্দ করি। কারণ খুব ভারি কিছু আমাকে ক্লান্ত করে দেয়। আমি মনে করি সবকিছুতেই পরিমিতবোধ থাকা জরুরি। যেটাই পরছি সেটার রং, অনুষঙ্গ যেন পরিমিত থাকে সেটা খেয়াল করি। সবার মনে রাখা উচিৎ, পোশাক যেন মানুষের ব্যক্তিত্বকে ছাপিয়ে না যায়।
প্রশ্ন : ব্যক্তিগত জীবনে কোন ধরনের সাজ পোশাক আপনার ভালো লাগে?
মারিয়া সুলতানা মুমু : শাড়ি আমার অনেক পছন্দ। আমার কাছে শাড়ি মানেই বিশেষ কিছু। কোনো পার্টি বা অনুষ্ঠাতে গেলে শাড়ির সঙ্গে মানানসই প্রতিটি জিনিস নিজের মতো করে ঠিক করে নেই। কারণ শাড়ির সঙ্গে সবকিছু মানানসই থাকা জরুরি।
প্রশ্ন : সেরা ফ্যাশন ডিজাইনার কে?
মারিয়া সুলতানা মুমু : দেশের মধ্যে মায়াসির এর মাহিন খানের কাজ আমার ভালো লাগে। আর ডিজাইনার রোকসানা সালামের পোশাকের প্যাটার্নও ভালো লাগে। ডিজাইনার কুহুর পোশাকের পেইন্টিং আমার খুবই পছন্দ। এ ছাড়া দেশের বাইরে ভ্যালেন্তিনো, আরমানি প্রাইভ, মার্ক জ্যাকোভের কাজ ভালো লাগে।
প্রশ্ন : আপনজনের কারো কোনো ফ্যাশন ট্রেন্ড এখনো কী ফলো করেন?
মারিয়া সুলতানা মুমু : তাঁতের শাড়ির প্রতি আমার অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। কারণ আমার মা অনেক সুন্দর করে চিকন পাড়ের তাঁতের শাড়ি পরতেন। কিন্তু আমার পেশা ও ব্যস্ততার কারণে খুব একটা পরা হয় না। তবে আমি যদি শিক্ষক হতাম তাহলে প্রতিদিন তাঁতের শাড়ি পরে ক্লাস নিতাম।
প্রশ্ন : কোন অনুষঙ্গটি আপনার বেশি ভালো লাগে?
মারিয়া সুলতানা মুমু : ঘড়ি ও সুগন্ধি আমার ভীষণ পছন্দ। আমি মনে করি সবার কালেকশনে অন্তত একটি কালো ও একটি সাদা বা সিলভার ও গোল্ডেন ঘড়ি থাকা উচিত। আমি একেক সময় একেক ধরনের সুগন্ধি দেই। রাতে, দিনে, পার্টি বা এক্সারসাইজের সময় আলাদা আলাদা সুগন্ধি দেই।
প্রশ্ন : পোশাক না অনুষঙ্গ কোনটিকে বেশি প্রাধান্য দেন?
মারিয়া সুলতানা মুমু : দুটোই। আমি মাঝে মাঝে সাধারণ পোশাক পরে এক্সক্লুসিভ গয়না পরি আবার গর্জিয়াস পোশাকের সঙ্গে হালকা গয়না পরি। কোনো কোনো জায়গায় গয়না না পরে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে সু ও ব্যাগ বাছাই করে নেই। আর কাঁচের চুড়ি আমার খুবই পছন্দ। আমার কাছে মনে হয়, যেকোনো পোশাকের সঙ্গেই এই চুড়ি মানানসই।
প্রশ্ন : কোন রঙের পোশাক পরতে বেশি ভালো লাগে?
মারিয়া সুলতানা মুমু : সাদা। সাদা-কালোর মিশ্রণের পোশাকও আমার ভালো লাগে। তবে রংটা পুরোপুরি নির্ভর করে কোথায় যাচ্ছি এর ওপরে।
প্রশ্ন : পার্লারে গিয়ে না বাসায় পরিচর্যা- কোনটিকে প্রাধান্য দেন?
মারিয়া সুলতানা মুমু : আমি পার্লারে যাই। কারণ পায়ের যত্ন বাসায় নেওয়া হয় না। আমার কাছে মনে হয়, প্রতিটি মানুষের পরিচ্ছন্ন থাকাটা খুবই জরুরি। তাই নিজের যত্ন নিতে হবে। পারলে মাঝে মাঝে স্পাতে যেতে পারেন। এতে মানসিক ও শারীরিক দুদিকেই শান্তি পাবেন।
প্রশ্ন : প্রতিটি নারীর কোন বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত?
মারিয়া সুলতানা মুমু : আত্মসম্মানবোধ। এটা নারী-পুরুষ সবার জন্যই বলছি। প্রত্যেকটি মানুষের এই বোধ থাকা জরুরি। আর অন্যকে সম্মান করাটাও জরুরি।
প্রশ্ন : চাকরিজীবি নারী বা কোনো পেশায় জড়িত থাকা নারীদের কী বাড়তি যত্ন নেওয়া জরুরি?
মারিয়া সুলতানা মুমু : শারীরিক যত্ন নেওয়া জরুরি। নারীরা অনেক বেশি দায়িত্ব পালন করেন। তাই তাদের পুষ্টির দিকে নজর দেওয়া উচিত। যাতে তার প্রাণশক্তি সচল থাকে।
প্রশ্ন : নিজেকে ফিট রাখতে কী করেন?
মারিয়া সুলতানা মুমু : মনকে খুশি রাখি, আশা জাগিয়ে রাখি। আমার একটা গুণের কমতি থাকতে পারে, কোনো কিছুর অভাব থাকতে পারে। কিন্তু এই বিষয়গুলোতে আমি কখনোই নেতিবাচক চিন্তা করি না। সবসময় ইতিবাক চিন্তা করি আর প্রাণ খুলে হাসি। এই দুটো জিনিস আমাকে সুস্থ রাখে। আর না খেয়ে ডায়েট করার পক্ষপাতি আমি না। সুস্থ থাকার জন্য সবকিছুই খাওয়া উচিত, তবে পরিমিত।