অনন্যা
কাজের জায়গায় আনন্দ খুঁজে বের করি : এন কে নাতাশা

আধুনিক নারীরা শুধু একটি কাজ নয়, নিজের যোগ্যতা আর দক্ষতা দিয়ে একাধিক কাজ করছেন পেশাদারিত্ব ও সাফল্যের সঙ্গে। তেমনি এক নারীকে নিয়ে আজকের অনন্যার আয়োজন। পেশায় চিকিৎসক। অধ্যাপনাও করেন। সে সঙ্গে টেলিভিশনে সংবাদ পাঠও করেন তিনি। বলছি ডক্টর এন কে নাতাশার কথা। কর্মজীবনের ব্যস্ততা, ঘর সামলানো, সে সঙ্গে মেয়েকে সময় দেওয়া—সবকিছু মিলিয়ে বেশ ভালোই সময় কাটছে ডক্টর নাতাশার। এত ব্যস্ততার মাঝেও নিজের সুস্থতা ও সৌন্দর্যের বিষয়েও তিনি বেশ সচেতন। এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে নিজের ফ্যাশন ও পছন্দ সম্পর্কে জানালেন এই সফল নারী।
প্রশ্ন : অনেক পেশা থাকতে ডাক্তার কেন হলেন?
এন কে নাতাশা : একেবারেই মা-বাবার ইচ্ছা, ছোটবেলা থেকেই জেনে এসেছি এটা মহৎ পেশা, আরেকটি হলো শিক্ষকতা। তাই পাইলট হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে আর চিকিৎসা ও অধ্যাপনা দুটোই বাস্তবে ধরা দিয়েছে। উপরি হিসেবে উপস্থাপনা।
প্রশ্ন : পেশার সঙ্গে নিজের ফ্যাশনটাকে কীভাবে তাল মেলান?
এন কে নাতাশা : আমি আসলে ফ্যাশনে বিশ্বাসী নই, আমি চলি নিজস্ব স্টাইলে। যেখানে প্রতিটি পেশারই যোগ রয়েছে। স্টাইল মানুষকে প্রেজেন্টেবল করে তোলে, আত্মবিশ্বাসী করে। একজন চিকিৎসককে মানুষ ভরসা করবে কীভাবে, যদি দেখেই শ্রদ্ধা না জন্মায় বা শিক্ষককে গুরু মানবে কেন, যদি অনুসরণযোগ্য না হয়? সংবাদ লোকে বিশ্বাস করবে কেন, যদি পাঠককে বিশ্বস্ত মনে না হয়? সেই মনে হওয়াটাই তো আমার মাপকাঠি। তাই ফ্যাশনেবল বা স্টাইলিশ যা-ই বলুন, আমার পেশায় গুরুত্বপূর্ণ বৈকি!
প্রশ্ন : স্টাইল বা ফ্যাশন বলতে আপনি কী বোঝেন?
এন কে নাতাশা : আমাকে যেটা ভালো লাগবে সেটা পরা; আমার গড়ন, বয়স, কাজের ধারায় যেটা ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমাকে মানাবে, আরামদায়ক হবে, স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেবে, সেটাই স্টাইল। খুব পছন্দ করে একটা কিছু পরলাম, কিন্তু সেটা ক্যারি করতেই কাহিল হয়ে গেলাম এমন যেন না হয়। ট্রেন্ড ফলো করাটা আমার কাছে জরুরি নয় কখনোই। আর পোশাকের চেয়েও বড় বিষয় ব্যক্তিত্ব, হাঁটাচলা, কথা বলা, তাকানো সবকিছুই নিজের স্টাইলে হওয়া চাই।
প্রশ্ন : প্রত্যেক মানুষের ফ্যাশন বিষয়ে গ্রুমিং থাকা কি প্রয়োজন?
এন কে নাতাশা : গ্রুমিং যদি প্রাতিষ্ঠানিক বলেন তো দরকার নেই, কিন্তু পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতা থেকে নিজস্ব স্বকীয়তায় শিক্ষা নেওয়াটা উচিত।
প্রশ্ন : পেশার ক্ষেত্রে আপনি কেমন পোশাক বেছে নেন?
এন কে নাতাশা : হাসপাতাল বা ক্লাস নেওয়ার সময় সালোয়ার-কামিজ পরা হয় বেশির ভাগ। তবে নতুন ব্যাচ বা ট্রেনিংয়ের সময় শাড়ি। আমি ভীষণ ঢিলেঢালা কাপড় পরি আমার চেয়ে দুই/তিন সাইজ বড়। তবে সংবাদ বা উপস্থাপনার সময় শাড়ি আর সেটা নির্দিষ্ট ঢঙেই পরা হয়।
প্রশ্ন : ব্যক্তিগত জীবনে কোন ধরনের সাজপোশাক আপনার ভালো লাগে?
এন কে নাতাশা : সাজ বলতে পরিচ্ছন্নতা আগে। পায়ের গোড়ালি, নখ, চুল সব পরিষ্কার থাকা চাই। জামা-জুতোও বটে। আর চোখ সাজাতে ভালোবাসি, কাজল চাই-ই চাই, কখনো শুধু মাশকারা। এর পর লিপস্টিক, তবে অত জরুরি নয়। ওহ হ্যাঁ, পারফিউম, এটা আরেকটা ‘মাস্ট’। ব্যাগেও ক্যারি করি সব সময় মিনিসাইজের।
প্রশ্ন : সেরা ফ্যাশন ডিজাইনার ও বিউটি এক্সপার্ট কে?
এন কে নাতাশা : ফ্যাশন ডিজাইনার ও রকম বলতে পারব না, কারণ প্রায়ই দেশি ফ্যাশন হাউসগুলো থেকে জামা কিনে নিজেই খানিক ভ্যালু অ্যাড করি বা পাজামা-ওড়না আমূল বদলে ফেলি। বিউটি এক্সপার্ট বলতে ফারজানা শাকিল, ওনার নিজের চোখের সাজ আমার দারুণ লাগে, আর কদাচিৎ হেয়ার কাট দিলে তিনিই আমার স্টাইলার। আসল বিউটি এক্সপার্ট অবশ্য আমার ডারমাটোলজিস্ট ডা. মতিউর রহমান। তিনিই আমার ত্বকের সব সমস্যার সমাধান করেন।
প্রশ্ন : আপনজনের কারো কোনো ফ্যাশন ট্রেন্ড এখনো কি ফলো করেন?
এন কে নাতাশা : ‘মা’। মা-ই আমার সবকিছুর আদর্শ, এখনো আমি আমার মায়ের মতো সুন্দর করে শাড়ি পরতে পারি না, চুল বাঁধতে পারি না। কিন্তু ছোটবেলা থেকে ফলো করেই যাচ্ছি।
প্রশ্ন : কোন অনুষঙ্গ আপনার বেশি ভালো লাগে?
এন কে নাতাশা : ঘড়ির প্রতি খানিক দুর্বলতা আছে বা ছিল, কিন্তু মোবাইল হারাই বলে এখন বাধ্য হয়েই স্মার্ট-টক ব্যান্ড ব্যবহার করছি। তারপরও বেড়াতে গেলে পছন্দের ঘড়িগুলো বের করে পরি।
প্রশ্ন : পোশাক না অনুষঙ্গ, কোনটি বেশি প্রাধান্য দেন?
এন কে নাতাশা : ঠিক নেই, অনেক সময় সুন্দর একটা মালা পেলে তার সঙ্গে মিলিয়ে শাড়ি খুঁজে বের করি। বাকি সময় অনুষঙ্গ তেমন ব্যবহারই হয় না।
প্রশ্ন : কোন রঙের পোশাক এবং কোন ধরনের পোশাক পরতে বেশি ভালো লাগে?
এন কে নাতাশা : সাদা আমার সব সময়ের প্রিয় রং, তবে হলুদ, পার্পল আর নীলও বেশ পরা হয়। লম্বা সময়ের জন্য হলে ঢিলে সুতির সালোয়ার-কামিজ, দেশের বাইরে গেলে ঢলঢলে শার্ট আর জিন্স, আমি স্নিকার পরতে খুব ভালোবাসি। ফতুয়ার সঙ্গেও স্নিকার চলে। দাওয়াত, সংবাদ বা উপস্থাপনায় শাড়ি আর সেখানে জামদানি এক নম্বর।
প্রশ্ন : পার্লারে গিয়ে না বাসায় পরিচর্যা—কোনটি প্রাধান্য দেন?
এন কে নাতাশা : এ বিষয়ে আমি পুরো আনাড়ি। আমি কখনোই পার্লারে যাই না। হেলদি স্কিনের জন্য পরিচ্ছন্নতা কিংবা সমস্যা হলে ডারমাটোলজিস্ট। দিনে দুবার বা তিনবার গোসলও করি খুব ধুলো-ময়লায় গেলে। আর প্রতিবার শ্যাম্পু অবশ্যই করি।
প্রশ্ন : প্রত্যেক নারীর কোন বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত?
এন কে নাতাশা : নিজের শিক্ষা ও মর্যাদার প্রশ্নে প্রত্যেক নারীর তীক্ষ্ণভাবে সচেতন হওয়া দরকার। নিজেকে শিক্ষিত করে না তুললে, আর্থিক অর্জন না থাকলে মুক্তি আসবে না। সে জন্য নিজের শরীর ও মনের যত্ন নিতে হবে, নিজেকে সময় দিতে হবে কতটা পেরেছি আর কতটা পারতে হবে হিসাব রাখার জন্য।
প্রশ্ন : চাকরিজীবী নারী বা কোনো পেশায় জড়িত থাকা নারীদের কি বাড়তি যত্ন নেওয়া জরুরি?
এন কে নাতাশা : অবশ্যই, খাবার, বিশেষ করে শরীরে যেন পানির ঘাটতি না হয়, সেটা মাথায় রাখতে হবে। যেভাবেই হোক, খুঁজে খুঁজে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, ব্যালান্সড ডায়েট হতে হবে। বাড়তি ক্যালসিয়াম ও আয়রন খেতে হতে পারে অনেকের। মনের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিনোদন খুঁজতে হবে। হতে পারে বেড়ানো বা গান শোনা বা সিনেমা দেখা। বাইরের কাজের চাপ বাড়িতে বয়ে নিয়ে আসা চলবে না। সঠিক নিয়মে অফিসে বসে থাকার কাজগুলো করতে হবে, হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস রাখতে হবে।
প্রশ্ন : নিজেকে ফিট রাখতে কী করেন?
এন কে নাতাশা : যা ভালো লাগে তা-ই খাই, কিন্তু অল্প আর সেটাকে ব্যালান্স দিতে পরের বেলায় ক্যালরি আর ফুড ভ্যালু হিসাব করে খাই। চা একদম খাই না। প্রচুর পানি খাই। প্রতিদিন শাক আর কাঁচা পেঁপে সেদ্ধ খাই পেট পরিষ্কার রাখতে। মাছ বা মাংস প্রতিবেলায় থাকলেও স্বল্প পরিমাণে, ডাল কম খাওয়া হয়। সপ্তাহে চার দিন ফ্যাটফ্রি মিল্ক আর একটা ডিম খাই। ব্যায়াম করা হয়ে ওঠে না, হাসপাতালেই অনেকটা হেঁটে আর সিঁড়ি বেয়ে ওঠার চেষ্টা করি। মন ভালো থাকলেই আসলে শরীর ভালো থাকে, এটা আমি বিশ্বাস করি। খামোখা না পেঁচিয়ে সারা দিনে প্রচুর আনন্দ করার চেষ্টা করি। কাজের জায়গায় আনন্দ খুঁজে বের করি, বাসায় ফিরে তো কথাই নেই। নিয়ম করে ঘুরতে যাই। মেয়ের সঙ্গে গেম খেলি, মুভি দেখি। মোটকথা, আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে, কুড়িয়ে নিয়ে হাঁটো সামনে।