৩০ বিষয়, যা বুঝতে মানুষ দেরি করে ফেলে
শৈশব থেকে কৈশোর, তারুণ্য, মধ্যবয়স পেরিয়ে মানুষ বার্ধক্যে এসে উপনীত হয়। জীবনের ধাপে ধাপে অতীতের অনেক ঘটনাই তাঁকে ভাবনার রাজ্যে ফেলে দেয়। প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির যোগসূত্র মেলাতে গিয়ে বেশিরভাগই ফেলে আসা দিনের ভুলগুলো নিয়ে আক্ষেপ করে থাকেন। নিজের মানসিক অপরিপক্বতার প্রতি বিরক্ত হয়ে কেউ কেউ অঞ্জন দত্তের গানের লাইন আওড়ান—‘আমার বয়স বাড়ে, আমি বাড়ি না।’ পরিণত বয়সে সেসব আফসোস থেকে উদ্ধার পেতে জেনে নিতে পারেন অভিজ্ঞতাপ্রসূত ৩০ উপলব্ধি।
জীবনধারাবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘সেলফ মেড’-এর সৌজন্যে সেই বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলো এখানে।
৩০. সবকিছু ক্ষণস্থায়ী
চিরস্থায়ী বলে কি কিছু আছে? আমরা যতই কোনো কিছু টিকিয়ে রাখতে চাই না কেন, একদিন অবধারিতভাবেই তার শেষ হবে। সারাজীবন একসঙ্গে থাকার প্রতিজ্ঞা নিয়ে দাম্পত্যজীবন শুরু হয়। সে সম্পর্কেও ঘুণ ধরে, বাজে ভাঙনের সুর। তরুণ বয়সে সবকিছুই দীর্ঘস্থায়ী মনে হয়। আসলে তা নয়। জীবনের নেতিবাচক বিষয়গুলোও ক্ষণস্থায়ী। কারণ, জীবনের খারাপ সময়ও একদিন শেষ হয়। আর এটাই সত্য। সুসময় আসবেই—এ ভাবনা কঠিন সময়ে সামলে উঠতে সাহায্য করতে পারে আপনাকে।
২৯. কাউকে দোষারোপ করবেন না
অনেকেই জীবনের ছোট ছোট বিষয়ে অভিযোগ করতে থাকেন। আবহাওয়া, ট্রাফিক, বাজে খাবার—অভিযোগের যেন শেষ নেই। একটু ভেবে দেখুন—আপনার হাতের কাছে ইন্টারনেট রয়েছে, আপনি একজন শিক্ষিত মানুষ। আপনার চেয়েও বিশ্বে আরো অসহায়, আরো খারাপ অবস্থায় থাকা মানুষও রয়েছে। আপনার এ জন্য নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করা উচিত। আসলে অভিযোগ করে শুধু মনে অশান্তি বাড়ে, কাজের কাজ কিছু হয় না। এর বদলে আপনার জীবনে যা যা ইতিবাচক রয়েছে, সেগুলোর প্রতি দৃষ্টি দিন। মন অনেকটা শান্ত হবে।
পাশাপাশি কেবল নিজের কথা না ভেবে অন্যের অবস্থাও চিন্তা করুন। আপনি কি অভিযোগ শুনতে ভালোবাসেন? আসলে কেউই সারাক্ষণ অভিযোগ শুনতে পছন্দ করেন না। তাই সারাক্ষণ অভিযোগ করার অভ্যাস ত্যাগ করাই মঙ্গল।
২৮. জীবন ত্রুটিমুক্ত নয়
জীবন ত্রুটিমুক্ত নয়। কেউ কেউ জীবনে সফলতা পেতে প্রতারণা করে, ভুল পথ ধরে, অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তারা এভাবেই নিজেকে বড় করতে চায়। কথায় আছে—যেমন কর্ম, তেমন ফল। ভালো কাজ করলে ভালো ফল আসে, খারাপ কাজ করলে খারাপ।
তবে জীবনের ত্রুটি সম্পর্কে ভাবতে গিয়ে শক্তিক্ষয় করতে যাবেন না। বরং কীভাবে সেই পথ থেকে বেরিয়ে আসা যায় বা সঠিক কাজ করা যায়, তা ভাবুন। সেজন্যই গুরুজনেরা বলেন, অতীত ভেবে লাভ নেই।
২৭. নির্ভয়ে বাঁচুন
অনেকেই সারাজীবন ভয়ে-ভয়ে বাঁচেন। হারানোর ভয়, দুঃখ পাওয়ার ভয়—আরো কত ভীতি ভর করে তার মনে। ভয়ে পেয়ে কোনো লাভ নেই। যা হওয়ার তা-ই হবে। বেশিরভাগ সময় আমাদের মনে ভয় বাসা বেঁধে থাকে। যখনই পারবেন, একে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবেন। দেখবেন, সব সহজ হয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত অভিনেতা উইল স্মিথ একবার বলেছিলেন, ‘আপনি যে বিষয় নিয়ে ভয় পাচ্ছেন, সেটি আসলে মিথ্যা। ভয়ের সঙ্গে প্রতিদিনের সংঘাত আমার কাছে সত্যিকারের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।’ বন্ধুর সঙ্গে স্কাইড্রাইভিং করার একটি গল্পের বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি ওই কথা বলেন। আগের রাতে ভয়ের জন্য তিনি ঘুমাতে পারছিলেন না। লাফানোর সময়ের কথা ভেবে তিনি সারাদিন ভয়ে কাটিয়েছেন। এর পর তিনি বুঝলেন, ভয় পাওয়ার কিছু ছিল না এবং সেটি ছিল অসাধারণ অভিজ্ঞতা। তিনি বুঝলেন, ভয় পাওয়া আসলে সময়ের অপচয়।
২৬. বন্ধুর চেয়ে পরিবারকে গুরুত্ব দিন
তরুণ বয়সে বন্ধুদেরই গোটা দুনিয়া মনে হয়। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর তুলনায় বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতেই তাঁরা বেশি আনন্দবোধ করেন। তবে দিনশেষে পরিবারই কিন্তু সেই জায়গা, যেখানকার মানুষ আপনাকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসবে। বন্ধুরা আসে, চলেও যায়। প্রেমিক বা প্রেমিকারও বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তবে পরিবারের সদস্যরা সব সময় পাশে থাকেন। বন্ধুদের ত্যাগ করতে হবে, এ কথা বলছি না। বলছি বন্ধু ও পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে।
২৫. অর্থ দিয়ে সুখ কেনা যায় না
টাকা জীবনের অনেক বিষয়েই সাহায্য করে। টাকা থাকলে অনেক সমস্যার সমাধান সহজে হয়ে যায়। তবে টাকা দিয়ে ভালোবাসা কেনা যায় না; প্রকৃত বন্ধু পাওয়া যায় না। এটি আপনাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাত ঘণ্টাও সুখ দিতে ব্যর্থ। এমনকি পৃথিবীর অনেক ধনী ব্যক্তির জীবনে অনেক খারাপ দিন যায়, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁরাও অশান্তিতে ভোগেন।
তবে এক গবেষণায় দেখা যায়, যাঁদের প্রচুর টাকা, তাঁরা এমন অনেক কিছুই করতে পারেন, যেগুলো তাঁদের সুখ দেয়। এতে মানসিক চাপ কমে। অবশ্য এর উল্টো কথাও রয়েছে—‘বেশি টাকা, বেশি সমস্যা’।
২৪. অন্যকে বদলানোর চেষ্টা করবেন না
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ বিয়ে শেষ হয় তালাকের মাধ্যমে। বিবাহবিচ্ছেদের অন্যতম কারণ, একজন আরেকজনের উপযুক্ত নয়, এমন ভাবনা। অনেকে তো খুব খোলামেলাই বলেন, স্বামী বা স্ত্রীর ব্যক্তিত্ব নিয়ে তার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তাঁরা ভাবেন, একদিন তাঁর স্বামী বা স্ত্রী হয়তো বদলাবেন।
তবে সত্যটা হলো, অধিকাংশই আসলে বদলান না। বছরে পর বছর তাঁদের আচরণ একই রকম থেকে যায়। তাই বিয়ে করতে চাইলে মানসিকভাবে এ প্রস্তুতি রাখাই ভালো যে মানুষটি এখন যেমন রয়েছেন, ভবিষ্যতেও তেমনই থাকবেন; আপনি তাঁকে যতই ভালোবাসেন বা ঠিকঠাক করার চেষ্টা করেন না কেন। অপরকে বদলাতে চেয়ে লাভ নেই। সম্ভব হলে নিজেকে বদলান। তাঁকে তাঁর মতোই থাকতে দিন।
২৩. নিজেকে ভালোবাসুন, সম্মান করুন
নিজেকে ভালোবাসুন, সম্মান করুন। যখন আপনি নিজেকে সম্মান করতে শুরু করবেন, তখন অন্যরাও আপনাকে সম্মান করবে। অধিকাংশ সময়ই আমরা নিজেকে ভালোবাসার কথা ভুলে যাই। অতীতের ভুলের জন্য নিজেকে ক্ষমা করুন। আপনি যা হতে চান, সেভাবেই নিজেকে উপস্থাপন করুন।
নিজেকে এভাবে ভাবুন—আপনি একটি নতুন শহরে বেড়াতে গেছেন। আর সেখানে আপনাকে কেউ চেনে না। এরা আপনার অতীত জানে না। তারা আপনাকে কেবল বর্তমান সময়ের ওপর বিচার করবে। আপনিই আপনার সঙ্গে সারা জীবন থাকবেন। তাই নিজেকে ভালোবাসুন, শ্রদ্ধা করুন।
২২. সারা জীবন ঘোরে কাটাবেন না
অনেকেই ঘুম থেকে ওঠেন, চাকরি করতে যান, অফিস থেকে ফিরে টিভির সামনে বসে পড়েন। এটি চক্রের মধ্যে ঘোরা। সেটাই করুন, যার জন্য আপনি উৎসাহী। জীবন কিন্তু একটাই। আমরা বলছি না, আপনি চাকরি করবেন না। তবে চক্রের মধ্যে ঢুকে জীবন অপচয় যেন না হয়, সেদিকেও নজর রাখুন।
২১. আপনি যতটা ভাবছেন, মানুষ আপনাকে নিয়ে ততটা ভাবছে না
অনেকে সারাজীবন নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। লোকে কী ভাবছে, কী বলছে—এসব নিয়ে সারাক্ষণ ভয় পান। তবে আপনি যতটা ভাবেন, লোকে আপনাকে নিয়ে ততটা ভাবে না। এভাবে ভাবতে পারলে উদ্বেগ কমবে। অন্যদিকে ভেতর থেকে সৎ ও আত্মবিশ্বাসী হলে এসব ভাবনা আপনাকে কখনো কাবু করতে পারবে না।
২০. পড়া থামাবেন না
অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা একাডেমিক পড়াশোনা শেষ করার পর আর বই ছুঁয়েও দেখেন না। পড়ার অভ্যাস কখনো বাদ দেবেন না। যাঁরা পড়া চালিয়ে যান বা বিভিন্ন বইপত্র পড়েন, তাঁরা কিন্তু নতুন নতুন বিষয় বা জগতের সন্ধান পান। বই না পড়লে জগতের অনেক মজার বিষয় আপনি মিস করবেন।
১৯. নিজের গন্তব্য জানুন
স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন সবাই। তবে অনেকে জানেন না, কীভাবে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। সফলতার পথ সব সময় পরিষ্কার নয়। আর এ জন্য পিছিয়ে যান অনেকে। প্রথমে কীভাবে এগোবেন, সেটি না ভেবে ভাবুন আপনি এগোবেন। এ ইচ্ছাশক্তিই আপনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। পথে না নামলে কীভাবে পথ পরিষ্কার হবে, বলুন? তাই, চেষ্টা করুন।
১৮. আজকের ত্যাগে সোনালি আগামী
অনেকেই হয়তো রেস্টুরেন্টে গিয়ে প্রতিদিন দামি কফি বা খাবার খান। তবে এই ছোট ছোট অভ্যাস ত্যাগ করা কিন্তু অপচয় থেকে রক্ষা করবে আপনাকে। ধীরে ধীরে এ টাকা সঞ্চয় আপনাকে ভবিষ্যতে বড় কিছু করতে সাহায্য করবে।
১৭. সুখ নির্ভর করছে আপনার ওপর
জীবন যেভাবেই চলুক না কেন, সুখী হওয়া কিন্তু আপনার হাতে। কিন্তু খুব মনখারাপ বা রেগে রয়েছেন; হঠাৎ করেই মন ভালো করে ফেলতে পারবেন না আপনি। তবে এ মনখারাপের বিষয়কে দীর্ঘস্থায়ী করবেন কি না, সেটি কিন্তু আপনার হাতে। বিষণ্ণতার মধ্যে থাকলে বিষয়টি অত সহজ নয়। এর পরও ধীরে ধীরে এটি থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করুন । এমন কোনো কাজ করুন, যেটি আপনাকে সুখী করবে।
কোনো সম্পর্ক বা অর্থ আপনাকে সুখী করতে পারবে না। সুখ এলে ভেতর থেকে আসে। অনেক ধনী, বিবাহিত মানুষ রয়েছেন, যাঁরা জীবনে হয়তো কখনো সুখী হননি। তাই যা রয়েছে, তাই নিয়ে সুখী হোন; ইতিবাচক হোন।
১৬. নিজের যত্ন নিন
তরুণ বয়স থেকেই স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হোন। তরুণ বয়সে শরীরের যত্ন না নিলে একপর্যায়ে ডায়াবেটিস, ক্যানসার, হৃদরোগের মতো ব্যাধি জেঁকে বসতে পারে। শেষ পর্যন্ত অনেকেই হয়তো নিজের যত্ন নিতে শুরু করেন। তবে অনেক দেরি করে।
১৫. বেশি প্রত্যাশা করবেন না
অনেক সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় কেবল অতিরিক্ত প্রত্যাশার কারণে। এটা যেমন সহকর্মীদের ক্ষেত্রে, তেমনি হয় বন্ধুদের বেলায়ও। অন্যের কাছে প্রত্যাশা বেশি করলে আপনি হতাশ হতে বাধ্য। মনে রাখবেন, আরেকটি মানুষ কখনোই আপনার মন পড়তে পারবে না। তাঁরা জানেন না, আপনি কী চান। আবার তাঁরা আপনাকে বুঝলেও আপনার নির্দেশ বা দাবি মানতে বাধ্য নন। মানুষ কেবল নিজেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে হতাশ হতে হয়।
প্যারিস সিনড্রোমের কথাই ধরুন। জাপানিরা অনেক আশা নিয়ে প্যারিসে ভ্রমণে যায়। কেউ কেউ গিয়ে ভীষণভাবে হতাশ হয়ে পড়ে। জাপানিরা জাতি হিসেবে কঠোর পরিশ্রমী ও গোছানো। তবে ভালোবাসার নগরী প্যারিস অত্যন্ত সুন্দর হলেও এর সংস্কৃতি জাপানিদের কিছুটা অসুস্থ করে তোলে। অনেক জাপানির তো বিভ্রান্তিকর চিন্তা, উদ্বেগ, ঝিমুনি ভাব, ঘামের সমস্যা দেখা দেয়।
প্রতিবছর প্রায় ছয় মিলিয়ন জাপানি প্যারিসে ভ্রমণ করে। এদের মধ্যে প্রায় ২০ জনকে আবার ফেরত আসতে হয় ওইসব সমস্যার কারণে।
১৪. ভয় পাবেন না, নতুন কিছু করুন
নতুন কিছু করতে গেলে আমরা বেশিরভাগ সময় সংকোচবোধ করি। কেউ কেউ তো তাঁদের বন্ধু, সহকর্মীদের বিষয়টি বলতে প্রায় আতঙ্কবোধ করেন। দিনশেষে অন্যের কথায় কিছু যায়-আসে না। আপনি কেবল আপনার জীবনই যাপন করবেন। তাই যেভাবে চান, যৌক্তিকভাবে যাপন করুন। এমন কাউকে খুঁজে বের করুন, যে আসলে আপনারই মতো। দেখবেন, কিছুটা স্বস্তি লাগবে।
১৩. বস্তুগত বিষয় গুরুত্বপূর্ণ নয়
শুধু পছন্দসই জিনিস কেনার জন্য অনেকেই ধনী হতে চান। তবে দিনশেষে এগুলো কেবল বস্তুগত জিনিস। যে সময়ে আপনি ওই জিনিসটি চেয়েছিলেন, সেই সময়ের কথা একটু মনে করুন তো। হয়তো জিনিসটি পাওয়ার জন্য উদ্বেগ কাজ করেছে আপনার ভেতর। আসলেই কি বস্তুটি আপনাকে সুখী করতে পেরেছে? উত্তর পাবেন নিজেই।
১২. সুদিন আসবেই
যত অন্ধকারই থাকুক না কেন, সুড়ঙ্গের শেষ মাথায় আলো রয়েছে। আসলে মাঝেমধ্যে যন্ত্রণা-কষ্ট আমাদের এমনভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে, মনে হয় যেন এর শেষ নেই। এ থেকে বিষণ্ণতার মতো মনোরোগ তৈরি হয়; বিশেষ করে খারাপ সময়ে নিজেকে সামলাতে না পারলে এমন ঘটে। বিচ্ছেদ, মৃত্যু, চাকরি চলে যাওয়া ইত্যাদি মানুষকে ভেঙে দিতে পারে। তবে এটাও ভাবুন, এসব বিষয় আপনাকে অবিশ্বাস্য রকম শক্তিশালীও করে দেয়। ভবিষ্যতে এমন কোনো কষ্টের মুখোমুখি হলে ভাবুন, বিষয়গুলো ক্ষণস্থায়ী। একটা সময় ভোরের আলো দেখতে পাবেন।
১১. সবাই নিজের কথা ভাবে
কখনো কখনো মনে হতেই পারে, আপনার জীবনের প্রতি সঠিক বিচার হয়নি। আপনি হয়তো বা তাঁর কাছ থেকেই সবচেয়ে বড় আঘাতটি পেয়েছেন, যাঁকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করতেন বা ভালোবাসতেন। তবে সত্য হলো, দিনশেষে সবাই নিজের বিষয়েই আগে ভাবে। সবাই নিজের জায়গা থেকেই ভাববে, আপনার জায়গা থেকে ভাবার মানুষ খুব কম। একটু তাঁদের মতো করে ভাবুন, দেখবেন কিছুটা সহজ লাগছে সব।
১০. বয়স কেবল একটি সংখ্যা
২০ বছর বয়সে বেশিরভাগ ব্যক্তিই ভাবেন, জীবনে বড় হতে হবে। ভালো চাকরি বা ব্যবসা করতে হবে। বিয়ে করতে হবে, এরপর সন্তান লালনপালন। বুড়ো হয়ে যাওয়ার আগে-আগে বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনতে হবে। তাঁরা ভাবেন, এসব না হলে বোধহয় জীবন শেষ। আসলে বয়স একটি সংখ্যা মাত্র। এই ম্যারাথন দৌড় চলতে থাকে জীবনের শেষ অবধি। তবে আপনি নিজেকে যতটা বয়সী ভাবছেন, ততটা কিন্তু নন। নিজের প্রতি যত্ন নিন। বয়স যতই হোক, স্বপ্ন দেখা ছাড়বেন না।
৯. ক্ষমা করতে শিখুন (এমনকি অন্যরা না করলেও)
জীবনের কোনো না কোনো সময় কেউ না কেউ আমাদের আঘাত করে। অসন্তোষ বা হিংসা এমন বিষয়, যেটি মানুষের ভেতরকে বিষাক্ত করে দেয়। বেশিরভাগ মানুষই কিন্তু আমাদের আঘাত করার পর আর ক্ষমা চান না। যদি ভাবেন, সে এসে ক্ষমা চাইবে, তবে সে মুহূর্ত আর না-ও আসতে পারে।
কিন্তু আপনি ক্ষমাশীল হোন। ক্ষমা মনে শান্তি দেয়। ক্ষমা করলে বিষয়টি আপনাকে আর যন্ত্রণা দেবে না। এমনও হতে পারে, মানুষটি আবার ফিরে এলো, আর আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইল। হয়তো আপনি আর তাঁকে বিশ্বাস করতে পারবেন না। তবে আলাপ-আলোচনার জায়গা অন্তত সহজ হবে।
৮. অহংকে প্রশ্রয় দেবেন না
কখনো কখনো অহংবোধ আমাদের কাছে সবকিছু হয়ে যায়। নিজেদের অহং নিয়ে বেশি চিন্তা করা আমাদের আত্মকেন্দ্রিক করে তোলে; সাফল্য ও সুখের পথে বাধা দেয়। নিজে কথা বলার আগে অপরজন আপনাকে কী বলতে চাচ্ছে, সেটি শুনুন। শোনার অভ্যাস করুন। এ অভ্যাস মানুষের কাছে আপনাকে প্রিয় হতে সাহায্য করবে। এতে বন্ধনও মজবুত হবে।
৭. অপরের কষ্টের কথা ভাবুন
সারা দিনই তো প্রচুর শুভকামনা, ভালো থাকার বার্তা পান। আসলেই কি ভালো থাকেন? সত্য হলো, সবাই সমস্যায় ভোগেন। বৌদ্ধমতে ‘দুঃখ’ বলে একটি ধারণা রয়েছে। বলা হয়, জগৎ দুঃখময়। প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে দুঃখের ভেতরেই ঘুরপাক খাচ্ছেন। সম্পর্কে অবনতি, কাজের চাপ, বাড়িওয়ালার ভাড়া দেওয়া ইত্যাদি কারণে মানুষ চাপের মধ্যে থাকেন। সেজন্য মাঝে মাঝে অপরের বেদনার দিকেও তাকান, নিজের কষ্ট হালকা হবে। কবি বলেছেন, ‘অপরের দুঃখকথা করিলে চিন্তন, আপনার মনে দুঃখ রয় কতক্ষণ?’
৬. বর্তমানে বাঁচুন
অনেকেই বর্তমান ভুলে গিয়ে অতীত আর ভবিষ্যতের মধ্যে বাঁচেন। অতীত মধুর না হলে আর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত থাকলে চাপ দূর হবে কী করে? উদ্বেগ দূর করার খুব ভালো উপায় হলো বর্তমান নিয়ে বাঁচা।
৫. সাহায্য চাইতে লজ্জা করবেন না
মানুষ দুর্বল ভাববে, এই শঙ্কায় অনেকে অন্যের কাছে সাহায্য চান না। তবে সব সময় এ ধারণা আপনার সফলতার পথে বাধা তৈরি করবে। তাই সাহায্য চাইতে লজ্জা করবেন না।
এমনও হতে পারে, নিজেকে যখন আপনি মেলে ধরবেন, অন্যরাও তাঁদের সমস্যার কথা আপনাকে সহজে বলে ফেলবে। এতে দেখবেন, জীবনযুদ্ধে কেবল আপনি হিমশিম খাচ্ছেন না, অনেকেই এ লড়াইয়ের ভেতর রয়েছেন। আপনি মানুষের আরো কাছে আসতে পারবেন।
৪. ঘুরুন, বিশ্বকে দেখুন
অনেকে ভাবেন, দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানো মানে টাকার অপচয়। মনে রাখবেন, আপনি যতই ঘুরে বেড়ান না কেন, পৃথিবীর কোনো না কোনো অংশ রয়েই যাবে, যা আপনি হয়তো দেখেননি। ভ্রমণ টাকার অপচয় নয়। এটি জীবনকে নতুনভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করে, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি খুলে দেয়।
৩. যা বোঝাতে চান, তা-ই বলুন
অনেকেই প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়ে নিজের আবেগ লুকিয়ে রাখেন। নিজেকে ঠিকমতো প্রকাশ করেন না। এটা আসলে বোকা বোকা চিন্তা। প্রত্যাখ্যাত হোন, তাতে কী। অন্তত আপনি তো আপনার সত্য অনুভূতিটা প্রকাশ করলেন। অন্তত নিজের সঙ্গে তো প্রতারণা করতে হলো না আপনার।
২. জীবনকে উপভোগ করুন
জীবনকে উপভোগ করুন। কথাটি নীতিবাক্য বলে মনে হচ্ছে? তবে সত্য হলো, বেশিরভাগ মানুষই জীবনকে উপভোগ করতে ভুলে যান। মানুষ যত পরিণত হয়, তত পেশাদার ও গম্ভীর হয়ে ওঠে। এতে ছোট ছোট বিষয় নিয়ে আনন্দ করতে ভুলে যায় মানুষ। বিরতি দিন, দূরে কোথাও বেড়াতে যান। অফিস করা, নয় থেকে ১০ ঘণ্টা পরিশ্রমের বাইরেও জীবনে অনেক কিছু রয়েছে।
১. জীবন দীর্ঘস্থায়ী নয়
জীবন দীর্ঘস্থায়ী নয়। তবে তরুণ বয়সে এ কথা আমরা মনে রাখি কজন? রাতে আট ঘণ্টা ঘুমিয়ে আর দিনে আট থেকে নয় ঘণ্টা অফিস করে নিজের সঙ্গে কতটুকু সময় কাটানো যায়? আর বয়স বাড়লে জীবন যেন আরো দ্রুত দৌড়ায়। তাই গণ্ডির ভেতর আটকে না থেকে সামনে এগিয়ে যান।