বাংলাদেশেই বিশ্বমানের লিফট বা এলিভেটর তৈরি করছে ওয়ালটন। ইউরোপীয় প্রযুক্তিতে তৈরি উচ্চমানসম্পন্ন এসব লিফট নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করছে তারা। অত্যাধুনিক ফিচারসমৃদ্ধ ওয়ালটন লিফট দামে সাশ্রয়ী। ফলে উচ্চমূল্যে বিদেশ থেকে লিফট আনার প্রয়োজন নেই। ওয়ালটন লিফট কেনা যাচ্ছে পাঁচ বছরের কিস্তি সুবিধায়।

বাজার-সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে বার্ষিক লিফটের চাহিদা তিন হাজার ইউনিটেরও বেশি। বিদেশ থেকে এ পরিমাণ লিফট আমদানিতে ব্যয় হয় আনুমানিক ৮০০ কোটি টাকারও বেশি। দেশেই বিশ্বমানের লিফট তৈরি হওয়ায় বিদেশ থেকে লিফট কেনা এখন বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু নয়।

এতে একদিকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে দেশীয় ভারী শিল্পপণ্য উৎপাদনে গতি এসেছে। এ খাতে তৈরি হচ্ছে দক্ষ জনবল।

জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে রয়েছে দুই ধরনের ওয়ালটন লিফট—প্যাসেঞ্জার ও কার্গো লিফট। প্যাসেঞ্জার লিফটের ধারণক্ষমতা ৩০০ কেজি থেকে তিন হাজার কেজি পর্যন্ত। এসব লিফটে চার থেকে ৪০ জন প্যাসেঞ্জার বহন করা যায়। অন্যদিকে কার্গো লিফটের ধারণক্ষমতা ৮০০ কেজি থেকে চার হাজার ৫০০ কেজি পর্যন্ত।

লিফটের সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবায় ওয়ালটনের রয়েছে নিজস্ব সার্ভিস টিম। আছে ফ্রি ইন্সটলেশন সুবিধা। লিফট কেনার এক বছরের মধ্যে কোনো যন্ত্রাংশে সমস্যা হলে সম্পূর্ণ ফ্রিতে ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আছে এক বছরের ফ্রি মেইনটেইন্যান্স সুবিধা। লিফটের যেকোনো সমস্যায় তাৎক্ষণিক সার্ভিস টিম পৌঁছে যাচ্ছে গ্রাহকের কাছে।

গাজীপুরে অবস্থিত ওয়ালটনের নিজস্ব বিশাল কারখানায় ক্রেতারা সরেজমিনে দেখে কিনতে পারবেন ওয়ালটনের লিফট। ওয়ালটন লিফটে রয়েছে রিমোট মনিটরিং সিস্টেম। ফলে ফ্যাক্টরিতে বসেই দেশের যেকোনো প্রান্তে বিক্রয়োত্তর সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। ওয়ালটনের লিফটে রয়েছে ডোর লোড ডিটেক্টর, ওভার লোড সেন্সর ও অটোমেটিক রেসকিউ ডিভাইসের (এআরডি) মতো তিনটি অত্যাধুনিক ফিচার।

এ ছাড়া সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মেশিনারিজ—ট্র্যুপাঞ্চ (জার্মানি), ট্র্যুবেন্ড (জার্মানি), ওয়াটার জেট কাটিং মেশিন (যুক্তরাষ্ট্র), ইউনিভার্সাল মিলিং মেশিন (তাইওয়ান), প্লানোমিলার (তাইওয়ান), লেজার কাটিং (চীন), অটোমেটেড গ্যাস কাটার ও ওয়েল্ডিং মেশিনসহ অনেক যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে তৈরি করা হচ্ছে ওয়ালটন লিফট।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওয়ালটনের লিফট বাজারজাত করার আগে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়। লিফট তৈরিতে ইউরোপীয় নিরাপত্তা কোড—ইএন ৮১-২০, ইএন ৮১-৫০ ও ইএন ৮১-৭০ অনুসরণ করে ওয়ালটন।

ওয়ালটন লিফট বিভাগের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) সোহেল রানা জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে দেশেই লিফট তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করে ওয়ালটন। সে অনুযায়ী অবকাঠামো নির্মাণ, গবেষণা ও মান উন্নয়ন বিভাগ, ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আনা অত্যাধুনিক মেশিনারিজ স্থাপন করে প্রতিষ্ঠানটি। লিফটের ডিজাইন, উৎপাদন ও ইন্সটলেশনে নিযুক্ত আছেন দক্ষ একঝাঁক দেশীয় প্রকৌশলী, ডিজাইনার ও টেকনিশিয়ান। ওয়ালটনের কারখানা ও করপোরেট অফিস ভবনসহ সব ধরনের স্থাপনায় ব্যবহৃত হচ্ছে নিজেদের তৈরি লিফট। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাণিজ্যিকভাবে লিফট বিক্রি করছে ওয়ালটন।

ওয়ালটন লিফট বিভাগের চিফ অপারেটিং অফিসার প্রকৌশলী সবুজ আলম জানান, একমাত্র ওয়ালটনই ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী বাংলাদেশে লিফট তৈরি করছে। আমদানি করা লিফটের তুলনায় ওয়ালটনের তৈরি লিফট পাওয়া যাচ্ছে প্রায় অর্ধেক মূল্যে। এসব কারণে লিফট কেনায় বিদেশ নির্ভরতা কমবে বলে তিনি আশাবাদী।

সবুজ আলম আরো বলেন, ‘শোনা যাচ্ছে, অর্থ অপচয় করে অনেকেই বিদেশে যাচ্ছেন লিফট কিনতে। অথচ দেশেই পাওয়া যাচ্ছে সাশ্রয়ী মূল্যে শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক ভবনসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যাধুনিক লিফট।’