দেড় শতক হাঁকিয়েছে পেঁয়াজ!
শতক পেরিয়ে ধীরে ধীরে দেড় শতক হাঁকিয়েছে পেঁয়াজ। না, এ পেঁয়াজ ক্রিকেট মাঠের কোনো ক্রিকেটার নয়, রান্নায় ব্যবহৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পেঁয়াজ। চোখ কপালে উঠল বা অবাক হলেন? আসলে বর্তমান বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা! কিছুতেই যেন কমছে না পেঁয়াজের দাম। দিন দিন বেড়েই চলছে। আর এতে করে রাজধানীবাসীসহ দেশের সব এলাকার মানুষের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই পেঁয়াজ।
আজ শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, কদমতলী, মিরপুর ১১ নম্বর কাঁচাবাজার, ৬ নম্বর কাঁচাবাজার, কারওয়ান বাজার, রায়েরবাগ, টিকাটুলী ও জনসন রোডে গিয়ে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে, কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের যথেষ্ট মজুদ থাকার পরও ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, ভারতীয়, মিসরীয় ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
সামসুল আলম নামের এক ব্যক্তি বাজার করতে এসেছিলেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ যেন দুঃস্বপ্নের দেশে আছি। পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকা। চিন্তা করতে পারছেন! ডিমভাজি থেকে শুরু করে সবকিছুতেই পেঁয়াজের ব্যবহার থাকে। স্বল্প আয়ের মানুষ কীভাবে বাঁচবে? পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কিনলে এখন কারো হাতে ওই দিনের বাজারের পয়সা থাকে না। বাধ্য হয়ে চাষের মাছ বা ব্রয়লার মুরগি নিয়ে যেতে হয়। কয়েকমাস ধরেই পেঁয়াজের অস্থিরতা চলছে, তারপরও এর কোনো মনিটরিং নেই?’
সামসুল আরো বলেন, ‘কয়েকদিন আগে দেখলাম, ভোক্তা অধিকার, ভ্রাম্যমাণ আদালত কসমেটিকসসহ অন্যান্য পণ্যে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু টিভি ও পত্র-পত্রিকায় দেখলাম না ঢাকার কোথাও পেঁয়াজের বিষয়ে অভিযান চালিয়েছে, অথবা পেঁয়াজের দাম কেন বাড়ছে, তার প্রতিকার করতে। এখন কেজিপ্রতি ২০০ টাকা কবে হবে তার জন্য অপেক্ষা করছি।’
মোতাহার নামের এক ব্যক্তি রায়েরবাগে বাজার করতে এসেছিলেন। আগে একটি সরকারি চাকরি করতেন। বর্তমানে তিনি অবসর জীবনযাপন করছেন। পেনশন দিয়ে দুজনের সংসার চালান মোতাহার। তিনি এনটিভি অনলাইকে বলেন, ‘আমার বর্তমান বয়স ৬৫ বছর। এ জীবনে এই প্রথম এত দাম দিয়ে পেঁয়াজ কিনে খেতে হচ্ছে। কখনো চিন্তাই করিনি, পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা কেজি হবে। এক কেজি পেঁয়াজ কিনলে মাছ-সবজি কেনার টাকা হয় না। অবসরপ্রাপ্ত জীবনে কয় টাকাই বা পাই। এমন একটি নিত্য পণ্যের দাম যদি এত হয়, আমরা খাব কী করে? সবারই সপ্তাহের বন্ধের দিনে মাংস বা মাছ খেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা হলে কীভাবে মাছ-মাংস খাব।’
মোতাহার আরো বলেন, ‘সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, যেভাবে হোক সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে পেঁয়াজের দাম আনার চেষ্টা করুন। না হলে অচিরেই ২০০ টাকা দামে চলে যাবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আড়তের এক বিক্রেতা জানান, দেশে পেঁয়াজের অভাব নেই। দাম বাড়তে পারে এমন তথ্য অনেক ব্যবসায়ীর কাছে ছিল। তারা পেঁয়াজের কৃত্রিম দাম বাড়িয়েছে। সামনে আরো দাম বাড়ার তথ্য রয়েছে বলে জানান ওই আড়তদার।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ ১৫০ টাকা কেজি, দেশি হাইব্রিড ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, মিসরীয় পেঁয়াজ ১০৫ টাকা, পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১১০ টাকাসহ বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে।
চলতি বছরের আগস্ট থেকেই হু হু করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। যা এখন পর্যন্ত ১৫০ টাকায় এসে পৌঁছেছে। এ বিষয়ে ক্রেতা ও সংশ্লিষ্ট সবাই জানান, নিয়মিত বাজারে অভিযান চালালে ও গুদামে সঠিক আইন প্রয়োগ করলে দ্রুত দাম কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।