কারওয়ানবাজারে ক্রেতা সংকট, লাউ ২০ টাকা!

পুষ্টিগুণে ভরপুর সবজি লাউ। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, বি ও ডি আছে। ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ফোলেট, আয়রন ও পটাশিয়ামের চমৎকার উৎস এটি। সেই লাউ এখন পানির দামে বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে যেখানে কারওয়ান বাজারে খুচরা সবজির দোকানে বড় বা মাঝারি সাইজের প্রতি পিস লাউ বেচা হয়েছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, এখন সেই লাউ বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা।
ক্রেতা কম বাজারে জানিয়ে সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগে যেই সাইজের একটি লাউ বিক্রি করেছি ৭০ টাকা। এখন সেই সাইজের লাউ বেচা হচ্ছে ২০ টাকা। ছোট সাইজের লাউ আরও কম দামে বেচা হচ্ছে, দুইটা ৩০ টাকা।
তারা বলছেন, লাউয়ের দাম বাড়ে ও কমে। তবে কমা ও বাড়ার পার্থক্য এতো বেশি হয় না। প্রতিপিস লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে। এবার লাউ কম দামের রেকর্ড গড়েছে। আজ মঙ্গলবার (১০ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজারে লাউসহ অন্যান্য সবজি দেখা যায়।
ঈদের পর ক্রেতা নেই জানিয়ে সবজি ব্যবসায়ী আন্জুমান বলেন, আমার এখানে বড় বা মাঝারি লাউ আছে। বেচাবিক্রি নেই। পাঁচ ঘণ্টায় মাত্র তিনটি লাউ বেচা হয়েছে। যেখানে একই সময়ের বেচা হতো ২০টির ওপরে লাউ। খুবই কম দামে লাউ বেচা হচ্ছে। প্রতিপিস লাউ বেচা হচ্ছে ২০ টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদের আগে বাজারে সবজির দামের যে অবস্থা ছিল, এখন তা উধাও। ঈদের আগের চেয়ে এখন বেশিরভাগ সবজি দাম তুলনামূলক কমেছে। এখন রাজধানীর বাজারগুলোতে বেশিরভাগ সবজির দাম প্রতিকেজি ৫০ টাকা ও তার নিচে অবস্থান করছে। তবে চোখ রাঙাছে বিদেশি গাজর। সবজিটির দাম বেড়ে চলছে। ঈদের আগে চায়না গাজর বিক্রি হয় প্রতিকেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। সেই গাজর এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। ঈদের আগে দেশি গাজর ছিল প্রতিকেজি ৬০ টাকা। এখন ৯০ টাকা। যদিও বাজারভেদে দামের ভিন্নতা রয়েছে।
কারওয়ান বাজার সবজি বিক্রেতা রুবেল বলেন, বাজারে ক্রেতা নেই। ক্রেতা কমের কারণে সবজির দামে এই মন্দা। সামান্য লাভে এখন সবজি বিক্রি করছি। সবজি বেশি দিন রাখা যায় না। তাই পঁচার ভয়ে অনেকেই সবজির চালান দামে বিক্রি করছি। ঈদের পর বাজারে গাজরের দাম বাড়তি। চায়না গাজর এখন দেড়শ টাকা ছাড়িয়েছে। দেশি গাজর একশ টাকার কাছাকাছি। ঈদের পর শসা দাম কমেছে। পটল, কাকরোল, ঢেঁড়স, করলা, লেবু, লতি, চিচিঙ্গা, পেঁপে, টমেটো ও কাঁচামরিচের দাম কমেছে। ফ্রেশ, সাইজ ও মান অনুসারে দামে ভিন্ন রয়েছে।
সবজির সরবরাহ কম জানিয়ে কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা ফাহিম বলেন, ঈদে এখন সবাই গ্রামে। তাই রাজধানীতে এখন সবজির চাহিদা কম। এখন ঘরে ঘরে মাংস খাচ্ছে। সবজির ওপরে চাপ কমেছে। ফলে বাজারে সবজির দামে মন্দা চলছে। সামান্য লাভ ও অনেকক্ষেত্রে চালান দামে বিক্রি করছি সবজির জানিয়ে তিনি বলেন, এই অবস্থা বেশিদিন থাকবে না। লোকজন ঢাকায় ফিরলে সবজির দাম ফের বাড়তে পারে।
বাজার ঘুরে জানা যায়, ঈদের আগে শসা, কাঁচামরিচ, গাজর, টমেটো ও লেবুর দাম বেড়েছিল। সালাদ তৈরির উপকরণ হওয়ায় এসব পণ্যের চাহিদা ছিল বেশি। ঈদের দিন হতেই সেই সবজির দাম কমতে শুরু করে। লেবুর ডজন ২০ থেকে ৩০ টাকা ও কাঁচ কলা হালি ২০-৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিকেজি শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০- ৬০ টাকায়। প্রতিকেজি দেশি গাজর ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, চায়না গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। প্রতিকেজি টমেটো ৬০ থেকে ৫০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, ঝিঙা ৫০ টাকা, কাকরোল ৫০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, লতি ৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, গোল বেগুন ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, ঢেঁড়শ ৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, ছড়া কচু ৬০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়ার দাম আগের মতোই। দেশি মুরগির কেজিতে ৬৫০ টাকা এবং সোনালী মুরগির ২৭০ টাকা বেচা হচ্ছে। তবে ঈদের আগে সোনালী মুরগির কেজি ছিল ২৫০ টাকা। ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন ১২০ টাকা (লাল) এবং ১১০ টাকা (সাদা)। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ২৪০ টাকা। হাঁসের ডিমের ডজন ২১০ টাকা।