অনন্যা
ফ্যাশন বিষয়টা পুরোপুরি মনের ইচ্ছে : তানাজ
ছোটবেলা থেকেই কাপড়ের প্রতি ভালোলাগা। এরপর বড় হয়ে এই পেশাকেই মনে প্রাণে বেছে নেওয়া। এত কম বয়সে বর্তমানের বড়বড় ফ্যাশন ডিজাইনারদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন তিনি। বলছি ফ্যাশন ডিজাইনার তানাজের কথা। যিনি ফ্যাশন হাউজ ইয়োলো, স্বপ্নের ডিজাইনার হিসেবে বহুদিন কাজ করেছেন। বর্তমানে গ্লোবাল একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত আছেন এবং স্বপ্নের পরামর্শক হিসেবেও কাজ করছেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও তানাজ নিজের প্রতি যথেষ্ঠ সচেতন। ফ্যাশন বা স্টাইলের কোনো ঘাটতি নেই তাঁর। এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে নিজের পছন্দ আর স্টাইলের কথা জানালেন সফল এই নারী।
প্রশ্ন : এই পেশা কেন বেছে নিলেন?
তানাজ : আসলে ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছে ছিল। কারণ আমার আব্বুর কাপড়ের ব্যবসা ছিল। ছোটবেলা থেকে কাপড় দেখতে দেখতে কাপড়ের প্রতি একটা আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। আর আমার মা ও ছোট খালা খুব হাতের সেলাইয়ের কাজ করত। আমার বয়স যখন চার-পাঁচ বছর তখন আমি হাতের কাজ শিখেছি। তাদের কাছ থেকেই আমি অনেক কাজ শিখেছি। বলতে গেলে, আমার কোনোদিনও বিকল্প কোনো ইচ্ছে ছিল না। এর প্রতি আমার ভালোলাগা ছিল, এ কারণেই এই পেশা বেছে নিয়েছি।
প্রশ্ন : এই পেশার সঙ্গে ফ্যাশনের কী সম্পর্ক আছে?
তানাজ : আমার নিজের পেশার সঙ্গে ফ্যাশনের সম্পর্ক আছে কি না জানতে চাইলে বলব, আমি এই বিষয়ে একেবারেই একমত না। কারণ আমি নিজেকে যেভাবে উপস্থাপন করি সেভাবে হয়তো অন্য কেউই করবে না বা পারবে না। অনেক সময় আমি প্রশংসা পাই। আবার অনেক সময় কেউ কেউ বাঁকা চোখে দেখে বলে, ‘তুমি এতগুলা জুয়েলারি পরছ কেন? কেমন লাগছে দেখতে?’ কিন্তু আমার ভালো লাগে। তাই এগুলো পরি। এটা আমার ফ্যাশন বা স্টাইল। এটার সাথে আমি ডিজাইনার এ রকম কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ অনেক ভালো ভালো ডিজাইনার আছেন যাঁরা নিজেরা সাধারণ কাপড় পরেন। ছয় বছর ধরে আমি আমার কাপড় ছাড়া অন্য কারো কাপড় পরি না। এটা একান্ত আমার নিজের ইচ্ছে।
প্রশ্ন : স্টাইল বা ফ্যাশন বলতে আপনি কী বোঝেন?
তানাজ : আমি একবার একটি অফিসে গিয়েছিলাম। সেখানে অনেকেই আমার নাম উচ্চারণ করতে পারছিল না। তখন তারা একজন আরেকজনকে বলছিল ওই যে সেই মেয়েটা যে অনেক জুয়েলারি পরে। এটাই হচ্ছে আমার স্টাইল। আর ফ্যাশন হচ্ছে একটা ট্রেন্ড। যা প্রতি মুহূর্তেই বদলায়, প্রতি মৌসুমে বদলায়।
প্রশ্ন : প্রতিটি মানুষের ফ্যাশন বিষয়ে গ্রুমিং থাকা কি প্রয়োজন?
তানাজ : একেবারেই না। যদি সে নিজের মন থেকে চায় যে, আমি আমার মনমত করব, নিজের মতো কিছু করব, এটা একান্ত তার ব্যক্তিগত বিষয়। এখন আমি জুয়েলারি পরি, কেউ আবার হিল পরে হাঁটতে পছন্দ করে। এটা তার ইচ্ছা। এর জন্য কোনো দরকার নেই অন্য কারো কাছ থেকে গ্রুমিং নেওয়ার। এটা পুরোপুরিই মনের বিষয়।
প্রশ্ন : পেশার ক্ষেত্রে আপনি কেমন পোশাক বেছে নেন?
তানাজ : আমি ফরমাল পোশাক পরতে পছন্দ করি। এখন প্যান্ট, টিশার্ট ও সামার ব্লেজার পরি। আবার মাঝেমধ্যে টিশার্টের সঙ্গে স্কার্ফও পরি।
প্রশ্ন : ব্যক্তিগত জীবনে কোনো ধরনের পোশাক আপনার ভালো লাগে?
তানাজ : ব্যক্তিগত জীবনেও এ ধরনের পোশাক পরি। তবে জুয়েলারির ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা থাকে। হয়তো পেশার ক্ষেত্রে আমি এক ধরনের জুয়েলারি পরছি আবার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যাই তখন যত্ন করে তুলে রাখা জুয়েলারির সেট পরি। এটাই আমাকে আলাদাভাবে পরিচিত করে। মাঝেমধ্যে শাড়ি, সালোয়ার কামিজ কিংবা লং গাউন পরি। তবে আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দ স্কার্ট।
প্রশ্ন : সেরা ফ্যাশন ডিজাইনার কে?
তানাজ : দেশের মধ্যে আমি বিবি রাসেলকে পছন্দ করি। তাঁর যে ব্যক্তিত্ব, তাঁর কাজ যেমন তিনি যেকোনো একটা বিষয় নিয়ে কাজ করেন এটাই আমার ভালো লাগে। আমি ডিজাইনের কথা বলছি না, তবে তাঁর যে একটা লাইন রয়েছে যেটা নিয়ে তিনি কাজ করেন- সেটা আমার ভালো লাগে। আমারও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে যে আমি শুধু একটা বিষয় নিয়ে কাজ করব। একটা সিলেক্টিভ লাইন বা একটা সিলেক্টিভ মেটেরিয়ালস নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে আমার। আর দেশের বাইরে ভারতের মাণীষ মালহোত্রা এবং পাকিস্তানের আনাহ হারিরির ডিজাইন আমার ভালো লাগে।
প্রশ্ন : আপনজনের কারো ফ্যাশন ট্রেন্ড কী ফলো করেন?
তানাজ : আমার ছোট খালা। তাঁর কাছ থেকেই আমার ফ্যাশন শেখা। তাঁর কাছে আমি মানুষ হয়েছি। খালার কাছ থেকেই আমি চুল কাটা শিখেছি। তিনি চুলে যে স্প্রে ব্যবহার করতেন সেটা আমি খুব ভালো করে খেয়াল করতাম। তখন তো আমাকে দিতেন না। বলতেন, বড় হলে দিব। তবে তাঁরটা আমি পাই না। আমার খালা বলেন, ‘তুমি তো আমাকে ছাড়িয়ে গেছ।’ তবে আমার খালার কাছ থেকে আমি অনুপ্রেরণা পেয়েছি।
প্রশ্ন : কোন অনুষঙ্গটি আপনার বেশি ভালো লাগে?
তানাজ : কানে আমি কোনো কিছু পরি না। হাতের ও গলার জুয়েলারি আমার ভালো লাগে। আর আমার ব্যাগ ও জুতাও ভালো লাগে।
প্রশ্ন : পোশাক না অনুষঙ্গ কোনটিকে বেশি প্রাধান্য দেন?
তানাজ : অবশ্যই অনুষঙ্গ। আমি আসলে পোশাকের থেকে প্রথমে জুয়েলারি তারপর ব্যাগ এরপর জুতার বিষয়ে নজর দেই।
প্রশ্ন : কোন রঙের পোশাক এবং কোন ধরনের পোশাক পরতে বেশি ভালো লাগে?
তানাজ : কালো, নেভিব্লু, মেরুন ও ডার্ক পার্পেল। হালকা রঙে আমাকে খুব একটা মানায় না। আর আমি সাদা একেবারেই পছন্দ করি না।
প্রশ্ন : পার্লারে গিয়ে না বাসায় পরিচর্যা- কোনটিকে প্রাধান্য দেন?
তানাজ : পার্লারে যাওয়ার আমার সময় হয় না। আমার পেশায় আমি একদমই সময় পাই না। যখন সময় পাই তখন পার্লার বন্ধ হয়ে যায়। টুকটাক যা পরিচর্যা করি সবই বাসায়।
প্রশ্ন : প্রতিটি নারীর কোন বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত?
তানাজ : প্রথমে মানসিক প্রশান্তি, এরপর শারীরিক সুস্থতা। যখন মানুষ মানুসিকভাবে অসুস্থ থাকে সে শারীরিকভাবেও অসুস্থ থাকে। এর ফলে সে কাজেও মন দিতে পারে না। আবার বাসায় গিয়েও সে মানসিকভাবে শান্তিতে থাকে না। তাই তার যা ভালো লাগে তাই করা উচিত। গান শুনে, টিভি দেখে, রান্না করে, সেলাই করে বা গাছ লাগিয়ে সে যদি শান্তি পায় তাহলে তাদের তাই করা উচিত।
প্রশ্ন : চাকরিজীবী নারী বা কোনো পেশায় জড়িত থাকা নারীদের কি বাড়তি যত্ন নেওয়া জরুরি?
তানাজ : আমি মনে করি সবচেয়ে বেশি কষ্ট করেন গৃহিণীরা। তবে যাঁরা বাইরে কাজ করেন তাঁদের ত্বকে অনেক বেশি খারাপ প্রভাব পড়ে। আমরা ভুলে যাই পানি খেতে হবে। সারাদিন বেশি করে পানি খান। দেখবেন, অনেকটা ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।
প্রশ্ন : নিজেকে ফিট রাখতে কী করেন?
তানাজ : আমি অনেক খাই। তবে সবসময় স্বাস্থ্যকর খাবারই খাই। মাংস একেবারই খাই না। আর প্রচুর পরিশ্রম করি। এটাই আমার ফিট থাকার রহস্য।