যে ৪ কারণে অফিসে আসতে দেরি হয়
আপনাকে যদি অফিসের বস কিংবা বন্ধু কর্মস্থলে বা কোনো একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য বলে দেয়, তাহলে অবশ্যই আপনি যথাসময়ে উপস্থিত থাকবেন। পারলে নির্ধারিত সময়ের একটু আগেই সেখানে পৌঁছে যাবেন। কিন্তু কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা সব সময় দেরিতে আসবেন। আপনি তাঁকে যত গুরুত্ব দিয়েই বলে দেন না কেন, তিনি দেরি করবেন—এটা প্রায় নিশ্চিত। এবং দেরি করে এসেই আপনাকে একটা অজুহাত দেখাবেন। প্রশ্ন হলো, তাঁরা দেরি কেন করেন। ইচ্ছে করে নাকি অন্য কোনো কারণ আছে এর পেছনে? চলুন, দেরি করা মানুষের কয়েকটি অভ্যাস আমরা দেখে নিই। লাইফস্টাইল সংক্রান্ত ওয়েবসাইট কিউই রিপোর্ট এ তথ্য জানায়।
তাঁরা অতিমাত্রায় উৎপাদনশীল হতে চেষ্টা করেন
মনে করুন, আপনি কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেন। সে অনুযায়ী দিনক্ষণও ঠিক করে ফেলেছেন। কিন্তু রওনা দেওয়ার আগমুহূর্তে আপনি যখন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, যেমন—মানিব্যাগ, মোবাইল ফোন, চাবিসহ অন্যান্য সামগ্রী গুছিয়ে নিয়ে বের হচ্ছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে কোনো এক বন্ধু বসে বসে কিছু একটা লিখছেন। আর তিনি এমন ভাব করছেন যেন লেখাটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ, যা এখনই শেষ করতে হবে। তাঁর এই কর্মকাণ্ডে আপনি বিরক্ত হচ্ছেন কি না, সেটা তাঁর দেখার সময় নেই। কারণ, তিনি শেষ মুহূর্তে ওই কাজটি করে সবাইকে বোঝাতে চাইছেন, তিনি বিন্দু পরিমাণ কাজের ব্যাপারেও খুব যত্নবান। শুধু তাই নয়, তিনি কর্মক্ষেত্রে কতটা উৎপাদনশীল, সেটাও শেষ মুহূর্তে বোঝাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
ঠিক তেমনিভাবে অফিসেও কতিপয় কর্মী আছেন, যাঁরা ছুটির ঘণ্টা বাজার পরও এমন একটা ভাব দেখাবেন যেন তিনি শুধু অফিসের কাজের কারণেই বের হতে পারছেন না। আর এমন কর্মীরাই সাধারণত বিনা কারণে অফিসে দেরি করে আসেন।
নিজেকে অতিমূল্যায়ন করার প্রবণতা
দেরি করা মানুষ কখনো যদি অল্প সময়ে অপ্রত্যাশিত সাফল্য পেয়ে যান, তাহলে তাঁরা মনে করেন ওই সফলতা শুধু তাঁর কারণেই সম্ভব হয়েছে। এ ধরনের মানুষ অন্যদের সফলতাকে খুব বেশি সমীহ করেন না। তাঁরা অনেক ক্ষেত্রে অতি আত্মবিশ্বাসীও হয়ে থাকেন। তিনি একদিন যদি সৌভাগ্যবশত একদিন কর্মস্থলে সময়মতো সবার আগে চলে আসেন, তবে ধরেই নেন বাকিরা ইচ্ছে করে সময়মতো আসেননি। এ ধরনের মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ট্রাফিক আইন মানার ব্যাপারে যত্নবান হন না। আর এমন লোকজন অফিস কিংবা অন্য কোথাও সাধারণত দেরি করে আসেন আর বোঝাতে চান, দেরি করলেও তিনি অল্প সময়ে নির্দিষ্ট কাজটি করে ফেলতে পারেন, যা অন্য কেউ পারেন না।
দেরি করাকে তাঁরা অসুন্দর মনে করেন না
দেরি করা মানুষ ছুটে চলাকে কোনোভাবেই উপভোগ করেন না। অন্য কেউ দ্রুত কর্মস্থল বা অন্য কোথাও যেতে চাইলে তিনি বিষয়টি যথাযথ মনে করেন না। তাঁরা কাজের ক্ষেত্রেও ধীরগতির হয়ে থাকেন। তাঁদের কোনো কাজ করতে দেওয়া হলে তাঁরা সেটিকে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে করতে না পেরে অতিরিক্ত সময় চাইবেন। আর তাঁরা এটা বোঝাতে চান যে অতিরিক্ত সময় নিলেও অন্য সবার চেয়ে তিনি কাজটি বেশি সুন্দরভাবে করতে পারেন। এমন মানুষ অফিস কিংবা পার্টিতে দেরি করে গিয়ে প্রথমেই একটা অজুহাত দেখান। তিনি তখন বোঝাতে চান, তিনি ইচ্ছে করে এমনটা করেন না। আর সঙ্গে এটাও বলতে চেষ্টা করেন, সময়ের ওপর সব সময় নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় না।
তাঁরা হয়তো অন্য সংস্কৃতি থেকে আসা মানুষ
সময়নিষ্ঠ হওয়ার পেছনে ভৌগোলিক অবস্থান ও সেখানকার সংস্কৃতি অনেক প্রভাব বিস্তার করে মানুষের মধ্যে। যেমন দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ সাধারণত একটু দেরি করাকে তেমন বেশি দৃষ্টিকটু মনে করে না। কিন্তু আপনি যদি উত্তর ইউরোপে ভ্রমণ করেন, তবে সেখানকার চিত্র একেবারেই আলাদা। ওই অঞ্চলের কেউ যদি আপনাকে বলেন, তিনি সকাল ৯টা ৩ মিনিটে আপনার সঙ্গে দেখা করবেন, তাহলে দেখবেন তিনি যথাসময়েই হাজির হয়ে যাবেন। কিন্তু কোনো কারণে যদি এক মিনিটও দেরি করেন, সেটাকে তিনি নিজের জন্য অপমানজনক মনে করেন।