ভারতে গাইতে পারলেন না গুলাম আলী
ভারতের হিন্দুত্ব-প্রধান মৌলবাদী সংগঠন শিবসেনার হুমকিতে মোটেও বিচলিত নন পাকিস্তানের তথা উপমহাদেশের বিখ্যাত গায়ক গুলাম আলী। তিনি জানিয়েছেন, কারো হুমকিতে তিনি ভক্তদের থেকে কখনই দূরে থাকবেন না। তাঁর অগণিত ভক্তদের টানে তিনি প্রয়োজনে বারবার ভারতে আসবেন। আজ ১০ অক্টোবর ভারতের প্রয়াত গজলসম্রাট জগজিৎ সিংয়ের স্মরণে ভারতের মুম্বাইয়ে গান গাওয়ার কথা ছিল গুলাম আলীর। সেইমতো বৃহস্পতিবারই দিল্লি চলে আসেন তিনি। যদিও আসার আগে তিনি জানতেন না তাঁর কনসার্ট বাতিলের কথা। ভারতে এসে জানতে পারেন, শিবসেনার হুমকির জেরে মুম্বাইতে ওই নির্ধারিত কনসার্ট বাতিল হয়ে যায় গুলাম আলীর।
পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ এবং দেশপ্রেমের ইস্যু তুলে শিবসেনা ওই কনসার্ট বাতিল করার জন্য কার্যত হুলিয়া জারি করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যোক্তারা ভয় পেয়ে গুলাম আলীর ওই সংগীত অনুষ্ঠানটি বাতিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বর্তমানে দিল্লিতে থাকলেও শনিবার কনসার্ট শেষ করে পাকিস্তান ফিরে যাওয়ার কথা ছিল গুলাম আলীর। তবে তিনি পাকিস্তান ফিরে যাওয়ার আগে শিবসেনার ওই হুমকি প্রসঙ্গে জানিয়ে দেন, এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখের। তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে এই ধরনের ঘটনায় আমি যথেষ্ট উদ্বিগ্নও। আমি ভারতে এসেই কনসার্টটি বাতিল হওয়ার খবর পাই। তবে আমার মনে হয়, ওই কনসার্ট বাতিল হয়ে যাওয়ায় আমার থেকেও বেশি কষ্ট পাচ্ছেন আমার ভারতীয় ভক্তরা। যাঁরা আমার গান শোনার আশায় ছিলেন, তাঁরা নিশ্চয়ই আমার থেকেও অনেক বেশি হতাশ হয়েছেন। তবে আমি আমার ভক্তদের টানে আবার ভারতে আসব। কারণ আমি আমার ভক্তদের ভালোবাসি। তাই ভবিষ্যতে আমি আবার ভারতে আসব। ভক্তদের থেকে আমাকে কেউ দূরে রাখতে পারবে না। তাই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের পরিস্থিতি ভালো থাকলেও আসব, খারাপ থাকলেও আসব।’
এদিকে এই ঘটনায় গুলাম আলীর ছেলে আমির গুলাম যথেষ্ট হতাশ হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কেন এমন ঘটনা ঘটল তা বুঝতে পারছি না। আমার বাবা তো নুসরাত ফতে আলী কিংবা অন্য কোনো পাকিস্তানি শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে ভারতে যাননি। তিনি গিয়েছিলেন ভারতের অন্যতম শ্রদ্ধেয় গায়ক জগজিৎ সিংকে শ্রদ্ধা জানাতে। ফলে এমনটা তো হওয়ারই কথা ছিল না। তবুও কেন এমন হলো জানি না। এই ঘটনায় অত্যন্ত হতাশ হয়েছি।’
অন্যদিকে এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন ভারতের অন্যতম বলিউড অভিনেত্রী শাবানা আজমি। তিনি তাঁর ট্যুইটারে জানিয়েছেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে কি আমাদের যুদ্ধ চলছে? পাকিস্তানের সঙ্গে কি আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিয়েছে? ভারত এবং পাকিস্তান কি তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছে? তা যদি না হয়, তাহলে গুলাম আলীকে নিষিদ্ধ করার মানে কি? গুলাম আলী ভারতীয়দের প্রাণের শিল্পী জগজিৎ সিংয়ের স্মৃতিতে সৌহার্দ্যের বার্তা দিতে ভারতে এসেছিলেন। ভারতের উচিত অভিযোগের ভিত্তিতে পাকিস্তান সরকারের প্রতি কঠোর মনোভাব নেওয়া, শিল্পীদের প্রতি নয়।’
অন্যদিকে, একই প্রসঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়করি বলেন, ‘পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে ছায়া যুদ্ধ চালাচ্ছে। ফলে ভারতের জনগণ পাকিস্তানের প্রতি ক্ষুব্ধ। তবে পাকিস্তান সরকারের প্রতি ভারতীয়দের ক্ষোভ থাকলেও সেই ক্ষোভ শিল্পীদের প্রতি থাকা উচিত নয়। আমি নিজেও গুলাম আলীর একজন ভক্ত। নিয়ম করে তাঁর গান শুনি। পাকিস্তান বিরোধিতাকে শিল্পীর ময়দানে টেনে নিয়ে আসা মোটেই উচিত হয়নি। পাকিস্তান বিরোধিতা সঠিক হলেও গুলাম আলী বিরোধিতা সঠিক নয়।’
তবে গুলাম আলীর ওই সংগীত অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ার পর থেকে ভারতজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন মহল থেকে এই ঘটনায় তীব্র সমালোচনা করা হচ্ছে শিবসেনার বিরুদ্ধে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ভারতের রাজধানী দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল পাকিস্তানের এই খ্যাতনামা গজলগায়ক গুলাম আলীকে দিল্লিতে অনুষ্ঠান করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। দিল্লি সরকারের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সংস্কৃতির কোনো সীমা হয় না, গণ্ডি থাকে না। দিল্লি সরকারের সংস্কৃতিমন্ত্রী কপিল মিশ্র ট্যুইট করে জানান, মুম্বাইয়ে গুলাম আলীর অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে যাওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের।
ওই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের তরফে আয়োজক রণধীর রায় জানান, ‘গুলাম আলী তো নয়ই, কোনো পাকিস্তানি গায়কই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন না।’ এই ঘটনায় অবশ্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভারতে অবস্থিত পাকিস্তানের হাই কমিশনার আবদুল বাসিত। তিনি জানান, ‘দুই দেশের মধ্যে সংস্কৃতি সম্পর্ক বিনিময়ে পাকিস্তান যথেষ্ট আগ্রহী। সেই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, পাকিস্তানে গিয়ে কোনো ভারতীয় শিল্পীকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় না। এটা দুঃখজনক ঘটনা।’