‘জীবনকে নতুনভাবে দেখতে চেয়েছি’
কলকাতার অভিনেত্রী কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন সিরিয়ালে অভিনয়ের পাশাপাশি টলিউডের ‘চতুষ্কোণ’, ‘গোড়ায় গণ্ডগোল’ ‘ষড়রিপু’সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন তিনি। ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশের টেলিফিল্মে প্রথমবারের মতো অভিনয় করেছেন কনীনিকা। ‘দ্য পেইন্টার' নামে টেলিফিল্মটি পরিচালনা করেছেন পারভেজ আমিন। এতে পার্থ বড়ুয়ার বিপরীতে অভিনয় করেছেন কনীনিকা। আজ সোমবার ঈদের দিন দুপুর ২টা ২০ মিনিটে এনটিভিতে টেলিফিল্মটি প্রচারিত হবে। টেলিফিল্মটিতে কাজের অভিজ্ঞতা ও অন্য অনেক বিষয় নিয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন কনীনিকা।
এনটিভি অনলাইন : ‘দ্য পেইন্টার' টেলিফিল্মে অভিনয়ের প্রস্তাব কীভাবে পেলেন?
কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় : আমি ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখেছি বাংলাদেশের ছবি ও নাটকে অভিনয় করব। কিন্তু কোনো প্রস্তাব পাইনি। হঠাৎ করে পরিচালক পারভেজ আমিন এই টেলিফিল্মে অভিনয় করার কথা বলেন। আমিও একবাক্যে রাজি হই।
এনটিভি অনলাইন : টেলিফিল্মটিতে পার্থ বড়ুয়ার সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল?
কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় : পার্থ বড়ুয়ার সঙ্গে কাজ করে অনেক বেশ আনন্দিত। এ রকম ভালো মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। অনেক গুণী অভিনেতাও তিনি। অনেক অভিনেতা স্টার হয়ে গেলে আকাশে চলে যান; কিন্তু উনাকে দেখে মনে হলো উনি জমিনে থাকা স্টার। অনেক বিনয়ী ও ভদ্র। পার্থ বড়ুয়ার একটা নাটক দেখেছি। তাঁর অভিনয় অনেক ন্যাচারাল।
এনটিভি অনলাইন : টেলিফিল্মের গল্পটা তো রোমান্টিক। আপনার কাছে ভালোবাসার মানে কী?
কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় : ‘দ্য পেইন্টার’ টেলিছবিতে অপেক্ষার মাধ্যমে ভালোবাসা দেখানো হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়, কেবল পুরুষের সঙ্গে নারীর ভালোবাসার সম্পর্ক মুখ্য নয়। প্রকৃতির মাধ্যমেও ভালোবাসা পাওয়া যায়। চাইলে একটা বিড়ালকেও যত্ন করে ভালোবাসা যায়। আসলে নিজের চাহিদা অনুযায়ী ভালোবাসাটা জন্মায়। যাঁকে ভালোবাসা হয়, তাঁকে মনে করে নিজেকে ভালোবাসার নামই হলো ভালোবাসা।
এনটিভি অনলাইন : বাংলাদেশের নাটকের গল্পগুলো আপনার কাছে কেমন মনে হয়?
কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় : বাংলাদেশের নাটকের গল্পগুলো অনেক বাস্তবধর্মী। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো কাজ সেখানে হয়। বাংলাদেশের অনেক পরিচালক আমার ফেসবুক বন্ধু। এর মধ্যে অমিতাভ রেজাও আছেন। তাঁর অনেক বিজ্ঞাপন আমি দেখেছি। অনেক ভালো কাজ করেন তিনি। একবার কলকাতার একটি অনুষ্ঠানে অমিতাভ রেজার সঙ্গে আমার দেখাও হয়েছে। এ ছাড়া ইউটিউবে অনেকের নাটক দেখেছি আমি।
এনটিভি অনলাইন : এবার অন্য প্রসঙ্গে কথা বলি। বর্তমানে আপনি কী নিয়ে ব্যস্ত আছেন?
কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় : জি বাংলা চ্যানেলে এখন আমার ‘অন্দরমহল’ সিরিয়ালটি প্রচারিত হচ্ছে। এখানে আমার চরিত্রটি বিপরীতমুখী। অনেক চ্যালেঞ্জিং একটা চরিত্র। প্রায় প্রতিদিন সিরিয়ালটির শুটিং হচ্ছে। এ নিয়েই ব্যস্ত।
এনটিভি অনলাইন : আপনি তো দীর্ঘদিন পর আবারও সিরিয়ালে অভিনয় করছেন। বিরতি কেন নিয়েছিলেন?
কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় : প্রায় ১০ বছর পর নতুন সিরিয়ালে অভিনয় করছি। আসলে সিরিয়ালে অভিনয় করলে প্রায় প্রতিদিন শুটিং থাকে, তখন ছবির কাজ করা সম্ভব হয় না। ছবিতে কাজ করার জন্য বিরতি নিয়েছিলাম। এ ছাড়া জীবনকে নতুনভাবে দেখতে চেয়েছি। নিজেকেও তো সময় দেওয়া প্রয়োজন, তাই না!
এনটিভি অনলাইন : মুক্তির অপেক্ষায় আপনার কী চলচ্চিত্র আছে?
কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় : ‘বিলু রাক্ষস’। ১ সেপ্টেম্বর ছবিটি মুক্তি পাবে। ছবিটি এ প্রজন্মের সবার ভালো লাগবে বলে আশা করছি। একটা বিষয় খেয়াল করবেন, আমরা কিন্তু আমাদের মা-বাবার মতো সুখী মানুষ নই। আমরা যেকোনো কিছু পেতে অস্থির। সব সময় হাতড়ে খুঁজতে থাকি নিজের চাহিদা, সুখ ও আরো অনেক কিছু। এসব কিছু এই ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে।
এনটিভি অনলাইন : শুনেছি আপনি নিজেও ছবি পরিচালনা করতে আগ্রহী...
কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় : ইচ্ছা আছে। আমার চিত্রনাট্যও প্রস্তুত। শুধু টাকা-পয়সা হাতে নেই। ভালো একজন প্রযোজক দরকার।
এনটিভি অনলাইন : আপনার অভিনেত্রী হয়ে ওঠার কথা জানতে চাই...
কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় : ছোটবেলা থেকে আমি থিয়েটার করতাম। স্কুলে পড়ার সময় আমি একটা সিরিয়ালের অডিশন দিই। প্রথম অডিশনে নির্বাচিত হই। যদিও চরিত্র অনেক ছোট ছিল। তারপরও অভিনয় করতে রাজি হই। সিরিয়ালের নামটা ছিল ‘এক আকাশের নীচে’। মজার ব্যাপার হলো, এই সিরিয়ালেই ছোট চরিত্র থেকে পরে আমি নায়িকা হয়েছি।
এনটিভি অনলাইন : আপনি তো ১৭ বছর ধরে অভিনয় করছেন। আরো কোন ধরনের চরিত্রে আপনার অভিনয়ের ইচ্ছা আছে...
কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় : ইচ্ছার সীমা নেই। যত দিন বেঁচে আছি, তত দিন অভিনয় করতে চাই। বুড়ো হয়ে যাওয়ার পরও অভিনয় করার স্বপ্ন দেখি। শিল্পীদের সব সময় ভালো কাজের জন্য ক্ষুধা থাকে।
এনটিভি অনলাইন : দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মিডিয়ার সাপোর্ট কেমন পেয়েছেন?
কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় : খুব ভালো। আমি তো ২০ বছরের কম বয়স থেকে অভিনয় শুরু করেছি। এখানকার মিডিয়ার সবাই আমার ব্যাপারে শুরু থেকে অনেক আন্তরিক ছিলেন। সবাই আমার ভালো বন্ধুও।
এনটিভি অনলাইন : বাংলাদেশে তো আপনার অনেক ভক্ত আছে, জানেন?
কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় : বাংলাদেশের ভক্তদের কাছ থেকে সব সময় ভালো সাড়া পাই। বিশেষ করে ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ সিরিয়ালের শুটিং যখন আমি বন্ধ করি, তখন তাঁরা আমাকে অনেক মিস করেছিলেন বলে জানান। কিছুদিন আগে আমি কলকাতার এক হাসপাতালে গিয়েছে, যেখানে অনেক বাংলাদেশি আমাকে দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন। আমি তো অবাক, তাঁরা আমার নামও জানেন।
এনটিভি অনলাইন : আজ তো ঈদের দিন। কীভাবে সময় কাটাবেন?
কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় : আমাদের এখানে প্রতিটি উৎসব অনেক বড় করে পালন করা হয়। ঈদেও আমরা অনেক মজা করি। আমার বন্ধু-বান্ধবসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেবো। সবার বাসায় ঘুরব। আপাতত এই পরিকল্পনা আছে।