২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য চার হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, গত অর্থবছরে যা ছিল চার হাজার ২৯০ কোটি টাকা। সে হিসাবে আসন্ন অর্থবছরে নারী ও শিশুর জন্য বরাদ্দ বাড়ছে ৪৬৪ কোটি টাকা। 

আজ বৃহস্পতিবার (‌১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনকালে এ সব তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এই বাজেটে জেন্ডার সম্পৃক্ত বরাদ্দের মোট পরিমাণ দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘নারী ও শিশুদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে ২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬ পর্যন্ত সময়ে যে কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়ন করতে চাই, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—কর্মজীবী মায়েদের শিশু সন্তানদের জন্য ৬৪টি জেলায় ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন, কিশোরী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতা সৃষ্টিতে স্যানিটারি টাওয়েল প্রস্তুতকরণ ও বিতরণ, কিশোরী ক্ষমতায়নে স্কুলগামী ছাত্রীদের বাইসাইকেল প্রদান, নারী নির্যাতন ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, শেখ হাসিনা নারী কল্যাণ ডরমিটরি ও কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল নির্মাণ, অবসরকালীন আপনালয় স্থাপন, চার বছর বয়সী শিশুদের জন্য শিশু বিকাশ কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা, গ্রামীণ এলাকার কওমী মাদ্রাসার শিশুদের জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান, নিরাপদ ইন্টারনেট-নিরাপদ শিশু কর্মসূচি বাস্তবায়ন, ৬৪ জেলায় কর্মজীবী হোস্টেল ও জিম সেন্টার স্থাপন ইত্যাদি।’ 

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মহিলারা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে দৈনন্দিন বিবিধ সমস্যার সমাধান ও বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন, ই-কমার্স উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। বর্তমানে সাড়ে ১৪ হাজার উদ্যোক্তা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম লালসবুজ ডটকমে নিবন্ধন ও পণ্য আপলোড করে বিক্রি করছেন।’ 

মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত ও প্রক্রিয়াজাত পণ্য ও সেবা বিপণনের জন্য জয়িতা ফাউন্ডেশনের আওতায় ঢাকাসহ সকল বিভাগীয় সদরে এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নারীবান্ধব বিপণন অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। জয়িতা ফাউন্ডেশনকে আরও আধুনিক করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশের প্রতিটি বিভাগীয় সদরে জয়িতা ফাউন্ডেশনের কাজ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, “পরিবেশ বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলায় নারীদের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ‘জেন্ডার রেসপন্সিভ ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন (সিজিএ)’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছি। প্রকল্পটি নারীদের ‘চেঞ্জ এজেন্ট’ হিসেবে পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, সহনশীল জীবিকায়ন ও পানীয় জলের সমস্যা সমাধান, বাস্তবায়নে সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।”

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘হাওরের নারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন প্রশিক্ষণ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় সাত হাজার ৩৫০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলার হাওর অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র ও দুস্থ নারীদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় সাত হাজার জনকে এবং উপকূলীয় অঞ্চলের নারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় চার হাজার ৬৫০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ফলে উক্ত এলাকার নারীদের অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কার্যক্রম সামনের দিনগুলোতে অব্যাহত থাকবে।”

বাজেট বক্তৃতায় মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোভিড-১৯ সংকটকালে ভালনারেবল উইমেন ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু কার্যক্রম সামনেও অব্যাহত রাখব। নারীদের জন্য নির্ধারিত নিয়মিত সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের বাইরে তাদের আত্মকর্মসংস্থান ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে আমরা ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছি। ৬৪টি জেলার ৪৮৮টি উপজেলার মাধ্যমে দুই লাখ ২৭ হাজার জনকে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। জেলাপর্যায়ে সুবিধাবঞ্চিত মহিলাদের (১৬-৪৫ বছর) দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ৬৪ জেলায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিলের অর্থে দেশের ৬৪টি জেলা ও ২৮টি উপজেলায় স্বকর্ম ঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমেও বেকার ও উদ্যোগী মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানে আমরা সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছি।’

নারী ও শিশুর নিরাপত্তার বিষয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার ও ওয়ানস্টপ ক্রইসিস সেলের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আটটি রিজিওনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার হতে মনোসামাজিক কাউন্সেলিং সেবাও প্রদান করা হয়। কক্সবাজারে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য রিজিওনাল ট্রমা সেন্টার, ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেল, মেন্টাল হেলথ্ সার্ভিস সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। নারীদের সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ 

এ ছাড়া দেশের সকল সরকারি ওয়েবসাইটে আপলোডকৃত হেল্পলাইন ১০৯ এর মাধ্যমে মহিলাদের সহায়তা করা হয়, যা ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে।