প্রস্তাবিত বাজেটে নারী উন্নয়নে বরাদ্দ কত
২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজেটে নারী উন্নয়নে এক লাখ ১২ হাজার ১৯ কোটি টাকার জেন্ডার বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে ৪৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য পৃথক জেন্ডার বাজেট উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে ২৭টি মন্ত্রণালয় ও ১৬টি বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ৪৬তম বাজেট অধিবেশনে তাঁর একাদশ বাজেট বক্তৃতা উপস্থাপন করেন। প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন। এর মধ্যে নারী উন্নয়নে বরাদ্দ এক লাখ ১২ হাজার ১৯ কোটি টাকা যা মোট বরাদ্দের ২৭.৯৯ শতাংশ এবং জিডিপির ৫.০৪ শতাংশ। তিনি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪০টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের জন্য ৯২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকার নারী উন্নয়ন বাজেট উপস্থাপন করেন।
গতবারের মতো এ বছরও জেন্ডার বাজেটকে তিনটি অংশে ভাগ করে নারী উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এর প্রথম অংশে নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চারটি মন্ত্রণালয় ও পাঁচটি বিভাগের জন্য বাজেট প্রস্তাব করা হয়। এগুলো হলো; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ বছরের নারী উন্নয়ন বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে দুটি বিভাগ এবং শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে দুটি বিভাগকে জেন্ডার বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
দ্বিতীয় অংশে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শ্রমবাজার ও আয়বর্ধক কাজে নারীর অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আটটি মন্ত্রণালয় ও একটি বিভাগের জন্য বাজেট প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
জেন্ডার বাজেটের তৃতীয় অংশে সরকারি সেবাপ্রাপ্তিতে নারীর সুযোগ বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়। এতে ১৫টি মন্ত্রণালয় ও ১০টি বিভাগের জন্য জেন্ডার বাজেটের প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, সড়ক ও পরিবহন বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ বছর জেন্ডার বাজেটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জায়গায় জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা সেবা বিভাগ জেন্ডার বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
অর্থমন্ত্রী ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রথম চারটি মন্ত্রণালয়ের জন্য জেন্ডার বাজেট প্রস্তাব করেন। ওই বছর নারী উন্নয়নে বরাদ্দ ছিল ২৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। পরে ২০১০-১১ অর্থবছরে জেন্ডার বাজেটে ১০টি মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ২২১ কোটি টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে ২০টি মন্ত্রণালয়ে ৪২ হাজার ১০০ ৫৪ কোটি টাকা এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৫টি মন্ত্রণালয়ে ৫৪ হাজার ৩০২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪০টি মন্ত্রণালয়কে অন্তর্ভুক্ত করে জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন করা হয়। এই ৪০টি মন্ত্রণালয়ের জন্য ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬৪ হাজার ৮৭ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭১ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৯২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।