রানা প্লাজার ৪২ শতাংশ শ্রমিক এখনো বেকার
সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় আহত শ্রমিকদের ৪২ শতাংশ এখনো বেকার রয়ে গেছেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতা সংস্থা অ্যাকশনএইড। এই বেকারত্বের প্রধান কারণ শ্রমিকদের শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা বলেও উল্লেখ করা হয়।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ব্র্যাক সেন্টার ইনে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় আহত ও নিহত পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অ্যাকশনএইডের করা চতুর্থবারের মতো ফলোআপ জরিপের প্রতিবেদনে এ চিত্র তুলে ধরা হয়।
‘অবিস্মরণীয় অমার্জনীয় : রানা প্লাজা’ শিরোনামে ওই প্রতিবেদন তুলে ধরে অ্যাকশনএইড। জরিপে এক হাজার ৪০৩ জন আহত শ্রমিক ও ৬০৭ জন নিহত শ্রমিকের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আসা রানা প্লাজার আহত শ্রমিকরা তাঁদের বর্তমান দুর্দশার নানা কথা তুলে ধরেন।
এ সময় একজন নারী শ্রমিক বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি। কেউ জমি বিক্রি করে, আমার বাপের তো জমাজমি নাই, যা বিক্রি করে আমি চিকিৎসা করব। আমি অনেক কষ্টে আছি। আমি যে যন্ত্রণা ভোগ করছি, সেটা আমার অন্তর জানে আর ওপরওয়ালা জানে।’
অনুষ্ঠানে আরেক শ্রমিক বলেন, ‘মাত্র পাঁচ মাস আমি মেডিসিন পেয়েছি, এখনো সুস্থ হতে পারিনি। এখন আমাকে বলছে, যখন আপনাকে ডাকব, তখন আপনি আসবেন ফলোআপে। আপনি যখন অসুস্থ তখনই চলে আসবেন, আমরা কি শুধু আপনাকেই সার্ভিস দেব, আর কাউকে দেব না?’
ক্ষোভ প্রকাশ করে অনুষ্ঠানে আহত আরেক শ্রমিক জানান, তাঁকে কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়া চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। একদিন দুপুরে অফিসে তিনি খাবার খেয়ে ডেস্কে বসে কাজ করছিলেন। এ সময় তাঁকে ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের বস দেখা করতে বলেন। পরে তাঁর ল্যাপটপ রেখে দিয়ে পরের দিন থেকে অফিস যেতে বারণ করা হয়। তিনি এর কারণ জানতে চাইলেও তাঁরা কিছু বলেননি।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভবনধসের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কত সংখ্যক মানুষ হতাহত হয়েছেন তার সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও শেষ পর্যন্ত তিন হাজার ৬৬৫ জন মানুষকে জীবিত ও মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে এক হাজার ১৩৫ জনকে মৃত এবং দুই হাজার ৪৩৮ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ৮৪৩টি লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ৫৯টি লাশ হস্তান্তর করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে। ২৩৪টি লাশ অশনাক্ত অবস্থায় জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
রানা প্লাজার ট্র্যাজেডিতে সেদিন নিহত হতভাগ্য মানুষগুলোর মধ্যে ১০৫ জনের পরিচয় এখনো মেলেনি। আদৌ আর মিলবে কি না- সে বিষয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। এই ১০৫ লাশের পরিচয় অশনাক্ত রেখেই ২০১৪ সালের ১০ এপ্রিল শেষ করা হয় ডিএনএ পরীক্ষা। রানা প্লাজা ধসের প্রায় এক বছরে অশনাক্ত ৩২২ জনের মধ্যে মোট ২০৬টি লাশের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া ১১টি লাশের ক্ষেত্রে দুজনের ডিএনএর মিল পাওয়া যায়।