সিরাজগঞ্জে পোলট্রি শিল্পে করোনার থাবা, লোকসানে খামারিরা

করোনাভাইরাসের থাবায় হুমকির মুখে সিরাজগঞ্জের পোলট্রি শিল্প। উৎপাদন বেশি আর চাহিদা কম থাকায় লোকসানে পড়েছেন খামারিরা। মুরগি ও ডিমের দাম নেমে এসেছে অর্ধেকে। প্রতিটি ডিমের দাম আগে যেখানে ছিল সাড়ে সাত টাকা, সেটি এখন সাড়ে চার টাকায় নেমে এসেছে। আবার পরিবহনের অসুবিধার কারণে জেলার বাইরে ডিম সরবরাহ করতে পারছেন না খামারিরা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে পথে বসতে হবে বলে জানিয়েছেন খামারিরা। অবস্থার উন্নতির জন্য সরকারি সহায়তার কথা বলছেন তাঁরা।
সিরাজগঞ্জ প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও পোলট্রি মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জেলায় আশির দশকের শুরুতে পোলট্রি শিল্পের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। ১৯৯৬ সাল থেকে এ জেলায় অসংখ্য পোলট্রি খামার গড়ে ওঠে। শিক্ষিত কর্মহীনরা স্বল্প পুঁজি নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এখানে গড়ে ওঠে প্রায় পাঁচ হাজার পোলট্রি খামার। এর মধ্যে ২০০৭ সালের বন্যা, ২০১২ সালে এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু এবং দফায় দফায় বন্যায় বন্ধ হয়ে যায় অর্ধেক খামার। বর্তমানে জেলায় প্রায় আড়াই হাজার ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে। আর হাঁসের খামার রয়েছে এক হাজার ২১০টি। এসব হাঁস-মুরগির খামার থেকে বছরে ৩০ কোটি ডিম ও দুই লাখ টন মাংস উৎপাদন হয়ে থাকে, যা দেশে আমিষের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখে। বর্তমানে করোনার প্রভাবে বেকায়দায় পড়েছেন সিরাজগঞ্জের খামারিরা।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদক পাওয়া সফল খামারি মাহফুজ-উর-রহমান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে আমি লোকসানে আছি। ডিম ও মুরগি বিক্রি করতে পারছি না। আমার একটি সেটে এক হাজার ১০০ মুরগি ছিল। অর্ধেক বিক্রি করতে পেরেছি আর অর্ধেক অসহায় মানুষের মধ্যে দান করে দিয়েছি। ডিমের ব্যাপারি আগে যেখানে ১০ হাজার ডিম নিতেন, এখন পাঁচ হাজার ডিম নিচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা রাস্তায় বের হতে পারছেন না। দোকানপাট বন্ধ। ডিম বিক্রি করবে কোথায়?’
সিরাজগঞ্জ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পোলট্রি শিল্পে ধস নেমেছে। জেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় আড়াই হাজার খামার আছে। এসব খামারে যে পরিমাণ ডিম উৎপাদিত হচ্ছে, সে তুলনায় বিক্রি হচ্ছে না। ১০০ ডিম যেখানে বিক্রি করতাম ৭৫০ টাকায়। এখন সেই ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে ৪৮০ টাকায়। বিক্রি না থাকায় ডিমগুলো ঘরে থেকে পচে যাচ্ছে।’
সিরাজগঞ্জ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের এস এ ফরিদ বলেন, ‘বর্তমানে পোলট্রি শিল্প কঠিন মুহূর্তে এসে দাঁড়িয়েছে। দোকান ও পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় মুরগি ও ডিম নিয়ে কষ্টে আছে খামারিরা। উৎপাদন খরচ উঠছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে বন্ধ হয়ে যাবে সব খামার। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, তিনি যেন পোলট্রি শিল্পের ওপর একটু নজর দেন। খামারিদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করলে এই শিল্পটাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে।’
জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আখতারুজ্জামান ভূইয়া বলেন, ‘সরকারি হিসাবে জেলায় মুরগি আছে ৫০ লাখ ছয় হাজার ৫৬২টি, হাঁস আছে ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ৮৯৬টি। ব্রয়লার মুরগির খামার আছে এক হাজার ৫৫০টি আর লেয়ার মুরগির খামার আছে ৮৭৫টি। ডিম ও মাংসে সিরাজগঞ্জ জেলা স্বয়ংসম্পূর্ণ। বর্তমানে খামারিরা ডিম বিক্রির জন্য বাজার পাচ্ছেন না। কারণ, ভোক্তা কমে গেছে। বাজার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পাইকার যারা, তারা ডিম কিনতে আগ্রহী কম। এ জন্য ডিম নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। ডিম উৎপাদন খরচ পাঁচ টাকা ৫০ পয়সা, বিক্রি হচ্ছে পাঁচ টাকায়। সরবরাহের পথগুলো বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়বে। আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বাজার সচল রাখার চেষ্টা করছি।’