চেক রিপাবলিকের সবচেয়ে পুরনো এবং সবচেয়ে বড় মেলা মাতিয়েস্কা পোট। ইউরোপের দেশটির রাজধানী প্রাগে ২০২৫ সালে ৪৩০তম বারের মতো এই মেলার আয়োজন হয়েছে। শুরুতে সেন্ট ম্যাথিউস উৎসবের অংশ হলেও এখন তা বসন্তের সূচনার মেলা।

চেক প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে পুরাতন মেলা মাতিয়েস্কা পোটে ঘুরে বেড়িয়েছেন মনিকা পেচানোভা। ২১ বছর বয়সি এই শিক্ষার্থীর কাছে এটা এক দারুণ অভিজ্ঞতা। প্রাগের প্রদর্শনী মাঠে আয়োজিত এই মেলা দেশটিতে বসন্ত শুরুর বার্তা।

মাতিয়েস্কা পোট বা ম্যাথিউস উৎসবের আধুনিক এবং এতিহ্যবাহী নানা আয়োজন দেখতে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ প্রাগে ভিড় করেন।

এই মেলায় প্রথমবার এসেছেন মনিকা। তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয় অধিকাংশ মানুষ এটা বুঝতে পারে না যে, এটা এক বড় ঐতিহ্য এবং সেই ষষ্ঠদশ শতক থেকে চলছে। আমি মনে করি, পরিবারগুলোর জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। এটা এক বন্ধনের অভিজ্ঞতা, যা সব মানুষের রয়েছে। সাধারণত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু বদলে যায়, কিন্তু এটা একই রয়ে গেছে। চারশ' বছরের বেশি সময় ধরে এই মেলা হচ্ছে। শুধুমাত্র ১৬২০ সালের ‘ব্যাটল অফ হোয়াইট মাউন্টেন’ এবং কোভিড মহামারির সময় মেলা হয়নি। এ ছাড়া বাকি সময় মেলা হয়েছে।’

১৯৫৯ সালে শুরু

চেক জাতীয় গ্রন্থাগারে থাকা নথি অনুযায়ী, ম্যাথিউস উৎসব শুরু হয়েছিল ১৯৫৯ সালে। এটি ইউরোপের সবচেয়ে পুরাতন বসন্ত উৎসব। এটি শুরু হয়েছিল সেন্ট ম্যাথিউস ভোজের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক ধর্মীয় উৎসব হিসেবে। সেটা সাধারণত ২৪ ফেব্রুয়ারি হতো। এ বছর মেলার ৪৩০তম আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার এক দর্শনার্থী মারিয়ান নেদ্ভেদ বলেন, ‘‘আমার কাছে সাংস্কৃতিক গুরুত্বের দিকটি হচ্ছে একটি ধর্মীয় উৎসব থেকে এটি আধুনিক এবং বিনোদনমূলক মেলায় পরিবর্তিত হয়েছে। এখানে মানুষ বিভিন্ন আকর্ষণ উপভোগ এবং চমৎকার খাবারের স্বাদ গ্রহণের মাধ্যমে চমৎকার সময় কাটাতে পারেন। আরেকটি দারুণ ব্যাপার হচ্ছে এখানে কয়েক প্রজন্ম একসঙ্গে আসেন। দাদা-দাদিরা তাদের সন্তান এবং নাতি-নাতনিকে মেলার নানা আয়োজন ঘুরিয়ে দেখান।’’  

মাতিয়েস্কা পোটে নানা রকম ফান রাইড, গেমের আয়োজনের পাশাপাশি কয়েক ডজন দোকানে ঐতিহ্যবাহী চেক খাবার, মিষ্টি এবং বিয়ার বিক্রি হয়৷

চেক ঐতিহ্যের অংশ এই মেলার ছোট ছোট সংস্করণ গোটা দেশজুড়েই আয়োজন করা হয়৷ মনিকা পেচানোভা বলেন, ‘‘আমার ছোটবেলার কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেলো৷ আমার পরিবারের সঙ্গে আমি আমাদের শহরের মাতিয়েস্কা পোটে যেতাম৷ সেটা আসল মাতিয়েস্কা ছিল না৷ তাসত্ত্বেও চমৎকার ছিল৷ এখানে আসায় সেই স্মৃতি মনে পড়ে গেল৷''

ধর্মীয় উৎসব থেকে সার্বজনীন মেলা

চেক ভাষায় পোট শব্দের অর্থ হচ্ছে তীর্থযাত্রা৷ মধ্যযুগে এটি যে ধর্মীয় উৎসব ছিল নাম তার প্রমাণ। তবে এই মেলার সঙ্গে ঋতু পরিবর্তনের যোগসূত্র রয়েছে৷ এটি বসন্তের সূচনার প্রতীক যা কৃষককে কৃষি মৌসুম শুরুর ইঙ্গিত দেয়৷ চেক লোককাহিনীতে এই মেলাকে ‘সেন্ট ম্যাথিউস উৎসবের শুরু করেছেন' বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে৷    

মনিকা পেচানোভা বলেন, ‘বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ এটিকে ঐতিহ্য হিসেবে দেখেন৷ ফলে এটি কৃষকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কেননা মেলাটি বসন্তের সূচনার প্রতীক৷ এটা দেখে তারা বুঝতে পারেন যে খেতে বীজ বোনার সময় হয়েছে।’

প্রতি বছর দুই লাখের বেশি স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটক মাতিয়েস্কা পোটে অংশগ্রহণ করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ইস্টার অবধি চলে এই মেলা। মনিকাকে মেলা ছোটবেলার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। আগামী বছরও তাই এখানে ফিরতে চান তিনি।