নতুন বই
বইমেলায় অপূর্ব শর্মার চার বই

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় লেখক-গবেষক অপূর্ব শর্মার চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে। মেলার ২১তম দিনে একসঙ্গে তাঁর চারটি বই প্রকাশিত হয়। সাহিত্য প্রকাশ এনেছে ‘চা বাগানে গণহত্যা : ১৯৭১’, নাগরী বের করেছে ‘মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর’ এবং হাওর প্রকাশন থেকে বের হয়েছে ‘সাহিত্য-সংস্কৃতি ও অন্যান্য’ এবং ‘সুর শব্দের ধ্রুবতারা’ বইটি।
অপূর্ব শর্মা এনটিভি অনলাইনকে জানান, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে চা শ্রমিকদের আত্মত্যাগের আখ্যান বিবৃত হয়েছে ‘চা বাগানে গণহত্যা : ১৯৭১’ শীর্ষক বইয়ে। দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত চা বাগনগুলোতে একাত্তরে যে নৃশংসতা চালায় পাকহানাদার বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসররা তা তুলে আনা হয়েছে বইটিতে। নয় মাসব্যাপী চালানো গণহত্যায় যেসব শ্রমিক ও বাগানবাসী আত্মাহুতি দিয়েছেন, স্বাধীনতার বেদিমূলে তাঁদের নাম-ঠিকানা, হত্যার তারিখ-সময়, প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের ভাষ্যে লেখক তুলে এনেছেন মুক্তিযুদ্ধের এক অজানা অধ্যায়। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও যে অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে লাল সবুজের পতাকার জন্য, তা জানা যাবে বইটি পাঠে।’ প্রায় ১০ ফর্মার এই বইটির প্রচ্ছদ করেছেন অশোক কর্মকার। দাম রাখা হয়েছে ২৫০ টাকা।
মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনাপ্রবাহ দিয়ে সাজানো হয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর’ বইটি। গণহত্যা, বধ্যভূমি, যুদ্ধাপরাধ, নারী নির্যাতন, যুদ্ধজয়ের গান এবং শহীদ পরিবারের বেদনার কথা উঠে এসেছে বইটিতে। ইতিহাসের অনেক ছাইচাপা ঘটনা লেখক তুলে ধরেছেন পরম মমতায়। চার ফর্মার বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের পূর্বের এবং পরের অনেক ঘটনার বিবরণ বিধৃত হয়েছে। বইটির দাম রাখা হয়েছে ১৪০ টাকা। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন তৌহিন হাসান।
১০টি প্রবন্ধ দিয়ে সাজানো হয়েছে ‘সাহিত্য-সংস্কৃতি ও অন্যান্য’ প্রবন্ধ গ্রন্থের ক্যানভাস। পাঁচ ফর্মার এই বইয়ে লোকসাহিত্য ও লোকসংস্কৃতি, ভাষা-আন্দোলন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বহুভাষাবিদ সৈয়দ মুজতবা আলী, মণিপুরি সম্প্রদায়, আন্দোলন-সংগ্রাম, জনবৈচিত্র্য নিয়ে যেমন নান্দনিক আলোচনা রয়েছে তেমনি রয়েছে কবিতায় গ্রীষ্মের স্বরূপ উন্মোচনের চেষ্টা। প্রতিটি বিষয়কে লেখক অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতায়। চারু পিন্টুর প্রচ্ছদে বের হওয়া বইটির দাম রাখা হয়েছে ১৬০ টাকা।
‘সুর শব্দের ধ্রুবতারা’ একটি অনবদ্য রচনার সংকলন। সুরের ভুবনের বাসিন্দাদের পাশাপাশি প্রয়াত প্রখ্যাত কয়েকজন কবিকে মূল্যায়নের চেষ্টা করা হয়েছে বইটিতে। গান এবং কবিতার জগতের মানুষদের মাধ্যমে লেখক তাঁদের সময়কে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছেন সুনিপুণভাবে। ত্রিশ এবং চল্লিশের দশকের সাংস্কৃতিক আন্দোলন, গণসংগীতের জোয়ার, লোকগানের বিশ্বায়ন, খেয়ালগানের বৈচিত্র্যতা, কবিতার সর্বজনীনতা তিনি প্রকাশ করেছেন পাঁচ ফর্মার বইয়ের পাতায় পাতায়। এই বইয়েরও দাম রাখা হয়েছে ১৬০ টাকা। প্রচ্ছদ এঁকেছেন চারু পিন্টু।
অপূর্ব শর্মার জন্ম মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানার হরিনাকান্দি গ্রামে। পেশায় সাংবাদিক হলেও নিভৃত ও আড়ালে পড়ে থাকা ইতিহাসের চুর্ণাংশ তুলে আনা তাঁর অদম্য প্রত্যয় ও নেশা। মূলত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে গবেষণাই তাঁর লেখার অন্যতম বিষয়বস্তু।
২০০৯ সালে তাঁর প্রথম গবেষণাগ্রন্থ ‘অনন্য মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি’ প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত বের হয়েছে তাঁর ১০টি গবেষণাগ্রন্থ, দুটি জীবনী এবং দুটি প্রবন্ধের বই। ২০১০ সালে প্রকাশিত সিলেটে যুদ্ধাপরাধ ও প্রাসঙ্গিক দলিলপত্র গবেষণাগ্রন্থের জন্য তিনি লাভ করেন ‘এইচএসবিসি কালি ও কলম পুরস্কার’। আর ২০১৩ সালে লাভ করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাংবাদিকতায় ‘বজলুর রহমান স্মৃতিপদক’।
বই প্রকাশ প্রসঙ্গে অপূর্ব শর্মা বলেন, ‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছিল আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা, ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক-মুটে-মজুর-কুলি, পেশাজীবী-শ্রমজীবী সবাই। মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় মুছে গিয়েছিল ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-অবস্থানভেদ। মুক্তিযুদ্ধে সংগ্রামের, ত্যাগের, সহ্যের, সাহসের এক অকৃত্রিম তুলনাহীন ভূমিকা পালন করেছিলেন মুক্তিকামী মানুষরা। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং এক নদী রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের লাল সবুজের পতাকা। আমি চেষ্টা করি সেসব আত্মত্যাগের, অবদানের আখ্যান তুলে ধরতে। এবার প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক দুটি বইয়ে সেই চেষ্টাই করেছি। অন্য দুটি বই প্রবন্ধের। সেগুলোতে বিরুদ্ধতা জয় করে আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতির অগ্রযাত্রার চিত্র তুলে ধরেছি। যা থেকে উপকৃত হবে বর্তমান ও আগামী প্রজন্ম।’