মুক্তির ৬০ বছর
‘পথের পাঁচালী’ নিয়ে বিখ্যাতদের মন্তব্য

বাংলা কোন ছবিটি দেখেছেন? বেশির ভাগ বিদেশির কাছেই বাংলা ছবি মানে ‘পথের পাঁচালী’। বাঙালিদের বাইরে অনেকেরই দেখা প্রথম বাংলা ছবি ‘পথের পাঁচালী’। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার প্রযোজিত ছবিটি ছিল সত্যজিৎ রায়ের প্রথম চলচ্চিত্র। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করা হয় ছবিটি।
১৯৫৫ সালের ২৬ আগস্ট ভারতে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। সে হিসেবে আজ ‘পথের পাঁচালী’র ৬০ বছর পূর্ণ হলো। তবে তার আগে একই বছরের ৩ মে নিউইয়র্ক শহরের দ্য মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়েছিল ছবিটির। এই অর্ধশতকেরও বেশি সময়ের যাত্রায় দেশে-বিদেশে সিনেমাপ্রেমীদের হৃদয় জয় করে নিয়েছে ‘পথের পাঁচালী’। লেখক, পরিচালক, অভিনেতা সবার কাছেই সমাদর পেয়েছে ছবিটি। ছবিটি নিয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিদের কিছু মন্তব্য প্রকাশ করেছে দ্য কুইন্ট ডটকম।
জন হুস্টন
পরিচালক, অভিনেতা
আমি যখন ১৯৫৪ সালে প্রথম ‘পথের পাঁচালী’র কিছু ফুটেজ দেখি, তখনই মুগ্ধ হয়েছিলাম এবং বুঝতে পেরেছিলাম এটা মেধাবী কোনো নির্মাতার কাজ।
আকিরা কুরোসাওয়া
চলচ্চিত্র পরিচালক
ছবিটি দেখার পর আমার মধ্যে যে উত্তেজনা কাজ করেছিল সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এটা এমন একটা ছবি, যেটা একটা বিশাল নদীর মতো উদার এবং বহমান।
আর্থার সি, ক্লার্ক
লেখক
‘পথের পাঁচালী’ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর এবং হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম। ছবিটির কিছু দৃশ্য এতই হৃদয়বিদারক যে আমি সেগুলো আর কখনো দেখিনি।
মোকবুল ফিদা হুসেইন
চিত্রশিল্পী
সত্যজিৎ রায়ের ছবির প্রতি আমার একধরনের মুগ্ধতা রয়েছে। ‘পথের পাঁচালী’ আমার দেখা প্রথম ছবি। ছবিটি আমাকে এতটাই অনুপ্রাণিত করেছিল যে আমার বেশ কিছু পেইন্টিংয়ে ছবিটির প্রভাব রয়েছে। বাঙালিদের গ্রামীণ জীবন আমার ভেতরে বেশ নাড়া দিয়েছে। ১৯৮৬ সালে সত্যজিৎ রায়ের ছবিগুলোর প্রতি উৎসর্গ করে আমি একটি প্রদর্শনী করেছিলাম, ‘ফ্রম গীতাঞ্জলি টু পথের পাঁচালী’ নামে।
ম্যাট গ্রোয়েনিং
কার্টুনিস্ট
আমি ‘পথের পাঁচালী’, ‘অপরাজিত’ এবং ‘অপুর সংসার’ এই তিন ছবির একজন বড় ভক্ত। আর এসব ছবির জন্য করা রবিশংকরের সংগীত অমূল্য।
মার্টিন স্করসেসি
পরিচালক
আমি ওই দৃশ্য কখনোই ভুলব না, গ্রামের ভেতর দিয়ে অপু এবং দুর্গা দৌড়ে যাচ্ছে এবং তাদের কিছু দূরেই হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন চলে যাচ্ছে। আমি যখন হাইস্কুলে পড়ি, তখন টিভিতে ইংরেজি ডাবিংয়ে ‘পথের পাঁচালী’ দেখতাম। টিভিতে বিজ্ঞাপনের ঝামেলা থাকলেও আমি পুরো ছবি না দেখে কখনো উঠিনি।
রিচার্ড অ্যাটেনবার্গ
পরিচালক
‘পথের পাঁচালী’ প্রথমবার দেখার পর আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। পুরো ট্রিলোজিই অসাধারণ।
অমিতাভ ঘোষ
লেখক
‘পথের পাঁচালী’ দেখে নিজের অনুভূতি জানিয়ে সত্যজিৎ রায়কে একটি চিঠি লিখেছিলেন অমিতাভ ঘোষ। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘গুণী মানুষদের সম্মান জানানোর জন্য জাপানিদের একটি রীতি রয়েছে। তারা গুণী মানুষটির বাড়ির সামনে গিয়ে একা নিশ্চুপভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। এবং যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের বাড়ির ভেতরে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ওভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে। আপনি (সত্যজিৎ রায়) পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তি যাকে আমি সেভাবে সম্মান জানাতে চাই।