শাহরুখকে দেখলেই মনে হয়—জীবন সুন্দর!
মুম্বাইয়ের কথা উঠলেই সবার আগে যেটি মাথায় আসে সেটি হলো—মান্নাত। যা বলিউড বাদশা খ্যাত শাহরুখ খানের বাসভবন। মুম্বাই শহরের বিখ্যাত ল্যান্ডমার্কও বলা চলে। প্রতিদিন হাজারও ভক্ত এসে হাজির হন মান্নাতের দুয়ারে। সকাল থেকে রাত—প্রতিটি মুহূর্তেই সমাগম থাকে মান্নাতের প্রাঙ্গণ।
বিশ্বকাপ কাভারের সুবাদে আসা হয়েছে মুম্বাইতে। এই শহরেই বাংলাদেশ তাদের পরবর্তী ম্যাচ খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। বলিউডের শহরে পা রেখে তাই মান্নাত দেখার সুযোগ হাতছাড়া করিনি।
রোববার সকালেই সুযোগ পেয়ে ছুটে যাই বান্দ্রাতে। ঘড়িতে সময় তখন সকাল ৯টা ছুঁইছুঁই। এত সকালে একজনের বাড়ির সামনে যাব ভাবতেই অদ্ভুত লাগছিল। তবে, আরব সাগর পাড়ের বাড়িটির সামনে যেতে কেটে গেল সব। কারণ, সকাল হলেও মান্নাতের সামনে মানুষের কমতি নেই।
গাড়ি থেকে নেমেই চোখে পড়ল ভক্তদের উপস্থিতি। কেউ মান্নাতের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। কেউ আবার ভিডিও করতে ব্যস্ত। কেউ কেউ আবার অপেক্ষা করেন দিনভর যদি একবার দেখা মেলে বলিউড বাদশার। তবে, আমাদের সেই অপেক্ষা নেই। আমরা যখন মান্নাতের সামনে দাঁড়িয়ে তখন দুবাইতে আছেন শাহরুখ। সেখানেই নিজের সিনেমার কাজে ব্যস্ত এই সুপার স্টার।
ফিরে আসি মান্নাত দেখার আলোচনায়। আরব সাগর পাড়ে ভিনটেজ ও সমসাময়িক ডিজাইনের মিশ্রণে গড়া এই বিলাসবহুল মান্নাত। ছয় তলা এই বাড়িটি সমুদ্রমুখী। বাড়ির সামনের দিকের প্রতিটি বারান্দা থেকেই উপভোগ করা যায় সমুদ্রের গর্জন।
আরেকটি আকর্ষণ বাড়ির নেমপ্লেট। মান্নাত লেখা যেই নেমপ্লেটির সাথে সবাই ফ্রেমেবন্দি হন সেটি বানানো হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টাকা খরচ করে। এতে জুড়ে দেওয়া হয়েছে হিরাও। তাই নেমপ্লেটটি আকর্ষণ করে ভ্রমণপিপাসুদের। নেমপ্লেটটির ডিজাইন শাহরুখের স্ত্রী গৌরি খান নিজেই করেছেন।
এই নেমপ্লেটটির সামনেই দেখলাম একে একে সবাই ফ্রেমে বন্দি হচ্ছেন। কেউ কেউ রিলস বানাচ্ছেন। এদের মাঝেই দেখা হয়ে গেল দুজন বাংলাদেশির সঙ্গে। যারা শুধু মাত্র এই বাড়িটির সামনে ছবি তুলতেই ছুটে এসেছেন মুম্বাইতে। প্রায় ২১৬৭ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে এসেও ক্লান্তিভরা চোখে আনন্দের ছাপ।
পেশায় নর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সায়মা আহমেদ নওমি। অনেকটা আবেগি হয়ে বলে উঠলেন, ‘বিশ্বাস করবেন করবেন কিনা জানি না শুধুমাত্র এই বাড়িটা দেখার জন্যই বাংলাদেশ থেকে এতদূর এসেছি। হয়ত শাহরুখ খানকে দেখার ভাগ্য হবে না তবুও তিনি যেখানে থাকেন, যেই রাস্তা দিয়ে হাঁটেন সেখানে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। শাহরুখ আমার অনুপ্রেরণার নাম। আমি যখন কাজের গতি পাই না, হতাশায় ভুগি তখন শাহরুখ খানকে দেখে অনুপ্রেরণা নেই। শাহরুখ খানকে ভাবলেই মনে হয় যে—লাইফ ইজ বিউটিফুল।’
শুধু তাই নয়, ওই বাঙালি মান্নাতের সামনে দাঁড়িয়ে শাহরুখ, শাহরুখ বলে ডাকছিলেন। ডাকার কারণ জানাতে চাইলে তার জবাব, ‘আমি জানি তিনি এখন নেই, কিংবা সাড়াও পাব না তার। তবুও শাহরুখ খানকে ডাকছি। এটা আসলে মনের শান্তি। শাহরুখের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তাকে ডাকা আসলেই মনের শান্তি।’
অল্প কিছু সময় মান্নাতের সামনে দাঁড়িয়ে সায়মার মতো আরও অনেক ভক্তের পাগলামি দেখা হলো। কাউকে সামলাতে আবার হিমশিম খাচ্ছিলেন মান্নাতের দারোয়ান। ভক্তদের প্রতিনিয়ত সামলানো সেই দারোয়ান নরেস বলেন,’এখানে এটা নিত্য দিনের সঙ্গী। শুরুর দিকে ভালো লাগলেও এখন বিরক্ত লাগে মাঝে মাঝে। তবুও ভক্তদের তো আর তো থামানো যাবে না।’
সত্যিই থামানো যাবে না! যারা শাহরুখকে ভালোবাসেন তারা মুম্বাই আসবেন আর মান্নাতের দুয়ারে আসবেন না তাই কি হয়! আরব সাগরের পাড়ে শুধু শাহরুখ-গৌরির স্বপ্নে নীড় নয়, এখানে রয়েছে ক্রিকেট মাঠের তারকাদেরও বসবাস। এই বান্দ্রাতেই থাকেন কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার, বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব, যুবরাজের মতো তারকারা। তাইতো এই শহরে ভক্তদের এত আনাগোনা!