ছুটির দিনে
গুরুদেবের পরশ পেতে

কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের বাংলাদেশে শিলাইদহ, শাহাজাদপুর ও কালিগ্রাম পরগনাসহ মোট তিনটি জমিদারি ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারির দায়িত্ব নিয়ে পতিসর আসেন ১৮৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে। পতিসরের রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি এবং আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বিল, নদী সারা বছর পর্যটকদের জন্য তাদের স্বীয় সৌন্দর্য বিলিয়ে দিলেও বর্ষাকালে পতিসর নবরূপে পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
বর্ষায় পতিসর ভ্রমণের মজাই আলাদা। এ সময় আপনি যে প্রান্ত দিয়েই পতিসরে যান না কেন প্রতি মুহূর্তে প্রকৃতির হাতছানি আপনাকে অনাবিল আনন্দে মাতিয়ে তুলবে। বর্ষায় নদী-বিল কাণায় কাণায় পূর্ণ থাকে, তখন নদী-বিলকে ঘিরে নানা রকম নৌকা, বিলকেন্দ্রিক মানুষের জীবনযাত্রা, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, পাখিদের কলকাকলি যেকোনো পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে তাতে সন্দেহ নেই। আর পতিসরের জল-কাদায় মিশে আছেন রবীন্দ্রনাথ।
বাতাসে কান পাতলেই ভেসে আসে রবীন্দ্র কণ্ঠস্বর।
যা দেখবেন
প্রবেশ পথে একজোড়া সিংহের মুর্তি আপনাদের স্বাগতম জানাবে। দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকেই মাঝের ফাঁকা জায়গায় দেখা পাবেন গুরুদেবের কংক্রিটের ভাস্কর্য। কিছুদূরে দরজার দুপাশে আছে মার্বেল পাথরে খোদিত পতিসরে সৃষ্ট রবীন্দ্র রচনার কিছু কথা । পাশেই পাবেন মিউজিয়ামের দেখা। রবীন্দ্রনাথের চেনা-অচেনা বিভিন্ন ছবি দিয়ে তিনটি ঘর সুন্দর করে সাজানো।
রবীন্দ্রনাথের অন্য দুটি কুটিবাড়ি শিলাইদহ ও শাহজাদপুরের থেকে এটি অনেক বেশি গোছানো। এখানে রবীন্দ্রনাথ ব্যবহৃত আরাম কেদারা, লোহার সিন্দুক, গ্লোব, বাথটাব, বিভিন্ন চিঠিপত্রের অনুলিপি, পদ্মাবোটের নোঙর, জানালার কাচ প্রভৃতি বিভিন্ন বস্তু পরম যত্নে সংরক্ষিত আছে। সামনে এসে দেখা মিলল রবীন্দ্রনাথ মাথা উঁচু করে যেন দাঁড়িয়ে আছেন এবং আমাদের অভয়বাণী দিচ্ছেন। কাছারিবাড়ির সামনে রয়েছে রবীন্দ্র সরোবর, ফাঁকা মাঠ এবং মাঠ সংলগ্ন নাগর নদী। কাছারিবাড়ির উত্তর দিকে খননকৃত বিরাট দীঘি, দক্ষিণ দিকে রয়েছে কবির হাতে গড়া স্কুল ‘কালিগ্রাম রবীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন’।
যেখানে রয়েছে মাটির দেয়ালে ও টালির ছাউনিতে তৈরি স্কুলের প্রথম ভবন।
যোগাযোগ :
নওগাঁর আত্রাইয়ের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে ট্রেন যোগাযোগ খুবই ভালো।তাই আত্রাইয়ে আসতে হলে ট্রেনে আসাই উত্তম। ঢাকা থেকে আন্তনগর ট্রেন নীলসাগর, এক্সপ্রেসে চড়ে প্রথমে আত্রাই আসতে পারেন। এ ছাড়াও নওগাঁ ও নাটোরের সঙ্গে আত্রাইয়ের যোগাযোগ ভালো। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস কিংবা ট্রেনে নওগাঁ/শান্তাহার বা নাটোর এসে পরে আত্রাই আসতে পারেন। নাটোর ও নওগাঁ থেকে বাস, ট্রেন ও নদীপথে নৌকায় আত্রাই আসা যায়। আত্রাই থেকে পতিসর কাছারিবাড়ি যেতে হবে নসিমনে চড়ে, যা পর্যটকদের ভ্রমণে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। ট্রেন স্টেশনের নিচেই রয়েছে নসিমন/ভটভটি স্টেশন। আত্রাই থেকে পতিসরের দূরুত্ব ১৪ কিলোমিটার। পতিসরে রাত্রিযাপনের জন্য কোনো হোটেল নেই, সরকারি একটি ডাকবাংলো আছে। পূর্ব অনুমতি থাকলে এখানে রাত্রীযাপন করা যায়। আর তা না হলে নওগাঁ শহরের যেকোনো আবাসিক হোটেলে থাকতে হবে।